খুলনায় যত্রতত্র পার্কিংয়ে দুর্ভোগ : বেহাল কেডিএ’র সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল

প্রকাশিত: ১২:২০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০

আতিয়ার রহমান,খুলনা : বেহাল খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল, সংস্কারের উদ্যোগ নেই কেডিএ’র – খুলনায় বাস মালিক, শ্রমিক ও চালকদের দুর্ভোগের অপর নাম সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনাল খুলনা। টার্মিনালের ভেতরে বাস রাখার জায়গাগুলো ডোবা নালায় পরিণত হয়েছে। জায়গামত গাড়ি পার্কিং করতে পারেন না চালকরা। ফলে নগরীর যত্রতত্র পার্কিং করতে হচ্ছে তাদের। ভবনগুলো হয়েছে পড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ।মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলছেন, তদারকির দায়িত্বে থাকা খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রুপ নিয়েছে।

বাস টার্মিনাল যায়যায়দিনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, খুলনা থেকে বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতকারী বাস মিনিবাস পার্ক করা হয় সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে টার্মিনালটি এখন দুর্ভোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। টার্মিনালের মূল চত্ত্বরটিতে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। একটু বৃষ্টিতেই জমে হাঁটু পানি। কখনও কখনও বাস আটকে গেলে তা তুলতে প্রয়োজন হয় ক্রেনের। এছাড়াও বাস টার্মিনালের প্রধান দুটি ভবন ভগ্নদশা। একটি ভবন একেবারেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব কারণে বাস চালকরা টার্মিনালে পার্ক না করে প্রধান সড়কের পাশে রাখছেন। এতে দুর্ভোগে পড়ছে সাধারণ মানুষ।

পুকুর বা জলাশয় নয়, খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালের দৃশ্য– এইচ ডি হেলাল ।খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ‘কেডিএ বর্তমানে ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। আমি ১৩ বছর ধরে এই সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছি। এই সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ বার কেডিএকে লিখিতভাবে জানিয়েছি টার্মিনালটি সংষ্কারের জন্য। তারা সে দাবি কখনই কানে তোলেনি। বাস চালক, শ্রমিক ও মালিকরা কেডিএর নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে।’ তিনি বলেন, টার্মিনালের মূল অংশে বাস রাখার কোন উপায় নেই। বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির সময়ে তা ডোবায় পরিণত হয়। কিছু জায়গায় কেডিএ ইটের সোলিং দিয়ে উঁচু করেছে সেখানে ১০/১২টি গাড়ি রাখা যায়। বাকি জায়গা ব্যবহার অনুপযোগী।’ টার্মিনালের পাশে বাইপাস সড়কের ভগ্নদশা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সড়কটির সংরক্ষনের দায়িত্ব কেডিএ’র। এ সড়কটি বর্তমানে ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে বাস চলাচলেও অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে উভয় সংকটে পড়েছে বাস সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।খুলনা আন্ত: জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল গফফার বিশ্বাস বলেন, ‘খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এখন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। সেবার মনোভাব কমিয়ে তারা অর্থ আয়ের দিকে নজর দিচ্ছে। বাস টার্মিনালের দিকে নজর দিলে সেটি বোঝা যায়। টার্মিনালের দক্ষিণ পাশের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। উত্তর পাশের ভবনটি জরাজীর্ণ। দোকানগুলোর সামনে কোন রাস্তা নেই। সাধারণ মানুষ চলাচল করতে পারে না। অথচ প্রতিমাসেই তারা অর্থ পাচ্ছে’। তিনি বলেন, ‘এ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় হাজার খানেক গাড়ি বের হয়। গাড়ি প্রতি ৩০-৫০ টাকা দিতে হয় কেডিএ কে। কিন্তু সে হিসেবে সেবার মান একেবারেই নেই। আমরা একাধিকবার কেডিএ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। তারা শুধু আশ্বাস দেয়’।

কলেজ বাসে কর্মরত মোঃ নাসিম খান জানান, এ টার্মিনালের মধ্যে গর্ত আর গর্ত। মাঝে মাঝে আমাদের বাস সারতে এখানে আসতে হয়। কিন্তু আসলেই ভোগান্তি। টার্মিনাল ঠেলে লেদেও সামনে যেতেই গলদঘর্ম হতে হয়।খুলনা-কয়রা রুটের বাস চালক মোঃ ওমর আলী জানান, টার্মিনালে কোন মতে বাস ঢোকাতে পারলেও বের হতে আরও কষ্ট। অনেক চালক তাই বাধ্য হয়ে রাস্তর ওপরেই গাড়ি রাখছে। করার কিছুই নেই।সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল।

কেডিএ সূত্র জানিয়েছে, ১৯৮২-৮৩ সালে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর সোনাডাঙ্গায় আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। প্রকল্পটি নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৮৫ সালে। পরবর্তীতে ১৯৯৬-৯৭ সালে আরও ১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে টার্মিনালটি মৌলিক সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়। প্রকল্পের মধ্যে থাকে টার্মিনাল ভবন, টিকিট কাউন্টার, রেস্ট হাউজ, ড্রেন, ক্যান্টিন, যন্ত্রপাতি বিক্রয় স্থান নির্মাণ ও গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা। তবে সময়ের পরিক্রমায় এসব অবকাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে। অনুপাতিরহারে গাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে। তবে সে অনুযায়ী সুযোগ সুবিধা বাড়েনি।তবে এ বিষয়ে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে চাননি খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আব্দুল মুকিম সরকার। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি এখন কথা বলেত চাইনা’বিয়টি খতিয়ে দেখব।