মেহেরপুরে পর্যাপ্ত গরু-ছাগল থাকলেও নেই ক্রেতা

প্রকাশিত: ৯:৪২ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক : মেহেরপুরের গাংনীর গ্রামাঞ্চলের পশু পালনকারীরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেনা । ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া । ক্রেতারা বলছেন বাজারে চড়া দাম আর বিক্রেতারা বলছেন পানির দামে গরু বিক্রি করছি।
ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে মত বিরোধ থাকলেও একটি জায়গাতে তারা একই মত পোষণ করেছেন। সেটি হচ্ছে মাংস ক্রয়ের ক্ষেত্রে। গরুর দাম হ্রাস বৃদ্ধি থাকলেও মাংসের বাজার সেই আগের মতই। মেহেরপুরের বিভিন্ন পশুহাট ঘুরে রিপোর্ট করেছেন আমাদের মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি আকতারুজ্জামান।

কড়া নাড়ছে ঈদ। পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা পালন করা হবে। খামারী ছাড়াও অনেকেই নিজ বাড়িতে পালন করেছেন গরু,ছাগল,মহিষ ও ভেড়া। খামারী ও পশু পালনকারীদের আশা,ন্যয্য মুল্যে তারা পালিত পশুটি বিক্রয় করে আবারো বাছুর কিনে পালবেন। শোধ করবেন ব্যা্কং ঋণ কিংবা মহাজনের পাওনা। তবে নিরাশ হচ্ছেন তারা। মহামারী করোনা ও দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে অনেকেই কোরবানী করতে পারবেননা। এতে করে পর্যাপ্ত পরিমানে গরু থাকলেও ক্রেতার অভাবে পালিত পশুর মুল্যে ভাটা পড়েছে।

এ উপজেলার বাওট গ্রামের খামারী এনামুল মেম্বার জানান, ব্যপারী ও পশু পালনকারীরা কোরবাানীর ঈদকে টার্গেট করে পশু পালন করেছেন। প্রতি ঈদেই রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রির জন্য পশু নিয়ে যান। এবার করোনার কারনে সিংহ ভাগ ব্যাপারী ও পশু পালনকারী ঢাকায় পশু নেবেননা বলে স্থানীয় হাটে তুলেছেন। গরুর পরিমান বেশি হওয়ায় স্থানীয় ভাবে চাহিদা কমেগেছে। ফলে দামও হ্রাস পেয়েছে।

গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসেব মতে, এ উপজেলার ৪৩ টি বাণিজ্যিক খামারসহ পারিবারিকভাবে পালন করা ৪১ হাজার গরু কোরবানীর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিভিন্ন জাতের গরু পালন করছেন খামারীরা। খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় পশু পালনে বেশ খরচ হচ্ছে খামারীদের। যে পরিমান গরু রয়েছে তাতে স্থানীয় চাহিদা পুরুণ করেও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হবে। তবে কাঙ্খিত মুল্য না পেলে খামারীরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যারা স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে দুয়েকটি গরু পালন করছেন তারাও পুঁজি হারাতে পারে।

গাংনীর চাঁদপুরের মহিবুল জানান, তার খামারে দেশী জাতের ২৫ টি গরু কোরবানীর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বেশ কয়েকটি পশুহাট বন্ধ হয়ে গেছে তাই গরু বিক্রি করতে পারেন নি। আবার ঢাকাতে পশু হাট বসা নিয়েও বেশ শঙ্কায় রয়েছেন। গরু ন্যায্য মুল্যে বিক্রি করতে না পারলে লোকসান গুনতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। শুধু খামারী নয়, ব্যবসায়িদেরও চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।

বালিয়াঘাটের মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, গেল বছর কোরবানীর সময় ঢাকার কমলাপুরে ১০ ট্রাক গরু নিয়ে গিয়েছিলেন। কোরবানীর মাস দেড়েক আগেই গ্রামে গ্রামে গিয়ে গেরস্তদের বাড়ি থেকে গরু বায়না করে আসতেন তিনি। এবার ঢাকাতে গরু নিয়ে যাওয়া যাবে কিনা তার নিশ্চয়তা না থাকায় গরু কেনেন নি।

ঢাকার কয়েকজন ব্যবসায়ি জানান, প্রতিবছর কোরবানীর ঈদে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া থেকে কয়েক হাজার গরু কেনেন। এবার বেচা কেনায় কোন ভরসা না থাকায় গরু কিনছেন না। আরো কিছুদিন অপেক্ষা করবেন।

অন্যদিকে এলকায় প্রতিনিয়ত মাংসের জন্য জবাই করা হচ্ছে ছাগল,গরু ও মহিষ। এখনও বাজারে ছাগলের মাংনের দাম ৭০০ টাকা। গরুরর মাংস ৫০০ টাকা এবং মহিষের মাংস ৫শ” থকে সাড়ে ৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মাংস ক্রেতারা বলছেন, আগের দামই বলবত রয়েছে। শোনা যাচ্ছে বাজারে গরু,ছাগলেম দাম কম,কিন্তু মাংসের দাম আগের মতই।

নওপাড়া গ্রামের মাংস বিক্রেতা বরকত জানান, মাংস আগের দামে বিক্রি করা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু ক্রেতা কম। অনেক সময় বিক্রির স্বার্থে অনেক পন্থা অবলম্বন করা লাগছে। মাংস ব্যাবসায়ী আফেজ বলেন, আমরা প্রতিদিনই একটি করে গরু,বা মহিষণ জবাই করি। আগের দামেই মাংস বিক্রি করতে হচ্ছে কারন আগের দামেই পশু কিনতে হচ্ছে।

এব্যপারে গাংনী উপজেলা আইন শৃংখলা সমন্বয় সভায় মাংসের মুল্য ও বাজার নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আলোচানায় মাংসের বাজার নিয়ে কথা হলে সরকারি নির্ধারিত মুল্যেই মাংস ব্যাবসায়ীদের মাংস বিক্রি করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ।