রাণীনগর-কালীগঞ্জ রাস্তা যেন চাষের জমি

প্রকাশিত: ৬:০৪ অপরাহ্ণ, জুন ২১, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতায় নওগাঁ থেকে রাণীনগর হয়ে কালীগঞ্জ যাওয়ার সড়কটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে এই ২২ কিলোমিটার রাস্তার প্রশস্ত ও আধুনিকায়ন কাজ চলছে গতিহীন ঢিমেতালে।

ফলে উপজেলার পূর্বাঞ্চলের শতাধিক গ্রামের লাখ লাখ মানুষ চরম দূর্ভোগে পড়েছেন। অনেক জায়গায় খোয়া বালির পরিবর্তে মাটি দিয়ে ভরাট করায় বৃষ্টির পানিতে কাদা মাটি উঠে গিয়ে রাস্তার অধিকাংশ স্থানের খানা-খন্দে হাটু পানি জমা হচ্ছে। এছাড়াও ব্রীজ-কালর্ভাট তৈরি করার জন্য যে পার্শ্ব রাস্তা তৈরি করা হয়েছে সেগুলোতে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনার।

সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাণীনগর সদর জিরো পয়েন্ট থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রাস্তা স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) কয়েক বছর আগে পাকাকরণ করা হয়। নওগাঁ থেকে রাণীনগর-আবাদপুকুর হয়ে নাটোরের সিংড়ার কালীগঞ্জ বাজারের মধ্য দিয়ে নাটোরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে রাস্তাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর রাস্তাটি প্রসস্তকরণ, আধুনিকায়ন, মজবুতকরণ ও ২৬টি কালভার্ট, ৪টি সেতু নির্মাণ করতে মোট ১০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দরপত্র দেয়া হয়।

দরপত্রের পর ২০১৯ সালের শুরু থেকে শুধুমাত্র সেতু ও কালভার্টের কাজ শুরু করা হলেও বিভিন্ন কারণে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করা হয় চলতি বছরের শুরু থেকে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এসব কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ২২ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে রাণীনগর সদরের জিরো পয়েন্ট থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তার মাঝে মাঝে কিছু অংশ বাদ রেখে রাস্তার পাকা অংশ তুলে খোয়া ও বালু দিয়ে ভরাট করলেও অনেক জায়গায় খোয়া বালির পরিবর্তে মাটি দিয়ে ভরাট করায় একটু বৃষ্টির পানিতে কাঁদা মাটি উঠে গিয়ে অধিকাংশ জায়গায় খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়ে হাটু পানি জমা রয়েছে।

ফলে রাণীনগর সদরসহ আবাদপুকুর, কালীগঞ্জ এলাকায় যেতে প্রায় নির্ধারিত সময় থেকে ৩ গুণ বেশি সময় লাগার সঙ্গে দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে। আর বছরের পর বছর পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। ধান উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ উপজেলার পূর্বাঞ্চল থেকে রাণীনগরসহ জেলা সদরে ব্যবসার জন্য ধান, চালসহ বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করা, চিকিৎসা নিতে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পরেছে ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার লাখো মানুষ।

আবাদপুকুর বাজারের ব্যবসায়ী রুহুল আমীন, শেখ হাফিজুল ইসলামসহ অনেকেই বলেন, রাস্তাটি সংস্কার করার পূর্বে বছরের পর বছর যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সংস্কার কাজের সময় সে দুর্ভোগ আরও দ্বিগুণ হয়েছে। প্রায় দুই বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হতে যাচ্ছে তবুও এই ২২ কি.মি০ রাস্তার সংস্কার কাজ আজ পর্যন্ত শেষ হচ্ছে না। বরং বরাদ্দকৃত ১০৫ কোটি টাকা যদি রাস্তার ওপর বিছিয়ে দেওয়া হতো তাহলে এই দুর্ভোগটি অনেক আগেই শেষ হয়ে যেতো।

ভ্যান চালক রহিদুল ইসলাম, ট্রাক চালক কালামসহ অনেকেই বলেন, এই রাস্তা আমাদের আয় কমে দিয়েছে। রাস্তার দুর্ভোগ যেন আমাদের জীবনের নিত্য সঙ্গী হয়ে গেছে। বড় বড় খন্দকে পড়ে ভ্যান, ট্রাকসহ ছোট ছোট যানবাহন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পথচারীরা রাস্তা খারাপের জন্য ভ্যানসহ ছোট ছোট বাহনে চলাচল না করার কারণে ভাড়া কমে গেছে।

নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল হক বলেন, রাণীনগর-কালীগঞ্জ রাস্তার কাজ শেষ করতে যে দ্বিতীয় মেয়াদে সময় বৃদ্ধি করা হয়েছিলো তা গত মে মাসের ৮ তারিখে শেষ হয়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে পাথর সংকটের জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করতে পারেনি। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের অধিকাংশ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বন্ধ রয়েছে। তাই পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই আবার এই কাজ শুরু করা হবে। আর যেখানে গর্ত হয়েছে সেই গর্তগুলো খোয়া দিয়ে পরবর্তীতে ভরাট করে দেওয়া হবে। এছাড়াও ব্রীজের বিকল্প পার্শ্ব রাস্তাগুলো ঠিক করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম বলেন, এটি খুবই দুঃখজনক বিষয় যে প্রায় দুই বছরেও এই রাস্তার কাজ শেষ হচ্ছে না। অথচ বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে পুরো রাস্তা মুড়িয়ে দিলে সপ্তাহের ব্যবধানে এই দুর্ভোগ শেষ হয়ে যেতো। এটি উপজেলা সদর ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে প্রধান সড়ক হওয়ায় অতি গুরুত্বপূর্ণ। আমি সড়ক ও জনপথ বিভাগকে একাধিক বার এই রাস্তাটির সংস্কার কাজ দ্রুত করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু তা রহস্যজনক ভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি।