নিরানন্দ ঈদ কাটল দুর্যোগ কবলিত পাইকগাছা- কয়রার মানুষের

প্রকাশিত: ৭:৩০ অপরাহ্ণ, মে ২৯, ২০২০

আতিয়ার রহমান,খুলনা : একদিকে করোনা অন্যদিকে আম্পানের আঘাত ঈদের প্রভাব পড়েনি দুর্যোগ কবলিত খুলনা,পাইকগাছা, কয়রা উপজেলার মানুষের মধ্যে। উপজেলার অন্তত চার ইউনিয়নের মানুষ ঈদের নামাজ পড়েছে কাদা পানি অথবা উঁচু বেড়িবাঁধের ওপর। খেয়ে না খেয়ে কষ্টের মধ্যেই দিন পার করছে ভাঙন কবলিত অধিকাংশ মানুষ। দুটি ইউনিয়নের ৯০ ভাগ ডুবে যাওয়ায় নিত্য পণ্য কেনাকাটাতেও সংকট দেখা দিয়েছে।
উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাজী পাড়া এলাকার কামরূল ইসলাম বলেন, ‘রাতে থাকার মত কোন শুকনো জায়গা নেই। সারাদিন বাঁধে কাজ করতে হয় আর রাতে ঘরে থাকার মত কোন জায়গা নেই। দুরের এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে সকলের রান্না। সেখানে গিয়ে খেয়ে রাস্তার ওপর মাচা করে সেখানেই ঘুমিয়ে থাকি। ঈদ এবার আমাদেও জন্য না।

কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর কয়রা গ্রামের রাবেয়া খাতুন বলেন, দিনে দুইবার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছি। জোয়ারে ডুবে যায় ঘর ভাটায় জেগে ওঠে। এ অবস্থার মধ্যে মানুষ ঈদ আনন্দ কিভাবে উপভোগ করতে পারে। বেঁচে আছি এটাই ঈদের আনন্দ। নতুন করে বাঁধ নির্মান হবে আমরা নির্বিঘেœ নিজের ঘওে থাকতে পারব এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের বাসিন্দা ও ছাত্রনেতা আবু সাইদ বলেন, উত্তর বেদকাশী ও দক্ষিন বেদকাশী ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছেন এ এলাকার মানুষ। চারিদিকেই শুধু থৈ থৈ পানি। ঘরে খাবার নেই। মাথা গোজার ঠাঁই নেই। খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করছেন। আবার কেউ রাস্তা বা বাঁধের ওপর অস্থায়ী ঘর তুলে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থার মধ্য দিয়েই মানুষ পার করছে দিন।

করোনা আতঙ্কের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মানুষ এখন দিশেহারা। ঈদ আনন্দের কোন প্রভাব পড়েনি এখানকার মানুষের মধ্যে। বিধ্বস্ত কয়রার মানুষ এখন বাঁধ মেরামতেই সময় পার করছেন। স্থানীয় ঈদগাহ-মসজিদ, মাঠ, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান সব জায়গায় পানি থাকায় অনেকেই টিকে থাকা বেড়িবাঁধ বা সড়কের ওপর ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা-২ সূত্রে জানা যায়, কয়রায় পাউবোর ১৩ ও ১৪-১ নং পোল্ডারের অন্ততঃ ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আম্পানের আঘাতে কয়রার পাঁচটি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৪টি পয়েন্টে নদী ভাঙনের কারণে এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় কয়রা উপজেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে জোয়ারের ছোটবড় ৫ হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে।

সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা আল আমিন বলেন, এখন পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষ খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। কেউ কোন ধরনের সহযাগীতা করেনি। পুরুষরা সকাল হয়েই যাচ্ছে বাঁধ বাঁধতে। মহিলারা ধার দেনা করে চাল ফুটিয়ে রাখছে। তাই লবন পানি দিয়ে খাচ্ছে মানুষ। ইউনিয়নে ৫২শ পরিবার রয়েছে। সরকারি সাহায্য এসেছে ২৫০ পরিবারের জন্য। আমার ওয়ার্ডে ৫১৭টি পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২০টি পরিবারকে সরকারি ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হয়েছে।