কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে খুলনায় দুশ্চিন্তায় প্রায় ৭ হাজার খামারী ব্যাবসায়ী

প্রকাশিত: ৬:২২ অপরাহ্ণ, জুলাই ৭, ২০২০

আতিয়ার রহমান,খুলনা : কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে দুশ্চিন্তায় প্রায় ৭ হাজার খামারী ব্যাবসায়ী, খুলনায় গত কোরবানি ঈদে ৪৯ হাজার ৫’শটি বিভিন্ন ধরণের গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে এ বছর বিকিকিনি বেশি হবে এই লক্ষ্য নিয়েই প্রস্তুতি শুরু করেছিল খামারীরা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ভাইরাসের কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছে জেলার ৬ হাজার ৮৯০জন খামারী ব্যবসায়ী। তাদের ব্যবসায়ের পুঁজি টিকিয়ে থাকা নিয়ে চলছে টানাটানি। এদিকে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাদের অনুসন্ধানে চলতি বছর করোনার কারনে কোরবানিতে পশু বিকিকিনি কমার শঙ্কা রয়েছে শতকরা ২০ ভাগ।

এদিকে খামারীদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়ার জন্য জেলার ৯টি উপজেলাসহ মেট্রোতে এ বছর ২৮টি পশুর হাট স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং পশুদের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নের জন্য এসব হাটে কাজ করবে ৩৭টি মেডিকেল টিম। এছাড়া খুলনায় প্রথমবারের মত অনলাইন এ্যাপসের মাধ্যমে কোরবানির পশু বিকিকিনির সুযোগ করে দেওয়ারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, খুলনা জেলায় এ বছর কোরবানির পশু বিকিকিনির লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৫৪ হাজার। গত ২০ জুলাইয়ের তথ্য অনুযায়ী জেলার ৬ হাজার ৮৯০জন খামারীর নিকট গবাদিপশুর সংখ্যা রয়েছে ৪৫ হাজার ১৮১টি। এছাড়া খুলনার পাশ্ববর্তী জেলা এবং উপজেলা থেকে কোরবানির হাটে পশু আসাতে অত্র এলাকার চাহিদা মিটে যায়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর কোরবানি দিতে অনীহা বেড়েছে অনেকের। বিশেষ করে কোরবানির পশুর হাটে সামাজিক দূরত্ব নিয়ে শঙ্কা কাটছে না সাধারণ মানুষের।

এদিকে জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের একটি অনুসন্ধানী টিম ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় একটি জরিপ চালিয়েছেন। জরিপের প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছর করোনা ভাইরাসের কারণে শতকরা ২০ ভাগ পশু বিকিকিন কমে যাওয়ার শঙ্কা পেয়েছেন তারা। এতে করে খামারীদের বড় ধরণের ব্যবসায়ীক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কোরবানির ব্যাপারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরিজীবি মো:সাকাওয়াত হোসেন সাকী, তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে গত কয়েকমাস আর্থিক সংকটে আছি। প্রতিষ্ঠান লোকসানে থাকার কারণে মালিকপক্ষ বেতন ঠিকমত দিতে পারছে না। আমি প্রতিবছর চেষ্টা করি কোরবানির দেওয়ার জন্য। কিন্তু এ বছর অবস্থা এতটাই খারাপ যে কোরবানি দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো: রবিউল আলম যায়যায়দিনকে জানান, এ বছর কোরবানির হাট থেকে পশু কেনার কোন ইচ্ছা নেই। খুলনায় প্রতিনিয়ত যে হারে করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে সে তুলনায় হাটগুলোতে সামাজিক দূরত্ব কতখানি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এটা নিয়ে সন্দেহ আছে। তিনি বলেন, খামারীদের বাড়িতে গিয়ে বা অনলাইন এ্যাপস চালু করতে পারলে তার মাধ্যমে পশু কেনার ইচ্ছে আছে।

নগরীর লবণচরার খামারী মো: আজহারুল ইসলাম সুমন বলেন, এ বছর কোরবানির পশুর দাম চাহিদা অনুযায়ী না পাওয়ার শঙ্কা বেশি। অনেকেই করোনার কারণে হাটে আসতে চাইবে না। এতে করে খামারীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এমনকি পুঁজি টিকে থাকা নিয়েও চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে। শোভনা জমজম এগ্রো ্রখামার মালিক আলহাজ্ব মারুফ বিন জব¦ার বলেন, গরুর দাম এখনই কম যাচ্ছে। কোরবানিতে কি হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। মানুষ হাটে না আসলে গরুর দাম আশানুরূপ পাওয়া যাবে না।

খুলনার জেলা প্রাণীসম্পদ অফিসার এস এম আউয়াল হক যায়যায়দিনকে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে এই বছর মানুষের মধ্যে আতংক থাকায় পশু বিকিকিনি কম হতে পারে। তাছাড়া আমরা উপজেলা পর্যায়ে একটি জরিপ চালিয়ে জেনেছি, চলতি বছর শতকরা ২০ভাগ কোরবানির পশু বিকিকিনি কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে তিনি দাবি করেছেন, খামারীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ইতিমধ্যে ২৮টি স্থানে কোরবানির হাটসহ অনলাইনে পশু বিকিকিনির জন্য এ্যাপসের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছি।