সাতক্ষীরার হাসপাতালে এক ঘণ্টায় সাতজনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ৫:৫০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা ডেডিকেটেড সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাত্র এক ঘণ্টায় সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। স্বজনদের দাবি অক্সিজেন সংকট। কর্তৃপক্ষ বলছে অক্সিজেন নিয়ে কোন সমস্যা নেই।

হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেনে সাময়িক সময় বিপর্যয়ের কারণে তাৎক্ষণিক ৭ রোগীসহ পর্যয়ক্রমে গত ২৪ ঘন্টায় ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ৮টার মধ্যে এই ৭ জনের মৃত্যুর অভিযোগ নিহত স্বজনদের। এ সময় মেডিকেলে দায়িত্বরত কোন কর্মকর্তাকে সরাসরি ও সেলফোনে পাওয়া যায়নি।

এদিকে রাতেই সিভিল সার্জন অক্সিজেন সংকট এড়িয়ে করোনার নিয়মিত মৃত্যু দাবি করে বলেন বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে। আর মেডিকেলের তত্ত্বধায়ক ডা. কুদরত ই খোদা সকালে ৪ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করে ৩ সদস্যের কমিটি করে আগামী ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানান। তবে রাতেই দ্রুত সময়ের মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক হয় বলে জানা গেছে।

বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে মৃত্যুবরণকারীরা হলেন- আইসিইউ ইউনিটের করোনা পজিটিভ রোগী কালিগঞ্জের ভাড়াশিমলা এলাকার আকরাম হোসেন খান (৬৩), সিসিইউ ইউনিটে মারা যায় শহরের ইটাগাছা এলাকার মফিজুল ইসলামের স্ত্রী খাইরুন্নেছা (৪০), শহরের কুকরালী এলাকার মনিরুজ্জামানের স্ত্রী করোনা আক্রান্ত নাজমা খাতুন, শ্যামনগরের সোনাখালি এলাকার কাশেম গাজীর ছেলে আশরাফ হোসেন, সাধারণ ওয়ার্ডে সন্ধ্যা ৭টার পর মারা যায় শ্রীউলা ইউনিয়নের বকচর গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম পারভেজ (৫৪), দেবহাটার জগন্নাথপুর এলাকার সৈয়দ আলি পাড়ের ছেলে শফিউল আলম তুহিন, আশাশুনির নৈকাটি এলাকর বেনু গাজির ছেলে আব্দুল হামিদ (৭৫)।

বুধবার রাত ৮টায় সরেজমিনে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের ৪র্থ তলায় আইসিইউ ইউনিট ও সিসিইউনিটের সামনে দেখা যায়, স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে সেখানকার বাতাস। আইসিইউ ওয়ার্ডের সামনে রোগীর স্বজনদের হুড়োহুড়ি এবং কান্নার রোল পড়ে।

আইসিইউ ইউনিটের সামনে তাজ মুহাম্মদ খান কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বাবা করোনা পজিটিভ ছিলেন। গত ৪৫ দিন ধরে ভর্তি ছিলেন। শ্বাস কষ্ট ছিল তার। গত কয়েকদিন ধরে এই হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজিনের সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেদিকে নজর দেয়নি। সে কারণে আজ এতগুলো রোগী মারা গেল। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে আমার বাবাকে হারালাম।

তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে অক্সিজেন নেই। রাত ৮টা অক্সিজেন আসছে। এই সময়ে এই রোগীগুলো কিভাবে বাঁচবে।

তিনি আরও বলেন, বাবা যখন মারা গেছে। তখন ফোন দিয়ে আমাদের ডাকছে। আগে থেকে আমাদের জানানো হলে বাবার সাথে শেষ দেখা করতে পারতাম। এখানকার চিকিৎসকরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না বলেও অভিযোগ করেন। আমার বাবাকে হারিয়েছি। ভবিষ্যতে এভাবে যেন আর কেউ তার বাবাকে না হারায় সেজন্য তিনি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

অন্য রোগীর স্বজন ফিরোজ হোসেন বলেন, আমার মেয়ে করোনা আক্রান্ত আইসিউতে ভর্তি। অক্সিজেন ফুরিয়ে গেছে শুনে হতবাক হয়েছি। আইসিইউ রোগীদের কয়েক সেকেন্ড অক্সিজেন না থাকলে তাদের অবস্থা ক্রিটিক্যাল হতে পারে।

শ্রীউলা ইউনিয়নের বকচর গ্রামের আসাদুল্লাহ বলেন, আমার বড় ভাই রবিউল ইসলাম পারভেজকে ভর্তি করেছিলাম। আক্সিজেন সংকটের কারণে সাড়ে ৭টার দিকে আমার ভাই মারা যায়। এখানে ভালো চিকিৎসা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তপেক্ষ কামনা করেন তিনি।

কলারোয়া উপজেলার বীরমুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও রোগীর স্বজন গোলাম মোস্তাফা বলেন, আমার স্ত্রী সিসিইউ ওয়ার্ডে ভর্তি। সিসিইউ ওয়ার্ডে অক্সিজেন বিপর্যয়ের কারণে ২ জন মারা গেছে আমার সামনে। আমার স্ত্রীকে আল্লাহ বাঁচিয়েছে বলে বেঁচে আছে। কেন এই বিপর্যয়? তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা. মানস কুমার মন্ডল বলেন, বিকেল থেকে হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমের প্রেসার কমে যায়। সকালে এই বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। যশোর থেকে অক্সিজেন নিয়ে আসা হয়েছে। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরপরই হাসপাতালেন সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম স্বাভাবিক হয়েছে।

এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খোদাকে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সকালে তিনি ৪জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, কেন অক্সিজেনের প্রেসার কমে গেল তা ক্ষতিয়ে দেখতে ডা. আরিফ আহমেদকে প্রধান করে গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত টিমকে আগামী ৩দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

জেলা করোনা প্রতিরোধ কিমিটির সম্পাদক ও সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ হুসাইন শাফায়ত বলেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের সংকট দেখা দেওয়ার কথা ছিল না। সেন্ট্রাল অক্সিজেন ছাড়াও ৭০টির অধিক সিলিন্ডার আছে। তবে করোনায় ৪ জন মারা গেছে। এখানে কর্তৃপক্ষের কোন গাফিলতি ছিলো কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।