ভেজাল খেজুরের গুড়ে সয়লাব রাজশাহীর হাট-বাজার

প্রকাশিত: ১১:২৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৬, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে খেজুরের গুড় উৎপাদনে সবার আগে নাম আসে পুঠিয়া উপজেলার। শুধু দেশের মধ্যেই নয়, এই এলাকার খেজুরের গুড়ের সুনাম রয়েছে দেশের বাইরেও। গুড়ের মৌসুম শুরু হতে না হতেই কিছু অসাধু গুড় উৎপাদকারীরা বেশি লাভের আশায় গুড়ের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে বাজারজাত করছেন।
এতে করে সাধারণ ক্রেতারা প্রতারণার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন।

এলাকাবাসীরা বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাবে বাজারগুলোতে ক্রমেই ভেজাল গুড়ের আমদানি বেড়ে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খেজুরের গুড়ের সর্ববৃহৎ আড়ৎ উপজেলার ঝলমলিয়া ও বানেশ্বর হাট। গুড় উৎপাদন মৌসুম শুরু হলেই এই হাটসহ পুরো উপজেলা জুড়ে প্রায় আড়াই শতাধিক আড়তে কেনা-বেচা শুরু হয়। হাট বারসহ প্রতিদিন সকাল থেকে ওই আড়ৎগুলোতে খেজুরের গুড়ের কর্মযজ্ঞ দেখা যায়। পাশাপাশি গত কয়েক বছর থেকে অনলাইন মাধ্যমেও গুড় কেনা-বেচা হচ্ছে। এ বছর কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাবে মৌসুমের শুরু থেকেই হাট-বাজার ও আড়ৎগুলোতে ভেজাল খেজুর গুড়ের আমদানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি গুড় ৬০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বুধবার সকালে উপজেলার ঝলমলিয়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, হাটে আগত বেশির ভাগ বিক্রেতারা চিনি মিশ্রিত খেজুরের গুড় তৈরি করে এনেছেন। মাত্রাতিরিক্ত চিনি মিশ্রিত গুড় বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে। আর এর চেয়ে কিছু ভালো মানের গুড় বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। তবে পাটারী বা খুরি (পাটা গুড়ের সাইজ) প্রকার ভেদে কেজিতে দু’এক টাকা কম বেশি হচ্ছে।

জিউপাড়া এলাকা থেকে গুড় বিক্রি করতে আসা হোসেন আলী বলেন, খেজুর গাছগুলোর যত্ন বা তদারকি না করায় অনেক গাছ রস কম দেয়। সেক্ষেত্রে অল্প রসের মধ্যে অনেকই চিনি মিশ্রিত গুড় তৈরি করেন। আবার কেউ কেউ বেশি লাভের আশায় ১০ কেজি খেজুরের গুড়ের মধ্যে ৪০ কেজি চিনি মিশ্রণ করেন। স্থানীয় প্রশাসন, ব্যবসায়ী বা হাট কর্তৃপক্ষ এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ভেজাল গুড়ের আমদানি ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে।

আশরাফুল ইসলাম নামের অপর এক গুড় বিক্রেতা বলেন, খেজুর রসের গুড় তৈরি করতে কিছু চিনি মেশাতে হয়। তাহলে গুড়ের রং ও মান অনেক বেড়ে যায়। গুড়ের রং ভালো হলে বাইরে থেকে আসা পাইকাররা অনেক বেশি দামে কিনতে আগ্রহী হয়।

তিনি আরও বলেন, গত বছরের পুরানো লালিতে অনেকই গুড় তৈরি করেন। ওই গুড়ে একটু চুন, ফিটকারীর পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত চিনি, সোডা ও হাইডোজ দিতে হয়।

আড়ৎদার জহুরুল ইসলাম বলেন, হাটে আসা বেশির ভাগ খেজুরের গুড়ে মাত্রাতিরিক্ত চিনি মেশানো আছে। যার কারণে এই অঞ্চলের খেজুর গুড়ের চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিগত বছরের তুলনায় এবার শুরুর দিকেই গুড়ের দামও অনেক কম।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, খেজুরের গুড়ে চিনি বা পুরানো ‘র’ মিশ্রণ গুড় বাজারজাত হচ্ছে কি না? সেটা দেখা হচ্ছে। ভেজাল রোধে আমরা নিয়মিত বিভিন্ন হাট-বাজারে অভিযান চালাচ্ছি। এর মধ্যে যদি কোন অসাধু বিক্রেতা গুড়ে ভেজাল দেয়ার চেষ্টা করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।