বন্ধ শহর রক্ষা বাঁধের সংস্কার কাজ, দুশ্চিন্তায় ৭০০ পরিবার

প্রকাশিত: ১২:২০ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১১, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক ; শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌর শহরের উত্তর গড়কান্দা মহল্লায় ভোগাই নদীতে শহর রক্ষা বাঁধের ১১০ মিটারজুড়ে ভাঙনের সংস্কারের কাজ বন্ধ থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। ১০ মাস আগে ভাঙন সংষ্কারে পাইলিং করতে বল্লি পোঁতাসহ ৪ হাজার ৩৫০টি জিও ব্যাগ প্রস্তুত করে এর ৭০ শতাংশ কাজ শেষ করার পর থেকেই ঠিকাদার লাপাত্তায় রয়েছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাড়া না দেওয়ায় সময় পেরিয়ে গেলেও ভাঙন অংশ সংস্কার করা হচ্ছে না।

তাই আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে অকাল বন্যার আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ওই এলাকার প্রায় ৭০০ পরিবার। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ ফেলে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী। তাঁরা দ্রæত সময়ের মধ্যে ওই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে ভোগাই নদীতে ঢল নামে। এতে পানির ¯্রােতে শহরের উত্তর গড়কান্দা এলাকায় নদীর ১০০ মিটার বাঁধ ভেঙে যায়। এই ভাঙন অংশ দিয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করে চারটি মহল্লার প্রায় ৭০০ পরিবারের বাড়িঘরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ সময় বাঁধের সামনে বাগানবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে ভুক্তভোগী অনেক পরিবার স্কুলের বারান্দায় এবং নিজ বাড়ি ছেড়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে ২০২২ সালে বাঁধটি সংস্কারে পাউবোর পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১১০ মিটার বাঁধ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৩৮ লাখ টাকা। এ কাজের দায়িত্ব পায় রিফাত এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাঁধ সংস্কারে গত বছর ৪ মে কাজ শুরু করার কথা ছিল। সময় মত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু না করায় গত বছর ১৭ জুন ফের পাহাড়ি ঢলে এই ভাঙন অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে।

এতে উত্তর গড়কান্দা, গড়কান্দা, গুনাপাড়া ও শিমুলতলা মহল্লায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এসময় উত্তর গড়কান্দা এলাকায় ৫০০ মিটার সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় পথচারীরা র্দূভোগে পড়ে। ৭০০ পরিবারের বাড়িঘরে এবং থাকার ঘরে হাঁটুসমান পানি থাকায় পরিবারের লোকজন দুর্ভোগে পড়েন। নদীতে পানি কমে যাওয়ায় এক দিন পর বাড়িঘর থেকে ঢলের পানি নেমে যায়। বাঁধটি সংস্কার না হওয়ায় ফের পাহাড়ি ঢলে অকাল বন্যার আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েন এলাকাবাসী। পরে গত বছর ২৩ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নদীতে পাইলিং করতে বল্লি (গাছের গুঁড়ি) পোঁতা হয়। এছাড়া ৪ হাজার ৩৫০টি জিও ব্যাগে বালু ভরে প্রস্তুত করা হয়। এ দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না পাওয়ায় বাঁধে জিও ব্যাগ ফেলার কাজে বিলম্ব হয়। গত বছর জুন ও জুলাই মাসে বাঁধ সংস্কারের ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করা হয়। এরপর থেকে সংস্কার কাজ ফেলে রেখে ঠিকাদার লাপাত্তা হয়ে যান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁধের ভাঙন অংশে নদীতে ১৬০টি গাছের গুঁড়ি পুঁতে পাইলিং করা হয়েছে। ৪ হাজার ৩৫০টি জিও ব্যাগ ফেলার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ১০ মাস ধরে বাঁধের ভাঙণ অংশে জিও ব্যাগ ফেলে রাখায় ব্যাগ গুলো বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদীতে পাইলিং করেছেন এবং জিও ব্যাগ প্রস্তুত করেছেন। এর পর থেকে ঠিকাদার আর কোন খোঁজ খবর নেই। বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।

ভাঙন কবলিত গড়কান্দা এলাকার ফজল হক, মনোয়ারা বেগম, মজিদা বেগম, সখিনা বেগম ও গৃহিনী রমিজা বেগম বলেন, একটা বছর ধইরা এই কাম বন্ধ কইরা ফালাইয়া থুইছে। অহন মেঘ বৃষ্টির সময় যে কোন মুর্হুতে গাঙ্গ (নদী) ঢল আইয়া পড়বো। তহন বাড়ি ঘরও পানি উঠবো। আমগরের হিবার কষ্টের মধ্যে পড়ুন লাগবো।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিফাত এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে বাঁধ সংস্কারের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ করা হয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে জিও ব্যাগে ভরা বালুর মূল্য নিয়ে কিছুটা ঝামেলা হয়েছে। এই কারণে কাজটি শেষ করতে বিলম্ব হয়েছে। আশা করছি সামনের সপ্তাহে বাকি কাজ শুরু করা হবে।

পৌরসভার মেয়র আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন, দ্রæত বাঁধটি সংস্কারের জন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। সামনে বর্ষা বৃষ্টির সময়। তাই দ্রæত কাজ শেষ করা না হলে ওই এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বেন। বাঁধটি দ্রæত সংস্কার করা প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে শেরপুর পাউবোর উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, গত বছর জুন মাসে বাঁধ সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে কাজটি আটকে রয়েছে। গত ছয় মাসে ঠিকাদারকে ৭/৮টি চিঠি দেওয়া হয়েছে। কাজ বাতিল করা, জরিমানা করা ও লাইন্সেস কালো তালিকায় চিহিৃত করে এই প্রতিষ্ঠানকে শেষ চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবুও তার কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।