খুলনায় ‘মাস্ক নাই যার, বাজার নাই তার

প্রকাশিত: ৮:২৯ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০২০

আতিয়ার রহমান,খুলনা : জনসাধারণকে সচেতন করতে ‘নো মাস্ক, নো মেডিসিন’, ‘মাস্ক নাই যার, বাজার নাই তার কর্মসূচি’, হতদরিদ্র কৃষকদের ধান ও ভুট্টা মাঠ থেকে সংগ্রহ করে ঘরে তুলে দেয়া, করোনার কারণে কর্মহীনদের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো, করোনা শনাক্ত রোগীর বাড়িসহ আশপাশের লকডাউন থাকা বাড়িতে খাদ্য সরবরাহ, শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অর্থ ও খাদ্য দিয়ে সহায়তাসহ নানা ধরণের প্রশংসনীয় কাজ করে যাচ্ছে খুলনা জেলা পুলিশ। আর এসব কাজের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ সুপার এস এম সফিউল্লাহ (বিপিএম)।

খুলনা জেলা পুলিশ সুপার রাত,দিন মানুষের পাশে থেকে তাদের দু:খ কষ্ট সমান ভাবে ভাগ করে নিচ্ছেন মানবিক পুলিশ।জিবনের ঝুকিনিয়ে কাজ করছে খুলনা জেলা পুলিশ। পুলিশ সুপার ধান কাটা উৎসব কর্মসূচি হাতে নেয়। এর আওতায় পুলিশ সদস্যরা দরিদ্র চাষিদের ফসলের মাঠে গিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলে দিচ্ছে। এ কর্মসূচি খুলনা জেলা সহ নয়টা থানাতে বিনা খরচে ধান ঘরে তুলতে পেরে খুশি কৃষকরা। ‘শুধু তাই না করোনা শনাক্ত রোগীর বাড়িসহ আশপাশের লকডাউন থাকা বাড়িতে খাদ্য সরবরাহ করে যাচ্ছে পুলিশ। এছাড়া করোনা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে শহর ও গ্রামগঞ্জে ঘুরে লিফলেট বিলি করে যাচ্ছে পুলিশ। মানুষকে সচেতন করতে পুলিশ যা করে যাচ্ছে তা বলে শেষ করা যাবে না।’

সামনে আসছে ঈদ অনেকেই কেনাকাটা করার জন্য দলবেধে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে। যা করোনা প্রতিরোধের অন্তরায়। জনসমাগম কমাতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পুলিশের কঠোর ভূমিকার দাবি জানান তিনি। মোশারফ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০ লাখ হতদরিদ্র ও কর্মহীন পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।

কৃষক নেত্রী হালিমা রহমান বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ সদস্যরা অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সরকারের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রামের হাট বাজারগুলোতে পুলিশ সদস্যরা নজরদারি করে যাচ্ছেন। অনেক সময় তারা বয়স্ক ক্রেতাদের বাজার সদাই তাদের বাড়ি পর্যন্ত পোঁছে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা দরিদ্র কৃষকের ধান ঘরে তুলে দেয়ায় স্থানীয় বিভিন্ন ছাত্র ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা তা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এখন ওইসব সংগঠনের কর্মীরা কৃষকদের সহায়তা করতে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছে। পুলিশ এ কাজে পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। কারণ বিপুল সংখ্যক মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামে যুক্ত হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে তারা কাজ করতে আগ্রহী।

পুলিশ সুপার তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে আস্বস্থ্য করে বলেন, কৃষক যেন তার উৎপাদিত পণ্য ঠিকমতো বাজারজাত করতে পারে এবং ফসল ঘরে তুলতে পারে, সেজন্য পুলিশের তরফ থেকে সকল প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়া চলতি বোরো মৌসুমের সফল ঘরে তুলতে কৃষকদেরকে সংগঠিত করা হয়েছে। সে লক্ষে জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের সাথে সমন্বয় করে কৃষকদের সহযোগীতা করা হবে। জেলা পুলিশ হতদরিদ্র কৃষকদের ধান কেটে ঘরে তুলে দিচ্ছেন। সত্যিই প্রশংসনীয়। এ পর্যন্ত জেলার প্রায় ৫৬ ভাগ জমির ধান কৃষকরা ঘরে তুলেছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) সজিব খান বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বহুমাত্রিক কাজ করে যাচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে মাঠে তারা সক্রিয় রয়েছে। এ ছাড়া জনগণকে সচেতন করতে পুলিশ প্রতিনিয়ত নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। জীবাণুনাশক ছিটানো এবং রোগীদের হাসপাতালেও পৌঁছে দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তিনি জানান, জনসাধারণকে সচেতন করতে নো মাস্ক, নো মেডিসিন। মাস্ক নাই যার, বাজার নাই তার। এ ধরণের লিফলেট ও ব্যানার এলাকার বিভিন্ন মুদি দোকান ও ওষুধ বিক্রেতাদের দোকানের সামনে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এ নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করতে দোকান মলিকদের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে। ‘আমরা আছি জনতার পাশে, মানবিক পুলিশের চোখে জনতার আকাঙ্খা লেখা থাকে’ এ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে জেলা পুলিশের উদ্যোগে স্থাপন করা হবে করোনা নমুনা সংগ্রহ বুথ।

এছাড়া করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে খুলনা জেলা লকডাউন চলাকালীন সময়ে দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার বিষয়ে একমুখী সড়ক চালুকরণের কাজ শুর হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে পুলিশ সুপার এস এম সফিউল্লাহ বলেন, জেলা পুিলশের পক্ষ থেকে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে মাইকিং, প্রচার-প্রচারণা, লিফলেট বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া কর্মহীন ও অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তার কাজও চলমান রয়েছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে ধান কেটে মাড়াই করে কৃষকের ঘরে তুলে দেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তা দেয়া সহজ হবে। সে লক্ষেই কৃষক যেন সময় মতো ধান ঘরে তুলতে পারে পুলিশের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।