চিতলমারীতে আর্থিক সংকটে শাপলা বিক্রেতার দুই মেধাবী সন্তানের উচ্চ শিক্ষা বন্ধের উপক্রম

প্রকাশিত: ১১:৪২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২
বারেহাটের চিতলমারী উপজেলার রুইয়ারকুল গ্রামের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র সজীব মন্ডল বাবার সাথে বাজারে গিয়ে শাপলা বিক্রি করে।

বিভাষ দাস, চিতলমারী (বাগেরহাট) প্রতিনিধি: বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের রুইয়ারকুল গ্রামের শাপলা বিক্রেতা ভগীরথ মন্ডল ও সুচিত্রা মন্ডলের দুই সন্তান সজিব ও রতœা মন্ডলের লেখাপড়া আর্থিক সঙ্কটে বন্ধ হতে চলেছে।

বিল হতে শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে চলা এক অসহায় পরিবারের এই দুই ভাই-বোনের লেখাপড়া আর্থিক সংকটে স্থবির হয়ে আছে। এইচএসসিতে ভাই বিজ্ঞান বিভাগে এবং বোন বানিজ্য বিভাগে উভয়ে ৪.৯২ পয়েন্ট পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু এরপর উচ্চ শিক্ষার (সম্মান শ্রেণি) জন্য কোথাও ভর্তি হতে পারেনি।

বাবার সাথে কখনো বাজারে শাপলা বিক্রি করে, কখনো প্রাইভেট পড়িয়েও নিজের এবং বড় বোনের লেখাপড়ার খরজের অর্থ সংস্থানের চেষ্টা করছে সজীব মন্ডল। সজীবের দিদি রতœা মন্ডলও গ্রামে প্রাইভেট পড়ায়। কিন্তু বর্তমান বাজারদরের সাথে প্রয়োজনীয় চাহিদার অর্থ যোগাড় করতে হিমশিম খায়।

এ ব্যাপারে শাপলা বিক্রেতা ভগীরথ মন্ডল ও সুচিত্রা মন্ডলের ছেলে সজীব মন্ডল বলেন, ‘মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে চাই। সে জন্য সৎ পথে চেষ্টা করছি। লোকলজ্জ্বা ভুলে বাবার সাথে শ্রীরামপুর, বারাশিয়া বিলে শাপলা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করি। লেখাপড়ার ফাকে প্রাইভেট পড়াই। কিন্তু বর্তমান বাজারে লেখাপড়ার জন্য যে পরিমাণ টাকা দরকার- তা আমাদের নেই। শেষ পর্যন্ত উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছে পূরণ হবে কি-না জানিনা। আমার দিদি রতœা মন্ডল ২০২১ সালে চিতলমারী শেরে বাংলা ডিগ্রী কলেজ হতে বানিজ্য বিভাগে এইচএসসিতে ৪.৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। আমি চিতলমারীর খাসেরহাটের কালিদাস বড়াল স্মৃতি (ডিগ্রি) মহাবিদ্যালয় হতে বিজ্ঞান বিভাগে ২০২১ সালে এইচএসসিতে ৪.৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় (২২টি প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের সমন্বিত পরীক্ষা) সম্প্রতি পাশ করেছি। কিন্তু এখনো ভর্তি হতে পারেনি। মূল কারণ আর্থিক সংকট। ভর্তি হতে না পরলে দিদিকে হয়তো বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু সে বিয়ে করতে এখনো রাজী নয়। আমি কী করবো জানিনা! উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন- হয়তো স্বপ্নই থেকে যাবে! ’

দৈনিক সময় সংবাদ

বারেহাটের চিতলমারী উপজেলার রুইয়ারকুল গ্রামের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র সজীব মন্ডল বাবার সাথে বাজারে গিয়ে শাপলা বিক্রি করে।


সজীব ও রতœা মন্ডলের মা সুচিত্রা মন্ডল বলেন, ‘ছোটবেলা আমার মা মরে গেছেন। এরপর আমাকে বিয়ে দেয়। নিজে লেখাপড়া শিখতে পারিনি। তাই ছেলে ও মেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে চাই। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে ওরা দুই ভাই-বোন চেষ্টা করছে। ’ তিনি আরো জানান, দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের মধ্যে ওরা দুইজন ছোট। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।

সপ্তাহে তিন দিন ভোর রাত হতে ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে বিল হতে শাপলা সংগ্রহ করেন স্বামী ভগীরথ মন্ডল (৫৫)। এরপর সেগুলো বাজারে বিক্রি করেন। অতি সাধারণভাবে তাদের সংসার চলে। তারা ওই দুই জনের লেখাপড়ার জন্য সমাজের বিত্তবানসহ সকলের কাছে আর্থিক সহযোগিতা প্রার্থনা করেছেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গৌতম বিশ^াস জানান, শাপলা বিক্রেতা ভগীরথের ছেলে মেয়ে দুই জন মেধাবী। তাদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য সকলের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।

চিতলমারী কালিদাস বড়াল স্মৃতি (ডিগ্রি) মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার রায় বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র সজীব মন্ডল অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ভদ্র, বিনয়ী, অধ্যবসায়ী এবং স্কাউটিংয়ে পরিশ্রমী। শুধু আর্থিক সহায়তা পেলে সে উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে দেশের কল্যাণে কাজে আসবে। #
ছবি ক্যাপশান : বারেহাটের চিতলমারী উপজেলার রুইয়ারকুল গ্রামের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র সজীব মন্ডল বাবার সাথে বাজারে গিয়ে শাপলা বিক্রি করে।##