খুলনায় কয়েক কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখল:তদন্তে জেলা প্রশাসন

প্রকাশিত: ৬:৩৯ অপরাহ্ণ, জুন ২, ২০২০

আতিয়ার রহমান,খুলনা : খুলনা জেলার কয়েক কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন সরকারি কর্মকর্তাসহ নানা প্রতিষ্ঠান। এসকল সম্পত্তি দখল মুক্ত করতে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। পাশাপাশি তদন্ত শেষে এসকল সম্পত্তি উদ্ধারের পরিকল্পনাও করছে জেলা প্রশাসন।

দখলের তালিকায় রয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। অবৈধ দখলের তালিকায় রয়েছেন খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব শাখার সাবেক সিএ (গোপনীয় সহকারি) শিমুল কুমার ঘোষ, খুলনা ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্ট লিঃ, গ্রীন বাংলা হাউজিং লিমিটেড, ঢাকা ট্রেডিং, খানজাহান আলী কৃষি কলেজ।

এদের বিরুদ্ধে খুলনা জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছেন। তাছাড়া তদন্তে এসকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখলের প্রাথমিক সতত্যা মিলেছে বলে জেলা প্রশাসন সুত্র নিশ্চিত করেছেন।

খুলনা জেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার মাথাভাঙ্গা মৌজার আরএস ১নং খতিয়ানের ২৫৪৪, ২৫৪৫, ২৬১৭, ২৬১৬ নম্বর দাগের ২.৪৪ একর সৈয়দপুর ট্রাস্ট এস্টেটের জমি রয়েছে। খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব শাখার সাবেক সিএ (গোপনীয় সহকারি) বর্তমানে রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরত শিমুল কুমার ঘোষ ও তার আত্মীয় স্বজনদের নামে বেআইনীভাবে ইজারা নিয়েছেন। তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে ভুল বুঝিয়ে তিনি এ কাজ করেছেন বলে জানা গেছে। ওই জমির বর্তমান বাজার মুল্য ৫ কোটি টাকার বেশি বলে ট্রাস্ট’র সম্পত্তি শাখা সুত্র জানিয়েছেন।

এছাড়া সিএ শিমুল কুমার ঘোষ বটিয়াঘাটা উপজেলাধীন শেখ রাসেল ইকো পার্কে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং পয়েন্ট করে টাকা আদায়, পুকুরে অবৈধভাবে মৎস্য চাষসহ জমি দখলের মাধ্যমে ঘের তৈরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। দৌলতপুর বাজারের দোকান বরাদ্দের সময় ঘুষ নিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে ইজারা প্রদানে সহায়তা করেছেন। একারনে সরকার বিপুল পরিমানে রাজস্ব আদায়ে বঞ্চিত হয়েছে। তাছাড়া তিনি পাইকগাছা উপজেলায় কৃষি খাস জমি বরাদ্দের ক্ষেত্রেও ঘুষ গ্রহনের মাধ্যমে অনিয়ম করেছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এসকল দুর্নীতি ও অনিয়ম তিনি খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাখার গোপনীয় সহকারি থাকাকালীন সময়ে করেছেন বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, খুলনা ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্ট লিঃ নামের প্রতিষ্ঠান রূপসা উপজেলার চর রূপসা মৌজার এসএ ৫৪ ও আর এস ৬০নং দাগের ০.০৭একর খাস সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলে নিয়েছেন। এবিষয়ে রূপসা উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) জেলা প্রশাসক বরাবর একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, খুলনা ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্ট লিঃ নামের প্রতিষ্ঠানের অবৈধ দখলে থাকা সরকারি সম্পত্তি সরকারের অনুকুলে দখলে নিতে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা প্রয়োজন।

খুলনার গ্রীন বাংলা হাউজিং লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান রূপসা উপজেলার জাবুসা মৌজায় ১.২০একর খাস সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে প্লট আকারে বিক্রি করছেন। অবৈধ দখলে থাকা সরকারি এ সম্পত্তি উদ্ধারের বিষয়ে রূপসা উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) জেলা প্রশাসক বরাবর একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

ঢাকা ট্রেডিং নামের প্রতিষ্ঠান দিঘলিয়া উপজেলার মহেশ্বরপাশা মৌজায় ১নং খাস খতিয়ানের ১.৪৬একর সম্পত্তি আরএস রেকর্ডে সরকারের নামে না করে অবৈধভাবে ঢাকা ট্রেডিংয়ের নামে করেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের অবৈধ দখলে থাকা সরকারি এ সম্পত্তি উদ্ধারের বিষয়ে দিঘলিয়া উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) জেলা প্রশাসক বরাবর একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

খানজাহান আলী কৃষি কলেজ নামের প্রতিষ্ঠান দিঘলিয়া উপজেলার মহেশ্বরপাশা মৌজায় ১নং খাস খতিয়ানের ০.০৯ একর সম্পত্তি আরএস রেকর্ডে সরকারের নামে না করে অবৈধভাবে খানজাহান আলী কৃষি কলেজের নামে রেকর্ড করেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের অবৈধ দখলে থাকা সরকারি এ সম্পত্তি উদ্ধারের বিষয়ে দিঘলিয়া উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) জেলা প্রশাসক বরাবর একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

এদিকে এসকল দুর্নীতি ও অনিয়মের সম্পর্কে খুলনা জেলার বর্তমান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সারোয়ার আহমেদ সালেহীন বলেন, অভিযোগের তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সরকারি সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলের সাথে জড়িত যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানই হোক তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। পাশাপাশি সরকারি ওই সকল সস্পত্তি অবৈধ দখলমুক্ত করার প্রক্রিয়াও চলছে।