রাজশাহীতে নতুন পেঁয়াজের দাম পেয়ে খুশি কৃষক

প্রকাশিত: ৯:৪২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠতে থাকায় দাম অনেকটায় কমে গেছে। তবে এই নতুন পেঁয়াজের দাম পেয়ে এবার রাজশাহীর কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বেড়েছে পেঁয়াজ চাষে। রাজশাহীর বাজারে এখন ১০০ টাকার নিচে পেঁয়াজের দাম নেমে আসলেও কৃষকরা তাতে খুশি।

বাজারে আসা নতুন এই পেঁয়াজের দাম পেয়ে এবার আবারো পেঁয়াজচাষে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে প্রায় অর্ধেকরও বেশি কৃষক জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপনও করেছেন। কিন্তু কদিন আগে বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজচাষ কিছুটা ব্যাহত হয়েছিলো। তবে এখন আবহওয়া ভালো থাকায় রাজশাহীর কৃষকরা জমিতে আবারো পুরোদমে পেঁয়াজের চারা রোপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

এদিকে এ বছর রাজশাহীতে ১৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। আর এ পরিমাণ জমি থেকে এ বছর প্রায় দুই লাখ ১৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে বলেও আশা করা হচ্ছে। গত বছর এই মৌসুমে রাজশাহীতে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজচাষ হয়। সেখান থেকে প্রায় দুই লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। তবে গত বছরের পেঁয়াজের শেষ দিকে এসে কৃষকরা দাম পেয়ে খুশি। এখন বাজারে যে ছাচি বা ঢেমনা পেঁয়াজ আসছে সেটিরও আশানরুপ দামও পাচ্ছেন কৃষকরা এ কারণে চলতি বছর আলেপর পেঁয়াজচাষের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে।

রাজশাহী কৃষি বিভাগ সূত্র জানা যায়, এ বছর প্রায় অর্ধেকরও কিছু বেশি জমিতে এরই মধ্যে পেঁয়াজের চারা রোপন হয়েছে। এখনো অনেক কৃষক জমিতে চারা রোপন করতে পারেননি। আগামী কয়েকদিন আর নতুন করে বৃষ্টিপাত না হলে বাকি জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপনের কাজ শেষ হবে। তখন শুরু হবে কেবল পরিচর্যা। নতুন এই পেঁয়াজ বাজারে আসতে আড়াই থেকে তিন মাস সময় লাগবে। আর সময়টা বর্তমানে বাজারে আসা নতুন পেঁয়াজেই কেটে যাবে। ফলে বাজারে আর নতুন করে পেঁয়াজের সঙ্কট সৃষ্টি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি রয়েছে।

রাজশাহীর দুর্গাপুরের পেঁয়াজচাষি আলতাফ হোসেন জানান, তিনি প্রতি বছরই পেঁয়াজচাষ করেন। এ বছরও এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজচাষ করবেছেন। এছাড়াও প্রায় ৩০ মণ চারা বিক্রি করেছেন অন্য চাষিদের কাছে। আরো মণ ত্রিশিকে চারা বিক্রি করতে পারবেন এখনো। এছাড়া তাঁর নিজস্ব জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হলেও গত রবিবার সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় সেই চারা রোপন করতে পারেননি। তবে আগামী দুই-একদিন আবহওয়া ভালো থাকলে ওই জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপন করা যাবে।

পবার বড়গাছী এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, তিনিসহ এখনো অনেক কৃষক পেঁয়াজের চারা রোপন করতে পারেননি। এরই মধ্যে বৃষ্টিতে বাগড়া দিলো। তবে মশুলধারে বৃষ্টি না হওয়ায় এখনো জমি চারা রোপনের উপযোগি আছে। তবে নতুন করে আবার বৃষ্টি হলে রাজশাহীতে পেঁয়াজচাষ অনেকটায় ব্যাহত হবে।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহীর দুর্গাপুর বাজারে দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি পাইকারী বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা দরে। আর খুচরা বাজারে এক কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০-৯৫ টাকা দরে। তবে মহানগরীতে গতকাল এক কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা দরে। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে। বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসার কারণে দাম অর্ধেকের কমে নেমে এসেছে বলে দাবি করেন বিক্রেতারা।

এখন নতুন করে পেঁয়াজের আর শঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা নাই বলেও দাবি করেন মহানগরীর সাহেব বাজার এলাকার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আকবর আলী। তিনি বলেন, ‘বাজারে নতুন পেঁয়াজ এখন অনেকটায় পর্যাপ্ত। এই পেয়াজ শেষ হতে না হতেই এখন যেটি চাষ হচ্ছে সেটি বাজারে চলে আসবে। কাজেই অন্তত ৬ মাস আর পেঁয়াজের তেমন শঙ্কট না হওয়ার সম্ভাবনায় বেশি।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক জানান, এ বছর ভালো দাম পেয়ে পেঁয়াজ চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। এ কারণে গত বছরের চেয়ে এ বছর পেঁয়াজচাষে আগ্রহও বেড়েছে চাষিদের মাঝে। এরই মধ্যে অনেকেই পেঁয়াজের চারা জমিদে রোপন করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাকিরাও আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চারা রোপন শেষ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।