রাণীনগরে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান

প্রকাশিত: ১২:০৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ঘোষগ্রাম কফিলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়। পর্যাপ্ত সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত থাকলেও শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, শ্রেণিকক্ষের সংকট, বৈদ্যুতিক ফ্যান না থাকাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হওয়ার কারণে দিন দিন এই বিদ্যালয়ে সুষ্ঠু পাঠদানের পরিবেশ মুখ থুবড়ে পড়ছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলীরা শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল (কাপড়) টাঙ্গিয়ে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসিয়ে কোন রকমে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন।

জানা গেছে, এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে স্থানীয় বেশ কয়েকজন শিক্ষানুরাগীর পরামর্শে কফিল উদ্দিন খন্দকার পীর সাহেব (কালিগ্রাম) প্রায় ৩ একর ৯৭ শতক জমির ওপর ১৯৪৫ সালে ঘোষগ্রাম কফিলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় ইট ও টিনের ছাউনি দিয়ে ৪টি কক্ষ তৈরি করে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষার গুণগতমান ভালো হওয়ায় প্রায় প্রতি বছরই এই বিদ্যালয়ে শতভাগ পাশের হারসহ একাধিক মেধাবী শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পেয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় ১৯৮৫ সালে জুন মাসে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করা হয়।

১৯৯৩-১৯৯৪ অর্থবছরে সরকারি বরাদ্দে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৭টি শ্রেণিকক্ষ, একটি কমন কক্ষ রয়েছে। বর্তমানে এই বিদ্যালয়টিতে শ্রেণিকক্ষ সংকট, বৈদ্যুতিক ফ্যান, শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রসহ নানা অবকাঠামোগত সমস্যায় জর্জড়িত। সুষ্ঠু ভাবে পাঠদান ও পাঠ গ্রহণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রেণিকক্ষ সংকট। এ কারণে বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে গাদাগাদি করে বসে কোন রকম পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। শিক্ষকদের দাপ্তরিক কাজ ও বসার জন্য নেই কোন আলাদা কক্ষ। ঝড়-বৃষ্টির সময় ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তাসহ নানা বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়। এরপরও এলাকার ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা গ্রহণের অদম্য আগ্রহ শক্তি ও ঝুঁকির আতঙ্ক মাথায় রেখে প্রতিনিয়ত পাঠ গ্রহণ করছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত ৯০৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৮শ’র বেশি শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহণ করে। গত বছরে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয় এই বিদ্যালয়টি।

বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী পলক পারভেজ, অমিত হাসান, সুমাইয়া আকতার, দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তানিয়া আকতার ও সজিব আহমেদসহ অনেকেই বলেন, শ্রেণিকক্ষের অভাবে আমরা খোলা আকাশের নিচে অনেক কষ্টে গাদাগাদি করে বসে পাঠ গ্রহণ করছি। সুষ্ঠু পরিবেশে পাঠ গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। মেয়েদের কমন রুম, কম্পিউটার ল্যাব ও গ্রন্থাগার না থাকার কারণে আমরা আধুনিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল হাসনাত খান হাসান বলেন, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ সংকটসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে পরিত্যক্ত ভবনগুলো ভেঙ্গে আধুনিক মানের নতুন ভবন নির্মাণ এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য সকল সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাহলে সুন্দর ও সুষ্ঠু ভাবে শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণ করতে পারবে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাহার হোসেন বলেন, বিদ্যালয়টির প্রতি বছরের ফলাফলসহ অন্যান্য কার্যক্রমের মানদণ্ডের প্রেক্ষিতে উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে অনেকটাই বঞ্চিত। কিন্তু তবুও আমরা শত সমস্যার পরও ভালো কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা এখনো ধরে রেখেছি। বর্তমানে কক্ষ সংকট আমাদের চলার পথের একটি বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতি দ্রুত কক্ষ সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি আর্কষণ করছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল জলিল বলেন, ঘোষগ্রাম কফিলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিদ্যালয়ের সমস্যা চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে। সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা করছি। ইতিমধ্যে ওই বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন বরাদ্দ হয়েছে। আশা করছি দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম বলেন, বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের সহায়তায় উপজেলার অধিকাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আধুনিক মানসম্মত ও আইসিটি সুবিধাযুক্ত চারতলা ভবন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অনেকগুলোর নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। আর কিছু ভবনের কাজ চলমান। তারই ধারাবাহিকতায় দ্রুত ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও একটি আধুনিক মানসম্মত ও আইসিটি সুবিধাযুক্ত একটি ভবন নির্মাণ করা হবে।