কেশবপুরের কৃষক-কৃষাণীদের নতুন স্বপ্ন

প্রকাশিত: ৩:০৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : যশোরের কেশবপুরে হরিহর নদের বুকে ছিল সবুজ কচুরিপানায় ভরা। দু’বার বন্যার পর হরিহর নদ পারের উপজেলার মধ্যকুল গ্রামের রাজবংশী পাড়ার বসতভিটা ছাড়া জমি নেই এমন মানুষ হয়ে উঠেছিল দিশেহারা।

ঠিক তখনি রাজবংশী পাড়ার কৃষক-কৃষাণীরা ভাসমান বেডে সবজি ও মশলা আবাদ করে ঘুরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। যোগাযোগ করেন উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। পরামর্শ নিয়েই হরিহর নদের সবুজ কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে তার উপর বিভিন্ন ধরনের বিষমুক্ত সবজি ও মসলা আবাদ শুরু করেন। আবাদকৃত সবজি ও মসলা চাষ করে তারা এখন স্বাবলম্বী হতে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।

সরেজমিনে উপজেলার মধ্যকুল গ্রামের রাজবংশী পাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে চলা হরিহর নদ পারে গিয়ে দেখা যায়, নদে তেমন নাব্যতা না থাকায় সবুজ কচুরিপানায় পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। নদের মধ্যকুল অংশের কচুরিপানাকে কাজে লাগিয়ে রাজবংশী পাড়া জেলে সম্প্রদায়ের বসতভিটা ছাড়া জমি নেই এমন অনেক কৃষক-কৃষাণীরা তৈরি করেছেন ভাসমান বেড। সেখানে পৃথক আবাদ করা রাজবংশী পাড়ার হাজারি লাল বিশ্বাসের ছেলে নীল রতন বিশ্বাসের লাউ গাছের বানে ঝুলছে অসংখ্য লাউ। পাশের ভাসমান বেডে কংকন সরকারের মেয়ে পূর্ণিমা বিশ্বাস লতিরাজ কচু আবাদ করেছেন। পঞ্চানন সরকারের ছেলে রূপ কুমার সরকার আবাদ করেছেন লাল শাক, গিমা কলমি, পুই শাক ও ডাটা শাক। এখানে অনেক গুলো ভাসমান বেডেও করা হয়েছে মসলা চাষ। যোগেশ্বর বিশ্বাসের ছেলে আদদাসী বিশ্বাস চাষ করেছেন পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ ও সরিষা। এ ভাসমান বেডে সরিষার ফলনও হয়েছে বেশ। নীল রতন বিশ্বাসের ছেলে প্রকাশ বিশ্বাস, সুভাষ সরকারের ছেলে গোবিন্দ সরকারসহ আরও অনেকেরই ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা আবাদ করতে দেখা গেছে।

এ সময় ভাসমান বেডে আবাদ করা জেলে সম্প্রদায়ের কৃষক নীল রতন বিশ্বাসের সাথে কথা হলে তিনি জানায়, হরিহর নদে কচুরিপানা পরিপূর্ণ থাকায় মাছ শিকার করতে ব্যর্থ হয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ভাসমান বেডের উপর মাচা (বান) করে লাউ চাষ করেন। কচুরিপানা পঁচে সার হওয়ার কারণে বিষমুক্ত ব্যাপক লাউ ধরেছে এবং এখন পর্যন্ত ১৭৫টি লাউ বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি।

ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম বলেন, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে বন্যার পর এ এলাকার অনেকেই অসহায় এবং অভাবগ্রস্থ হয়ে পড়েন। এছাড়া রাজবংশী পাড়ার জেলেরা নদে কচুরিপানা থাকায় মাছ শিকার করতে না পারায় বিপাকে পড়ে যান। পরে কৃষি অফিসের মাধ্যমে এ এলাকার অনেকেরই ভাসমান বেডে সবজি ও মশলা চাষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে আবাদ করে এখন তারা পূর্বের থেকে ভালো আছেন।

মধ্যকুল ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনাথ বন্ধু দাস জানান, রাজবংশী পাড়ার ২০ থেকে ২৫ জন কৃষক-কৃষাণীকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কৃষকরা হরিহর নদের কচুরিপানা প্রথমে স্তুপ করে রাখেন। শেওলা পঁচে ধাপ তৈরি হলে তার ওপর দেওয়া হয় ভার্মি কম্পোস্ট। এরপর সবজি ও মশলার বীজ বপণ করা হয়। এখানে প্রতিজন কৃষক ৩/৪টি বেড তৈরি করে তার উপর আবাদ করেছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার মহাদেব চন্দ্র সানা, কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আলা, উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অফিসার মনির হোসেন ও ইমরান বিন ইসলাম, ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম ও রেহেনা ফিরোজসহ উপজেলা কৃষি অফিসের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ হরিহর নদ পারের ভাসমান বেড পরিদর্শন করে এখানে আবাদকৃত সবজি ও মসলার ফলন দেখে কৃষকদের ভ‚য়সী প্রশংসা করেন।

পরিদর্শনকালে উপজেলা কৃষি অফিসার মহাদেব চন্দ্র সানা বলেন, সবজি ও মশলা আবাদের লক্ষে উপজেলা কৃষি বিভাগ ‘ভাসমান বেডে সবজি ও মশলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। এ লক্ষে মধ্যকুল রাজবংশী পাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে চলা হরিহর নদের কচুরিপানাকে কাজে লাগিয়ে বসতভিটা ছাড়া জমি নেই এমন কৃষক-কৃষাণীদের মাধ্যমে ভাসমান বেডে সবজি ও মশলার আবাদ করানো হয়েছে। এখানে আবাদকৃত বিষমুক্ত সবজি ও মশলায় তারা নিজেদের সংসারের চাহিদা মিটিয়ে সেগুলো বিক্রি করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন।