চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম প্রকাশিত: ১০:৫৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৫, ২০২৩ অনলাইন ডেস্ক : তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসীর। টানা তিনদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও এই চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার বিকাল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এনিয়ে টানা ১৪ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলো। মৃদু, মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ শেষে এবার অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে এ জেলায়। তাপদহে আমের গুটি, ধানের শিষ ঝরে যাচ্ছে। সবজি খেতসহ সকল প্রকার চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা। হাসপাতালে শিশু রোগের সংখ্যা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জানান, আজ টানা ১৪ দিনের মতো এ জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আজ বিকাল ৩টায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সহজে দেখা মিলছেনা বৃষ্টির। এবারের গরমে ভিন্নমাত্রা রয়েছে। বাতাসের আদ্রতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। তাই তাপদাহের মধ্যে ঠোট শুকিয়ে ও ফেটে যাচ্ছে। বাতাসের জ্বলীয়বাস্প কম থাকায় মূলত এমন হচ্ছে। সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র রোদ তাপ ছড়াচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে। বিশেষ করে দুপুরের পর আগুনঝরা রোদে ঘরের বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। এদিকে, টানা তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড গরমের সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষেরা অস্বস্তিতে পড়েছেন। তবে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তীব্র রোদের কারণে দিনমজুর, রিকশাচালক, ঠেলা ও ভ্যানচালকরা কাজ করতে পারছেন না। ফলে ঈদ সামনেও অনেককে অলস সময় পার করতে দেখা গেছে। আবার অনেকেই জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচণ্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে কাজে বেরিয়েছেন। এছাড়া এই তাপপ্রবাহে রোজাদারদের কষ্টও বেড়েছে। রোজার মাস হওয়ায় একটু স্বস্তি পেতে ঠান্ডা শরবত, পানি ও আইসক্রিম খেয়ে তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টাও করতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। তিন-চার দিন তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জীব-বৈচিত্র্যের ওপর। তাপমাত্রা বাড়ায় শিশু ও বয়স্করা চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। একটু শীতলতার জন্য শিশু-কিশোর সবাই পুকুর-নদী-বিলে ছোটাছুটি করছে। অসহনীয় গরমে গ্রামাঞ্চল কিংবা শহরে শিশু, বয়স্কদের জ্বর-সর্দি- ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। তাপের কারণে নানা বয়সীদের দেখা দিয়েছে চর্মরোগও। একটানা তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় হিটস্ট্রোক, হৃদরোগ, ডায়রিয়া, শিশুদের নিউমোনিয়াসহ গরমজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রতিদিনই ৭০-৮০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এর মধ্যে ডায়রিয়া ও টাইফয়েড রোগীই বেশি। তীব্র তাপদাহে কয়েক দিন থেকে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট-বাজারে মানুষের সমাগম কিছুটা কমেছে। প্রচণ্ড গরমেই অনেকে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন। ভ্যানচালক বাবল মাসুম ও লিয়াকত জানান, গত এক সপ্তাহে প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে ঠিকমতো কাজে যেতে পারছি না। গরমে কাজ করতে না পেরে আয় কমে গেছে। আগে দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করা যেত। এখন প্রচণ্ড গরমের কারণে সারাদিনে ২০০ টাকা আয় করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার শান্তিপাড়ার রুমি খাতুন বলেন, প্রচণ্ড গরম পড়েছে। বাচ্চা নিয়ে খুবই সমস্যায় আছি। ঘরের মধ্যে গরমে থাকা যায় না। আমার তিন সন্তান গত কয়েক দিন থেকে জ্বর-সর্দি ও কাশিতে ভুগছে। ভ্যানচালক শুকুর ও জোনাব আলী বলেন, কয়েকদিন থেকে ধরে যে তাপ উঠছে ভ্যান নিয়ে পাকা রাস্তায় বের হওয়া যাচ্ছে না। চাকা পাংচার হয়ে যায় গরমে। এই গরমের মধ্যে ভাড়াও কমে গেছে। সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. ফাতেহ আকরাম জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বেশিরভাগই গরমজনিত রোগে আক্রান্ত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, তীব্র তাপদাহের কারণে বোরো ধান, আমের গুটি ঝরে শুকিয়ে যাচ্ছে। আমগাছে পানি স্প্রে এবং বোরো ধানসহ সব ধরনের সবজিখেতে প্রতিদিনই সেচ দিতে এবং সেচের পানি ধরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি কর্মকর্তারা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, প্রচণ্ড তাপদহের কারণে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক গরমে করণীয় বিষয়ে কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মাহবুবুর বলেন মিলন, ‘গরমে শিশুদের ডায়রিয়া, টাইফয়েড, শরীরে ঘাম বসে নিউমোনিয়া, ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি, জ্বর ও প্রসাবে সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। এসব রোগ নিয়েই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে তারা। আমরা শিশুকে ঘরের বাইরে বের হতে দেওয়া যাবে না। টাটকা খাবার খাওয়াতে হবে এবং ফ্যানের নিচে রাখতে হবে। এদিকে, দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় এই জেলাবাসীর ত্রাহি-ত্রাহি অবস্থা। অতিপ্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পরামর্শ। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও জেলা তথ্য অফিসের পক্ষ থেকে অতিপ্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সেইসঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পান করতে বলা হচ্ছে। লেবুর শরবত ও সেলাইন খাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার সব স্থানে মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক করা হচ্ছে। তারা যেন অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাহির না হয়। সন্ধার পর শরবত, পানি ও ফলমূল বেশি বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া স্ট্রোক, ডায়রিয়াসহ গরমজনিত রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা করার জন্য সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। Share this:FacebookX Related posts: চুয়াডাঙ্গায় বিজিবির অভিযানে ১০টি মহিষ, ৩টি গরু এবং১৫৩ ফেন্সিডিল উদ্বার চুয়াডাঙ্গায় করোনা উপসর্গ নিয়ে আরো একজনের মৃত্যু চুয়াডাঙ্গায় যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় নিহত ৬ হাসপাতালের তৈরীকৃত হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিনামূল্যে বিতরন চিতলমারীতে দুঃস্থদের মাঝে খাদ্য উপকরণ বিতরণ খুলনায় ডা. রাকিব খানঁ হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ গ্রেফতার-৫ নড়াইলে অবৈধ ইট ভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান কুষ্টিয়ায় সড়কে ঝড়ল শ্রমিকের প্রাণ বাগেরহাটে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল এখন করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল চিতলমারীতে ১৪৯ মন্ডপে চলছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ঝিনাইদহে সাপের কামড়ে শিক্ষকের মৃত্যু SHARES Matched Content খুলনা বিভাগ বিষয়: ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসচুয়াডাঙ্গায়তাপমাত্রা রেকর্ড