লকডাউনে কেমন আছে খুলনার নিম্ম আয়ের খেঁটে খাওয়া মানুষ ?

প্রকাশিত: ৭:৫৪ অপরাহ্ণ, জুন ২৮, ২০২১

আতিয়ার রহমান,খুলনা : খুলনায় পর পর দুই ধাপে কঠোর বিধি নিষেধের পর চলমান এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন শেষ হতে না হতে নতুন করে সমগ্র দেশ জুড়ে বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণাল ও করোনা প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১জুলাই বৃহস্পতিবার থেকে আবারো ৭ দিনের জন্য কঠোর লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন।

এতে করে হতাশা ও দিশেহারা হয়ে চোখে-মুখে বিষাদের ছাপ নিম্মœ আয়ের খেটে খাওয়া দিন মজুরীদের। নগরীর ৭ রাস্তার মোড়ে রবিবার সকালে এক জন দিনমজুর রশিদ মিয়া (৬০) জানান আমার সংসারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন আয়ের উৎস আমি একা।

গত ঈদের পর থেকে দেশে করোনার কারনে ঠিক মত কাজ কাম না থাকায় পাঁচজনের সংসার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। ঘরে খাবার নাই কাছে টাকা পয়সা নাই, এখন আমাদের না খেয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় নাই।গত পনের দিন আগে পাঁচ কেজি চাউল ও কিছু আলু ত্রাণ পেয়েছিলাম তাদিয়ে আর কয়দিন চলে।

অন্যদিকে শহরের শেখ পাড়া, মুসলমান পাড়া, গল্লামারী, হাফিজ নগর সহ অনেক গুলি বস্তি এলাকা ঘুরে দেখা যায় বাস্তব চিত্র আরো করুন অবস্থা।

চাঁনমারি বস্তিতে গেলে আমেনা খাতুন সহ সকল বস্তিবাসীর হৃদয় বিদারক দৃশ্য অনেক মর্মান্তিক।বস্তির অনেক নারী-পুরুষেরা এসে তাঁদের অসহায় অবস্থার কথা জানিয়ে তারা বলেন আমরাতো বড় লোক না। আমাদের কাম কাজ না থাকলে আমরা খাবো কী আমরা রোজ কাজ করি রোজ খাই।
আমাদের প্রত্যেকেরই ঘরে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আছে তাঁদের না খেয়ে থাকার কষ্ট আমরা বাপ-মা হয়ে কেমনে সহ্য করি। কাজ কাম না থাকার করণে মানুষের কাছ থেকে ধারদিনা করে আর কয়দিন চলা যাবে।এখন আমাদের মরন ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

হাফিজ নগর বস্তির বাসিন্দা নাসিরের স্ত্রী তার তিন মাসের কন্যা সন্তানকে কোলে নিয়ে এসে বলে আমার বাচ্চার বয়স তিন মাস স্বামী রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো। তাও প্রাই দেড় মাস যাবৎ কোন কাজ না থাকায় বেকার হয়ে ঘরে বসা।টাকা পয়সার অভাবে ঘরের একটা স্টিলের সোকেস ছিল সেইডা কয়দিন আগে পঁচিশত টাকায় বিক্রি করে বাচ্চার দুধ কিনছি।

এখন তাও শেষ বাচ্চার দুধ না থাকায় পাশে যাঁরা ভাত রান্না করে তাদের কাছ থেকে ভাতের মার চেয়ে নিয়ে ও চিনির পানি খাওয়ায়ে কোন রকম বাঁচায় রাখতাছি।অসহায় বস্তিবাসীর নিকট ত্রাণের ব্যাপারে জানতে চাইলে বলে মাঝে মধ্যে সামান্য কিছু ত্রাণ ওয়ার্ড কমিশনারের পক্ষ থেকে দিলেও তাঁতে কয়দিন চলে। ৫ নাম্বার ঘাটের লেবার সুলায়মান ৪৫ জানান আমি খুলনা রেলস্টেশনে লেবারের কাজ করি আজ এক সপ্তা গাড়ী বন্ধ থাকায় কোন উপার্জনের রাস্তা নাই।লেবার সুলাইমানও বলে একই কথা সামান্য কিছু ত্রাণ পাইছি সেটা দিয়ে আরকী জীবন চলে।

কামকাজের সন্ধানে রাস্তায় বের হলে পুলিশে ধাওয়া দেয়। সংসারে দুইজন ছোট ছোট ছেলে মেয়ে তাঁদের খাবার যোগাড় করার মত কোন পথ নাই তাই বাধ্য হইয়া আমার স্ত্রী একসপ্তাহ হইল এক সাহেবের বাসায় কামে লাগছে।মিস্ত্রীপাড়া বাজার এলাকার ইজিস বাইক চালক নজরুল মিয়া (৫৫) ক্ষোভের সাথে বলেলন আমাদের ঘরে কী জমানো টাকা আছে যে, সেইটা দিয়া নিশ্চিন্তে পোলাপাইন নিয়া ঘরে বসে খাবো।

গাড়ী নিয়ে রাস্তায় নামলে পুলিশে আটক করে টায়ার ছিদ্র করে দেয়।খুলনা রেলস্টেশনের ভ্রাম্যমান চাবিক্রেতা মিনা বেগম দুঃখ ভারক্রান্ত হৃদয় নিয়ে তাঁর কষ্টের কথা চোখের পানি দিয়ে বোঝাল আমার পুঁজি মাত্র এই দুইডা ফ্লাক্স আর হাতে গোনা পাঁচ ছয়শত টাকা।

আমার বৃদ্ধা মা আছে, ছোট ছোট তিনজন সন্তান আছে এই দুই ফ্লাক্স চা বেঁচতে পারলে কোন রকম আমার সংসার চলে।তয় এক সপ্তাহ যাবৎ জি,আর,পি পুলিশ প্লাট ফর্মে ঢুকতে দেয় না। যাঁর কারণে আমি মহিলা মানুষ সব জায়গায় ঘুরে চা বেঁচা আমার দ্বারা সম্ভব না।

তাই আমার সামন্য পুঁজি তাও ভাইঙ্গা খাইয়া শেষ করছি। এখন সম্বল মাত্র দুইডা ফ্লাক্স আছে। সেইডা গেলে পরে আমি কী করে চা বিক্রি করে খাবো। এই কথা বলতে বলতে চোখের পানি ঝরিয়ে কাঁদতে থাকে।করোনার কথা জিজ্ঞাসা করলে বলে আল্লাহ যাঁরে যে ভাবে নিবো সে সেই ভাবে যাইবো।খালিশপুর আওয়ামী-লীগনেতা মোরর্সেদ মনির বলেন,বর্তমানে এলাকায় বেশির ভাগ গরীব খেঁটে খাওয়া মানুষ ,আমরা চেষ্টা করছি তাদের খাবার দেওয়ার ওয়াডং ভাগ করে খাবার বাড়ি বাড়ি পৌচ্ছে দেওয়া হবে বলে তিনি জানন।