ফেনীতে যুবকদের স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক নির্মাণ

প্রকাশিত: ৭:৫১ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : এক কিলোমিটার সরু কাঁচা রাস্তা, বিভিন্ন স্থান ভাঙাচোরা, কোথাও ভেঙ্গে গিয়ে ধানের জমিতে মিশেছে। বৃষ্টি হলেই ভাঙা অংশ কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায়। ফলে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েন এক গ্রামের দুই সহস্রাধিক মানুষ।
বেশি সমস্যা হয় মুমূর্ষু রোগী, কোমলমতি শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ নারী-পুরুষদের। দুর্ভোগপীড়িত গ্রামবাসী দীর্ঘ ৬০/৭০ বছর যাবৎ জনপ্রতিনিধিসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থায় ধর্না দিয়েছেন বার বার। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি।

তাই নিজেদের এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এলেন কয়েকজন যুবক। তারা পরামর্শ করলেন গ্রামের অন্যান্য শিক্ষার্থী তরুণ ও যুবকদের সঙ্গে। এতে সবাই সাড়া দিল। সিদ্ধান্ত হল স্বেচ্ছাশ্রমে তারা সড়কটি সংস্কারে নেমে পড়বেন। তাদের সঙ্গে অংশ নিলেন গ্রামের চাকরিজীবী, সবজি
ব্যবসায়ী, রিকশাচালক, সিএনজি অটোচালক, খেটে খাওয়া দিনমুজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের অজপাড়া ছোট ধলিয়া গ্রামে স্বেচ্ছাশ্রমে এই রাস্তাটি নির্মিত হচ্ছে। ফেনী জেলা সদর থেকে শর্শদি, পাঁছগাছিয়া, রাজাপুর ইউনিয়ন হয়ে দাগনভূঁঞা উপজেলার সঙ্গে গ্রামীণ সংযোগ সড়কের শাখা সড়ক এটি। এই রাস্তা দিয়ে ধলিয়া গ্রাম ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন।

গ্রামের যুবক-তরুণরা যখন সংড়কটি সংস্কারে নেমে পড়লেন, তখন সকল মহল তাদের উৎসাহ দিলেন। অনেকে তাদের সঙ্গে কোদাল ও টুকরি হাতে অংশ নিলেন। কেউ সামান্য অর্থ সহায়তা দিলেন।

প্রবাসীরা রাখলেন বিশেষ ভূমিকা। করোনার এমন উপার্যনহীন সময়েও ইট, বালু কেনার জন্য অর্থ পাঠালেন। এইভাবে নির্মিত হচ্ছে এক কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ইটের কার্পেটিং সড়ক। এখন শুধু অপেক্ষায় অর্ধ শতব্দীর বেশী সময়ের ভোগান্তী অবসানের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে ধলিয়া গ্রামের শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সের মানুষ টুকরি ও কোদাল নিয়ে পাশের জমি থেকে মাটি কেটে রাস্তায় ফেলছেন। এরপর বালু ভরাট করে ইটের কার্পেটিং করছেন।

রাস্তাটি নির্মাণে উদ্যোগী তরুণ পোল্টি খামারী ইমাম ফারুক ভূঁঞা অরুণ জানান, সড়কটির নামকরণ হয়েছে মরহুম বাচ্ছু ভূঁইঞার নামে। গ্রামের এই সমাজসেবী মানুষটিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ধরাধরি করে এক কিলোমিটার এনে এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার মৃত্যুর পরও তাকে যানবাহনে করে বাড়ি নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও জানান, সড়কটি নির্মাণে প্রথম থেকে যারা উদ্যোগী হয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রবাসী জাকিরুল ইসলাম, আবুল হোসেন, মাস্টার জাহাঙ্গীর আলম অন্যতম।

রাস্তা সংস্কার কাজে ব্যস্ত একজন বলেন, কাঁচা রাস্তার অনেক স্থান ভেঙে ধানি জমির সঙ্গে মিশে গেছে। জনগণের এই দুরাবস্থার বিষয়ে অবহিত থাকলেও রাস্তা সংস্কারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দীর্ঘদিনেও কোন ব্যবস্থা নেননি। ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কাছে রাস্তা সংস্কারের দাবি
জানালেও তারা তহবিল নেই বলে এ কাজ করা যাবে না বলে জানিয়ে দেন।

এ বিষয়ে পাঁচগাছিয়া ইউপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মানিক বলেন, আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। এটি আমার ইউনিয়নের একটি কাঁচা রাস্তা ছিলো। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কয়েক বার সংস্কার করেছি। এখন এলাকাবাসী সেই রাস্তা ইটের সলিং করার উদ্যোগ
নিয়েছে, আমি এতে খুশি।

ফেনী জেলা পরিষদ সদস্য মাহবুবুল হক লিটন বলেন, এই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা ব্যর্থ। যুবকরা নিজেদের টাকায় নিজেদের শ্রমে এই কাজে নেমে পড়েছে তাই তাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।