হালুয়াঘাটে বাসে গৃহবধু ধর্ষণ- পুলিশের প্রেস ব্রিফিং

প্রকাশিত: ৬:৩০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২০, ২০২৩
হালুয়াঘাটে বাসে গৃহবধু ধর্ষণ- পুলিশের প্রেস ব্রিফিং

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের ইশ^রগঞ্জ উপজেলার বালুকদর গ্রামের এক গৃহবধু (২২) ঢাকায় তার স্বামীর কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ১৬ই অক্টোবর সোমবার সকালে বাড়ি থেকে তার বৃদ্ধ নানার সাথে বের হন। দুপুরের দিকে শম্ভুগঞ্জ এলাকায় এসে তার নানা ভুল করে ঢাকার গাড়িতে না উঠিয়ে হালুয়াঘাট গামী এক বাসে তাকে তুলে দেন।

গৃহবধুর স্বামী তাকে ফোন করে জানতে চায়, এখন সে কোথায় আছে। কিন্তু সে না বলতে পারায় বাসের হেলপারকে মোবাইল দিতে বলেন। হেলপারের সাথে কথা বলে জানতে পারেন, সে ঢাকার বাসে না উঠে ভুল করে হালুয়াঘাটের বাসে উঠেছেন। পরে বাসের ড্রাইভার গৃহবধুকে হালুয়াঘাট বাসস্ট্যান্ড গিয়ে ঢাকাগামী অন্য বাসে তুলে দেওয়ার আশ^াস দেন। বিকেল ৩টায় বাসের হেলপার নারীকে বাসস্ট্যান্ডে এক দোকানের সামনে দাড় করিয়ে রেখে অন্যবাসে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য সামনে যায়।
এ সময় অন্য এক বয়স্ক নারী জানতে চায় সে কোথায় যাবে। সেখানে দাড়িয়ে ছিলেন হালুয়াঘাট উপজেলার গোবরাকুড়া এলাকার আব্দুল কাদিরের পুত্র ইমাম বাসের ড্রাইভার জাহাঙ্গীর আলম (৩১)। সে ঘটনাটি শুনে ঐ নারীর পিছু নেয়। যে বাসের করে ঐ গৃহবধু হালুয়াঘাটে এসেছিলো সেই বাসের ড্রাইভার তাকে ঢাকাগামী এক বাসে উঠিয়ে দেয়। সুযোগ বুঝে সে বাসে উঠে পড়েন জাহাঙ্গীর আলম।

সে ঐ নারীর সরলতার সুযোগ নিয়ে তাকে বুঝিয়ে বলেন, এই বাসে গেলে ঢাকা যেতে গভীর রাত হয়ে যাবে। সে যেন তার বাসে ঢাকায় যায়। তার বাস রির্জাভ করা আছে এবং ধারা বাজার এলাকায় রাখা। রাত ৮টার মধ্যেই ঢাকা নিয়ে যাবেন।

ঐ নারী সরল বিশ^াসে তার সাথে ধারা বাজার মুরগী মহল এলাকায় নেমে পড়েন। তারপর জাহাঙ্গীর আলম ঐ নারীকে নিয়ে মুরগী মহলের পাশে নির্জন স্থানে দাড় করিয়ে রাখা ‘ঢাকা মেট্টো ব- ১৪-৯৬৫৮’ নম্বরের ইমাম বাসে উঠিয়ে বসতে বলেন।

বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে ঐ বাসের ড্রাইভার জাহাঙ্গীর বাসে উঠে গাড়ির দরজা বন্ধ করে ঐ নারীকে জোড় পূর্বক ধর্ষণ করে। ঐ নারী চিকিৎকার করতে চাইলে গলা চেপে ধরে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ধর্ষণের পর সে নারীকে বাসে রেখে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে চলে যায়। এক ঘন্টা পর আবারো জাহাঙ্গীর ফিরে এসে ঐ গৃহবধুকে ফুসলিয়ে বিয়ে করবে বলে প্রলোভন দেখায়। ঐ দিন রাত ১০ টায় জাহাঙ্গীর আলম ইটভাটার রির্জাভ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং ভোর বেলায় নারায়নগঞ্জে পৌছায়।

১৭ই অক্টোবর সকালে পূনরায় ঐ নারীসহ বাস নিয়ে সে হালুয়াঘাটের উদ্দেশ্যে আবারো রওনা দেয়। বেলা ৩টায় হালুয়াঘাট উপজেলার নাগলা বাজার পৌছে বাসের হেলপার ফয়সালকে জাহাঙ্গীর আলম বলে, এই মহিলাকে বিয়ে করেছি সে তোর নতুন ভাবী। তাকে বাড়িতে নিয়ে যা। আমি রাতে আসবো। পরে জাহাঙ্গীর আলম রাতে হেলপার ফয়সালদের বাড়িতে এসে একই পরিচয় দেয় এবং ঐ নারীর সাথে রাত্রী যাপন করে দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করে।

১৮ই অক্টোবর ঐ নারীকে নিয়ে সে পৌরশহরের পাগলপাড়া এলাকায় স্বামী স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নেয় এবং তৃতীয়বার ধর্ষণ করে। পরে ঐ নারীকে বাসায় রেখে জাহাঙ্গীর সেখান থেকে চলে যায়। অন্যদিকে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না ধর্ষণের শিকার ঐ নারী। পরে সুযোগ বুঝে ১৯ শে অক্টোবর রাতে ঐ নারী তার পিতাকে মোবাইলে বিষয়টি জানায়। ধর্ষণের শিকার ঐ নারীর পিতা হালুয়াঘাট থানা পুলিশকে ঘটনাটি জানালে, তাৎখনিক থানা পুলিশ ঐ নারীকে পাগলপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পাশাপাশি অভিযান চালিয়ে সেই ইমাম বাসসহ ধর্ষক জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করা হয়। ২০ অক্টোবর শুক্রবার সকালে এ নিয়ে প্রেস ব্রিফিং কওে থানা পুলিশ। প্রেস ব্রিফিংয়ে ঘটনাটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন হালুয়াঘাট সার্কেল এর সহকারী পুলিশ সুপার আহসান হাবিব।

হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন চন্দ্র রায় বলেন, এ ঘটনায় হালুয়াঘাট থানায় ২০ অক্টোবর শুক্রবার সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে জাহাঙ্গীর আলমকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ধর্ষণের শিকার ঐ নারী। আজ দুপুরে আসামীকে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে এবং ঐ নারীকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।