পাল্টে গেছে খুলনা শহরের চিরচেনা দৃশ্যপট

প্রকাশিত: ৬:২৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৭, ২০২০

আতিয়ার রহমান,খুলনা ; খুলনা নগরীর বড় ছোট রাস্তাঘাট এখন ফাঁকা, রিকশা বা গাড়ির দেখা নেই। দু’একটি রিক্সা বাইরে বের হলেও তা যাত্রীশূন্য। খুব প্রয়োজন না হলে মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না।

মুদির দোকান আর ফার্মেসী ছাড়া বাজারের কোন দোকানই খোলা নেই। মাঝে মাঝে হুইসেল বা সাইরেন বাজিয়ে পুলিশ প্রশাসনের গাড়ি যাওয়ার শব্দ ছাড়া কোন আওয়াজ নেই। গত দু’দিন ধরেই এ অবস্থা চলছে। সন্ধ্যার পর পুরো শহর জুড়ে তৈরি হয় এক ভূতুড়ে পরিবেশ। শহরের এমন নিস্তব্ধ পরিবেশ করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতাই ফুটিয়ে তুলেছে।

বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের যে দাপট চলছে খুলনাতেও লেগেছে তার আঘাত। এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারন ছুটি ঘোষণা করেছে। জনসাধারণকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের নির্দেশনা মেনে সর্বস্তরের মানুষ ঘরে অবস্থান করছেন। জনসাধারণের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে সড়কে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা।

সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নগরীর খানজাহান আলী রোড, পুরাতন যশোর রোড, জিরো পয়েন্ট, ডাকাংলার মোড়, শিববাড়ি মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরেও রাস্তায় যানবাহনের কোন চিহ্ন চোখে পড়েনি। প্রতিটি সড়কই জনশূন্য।

সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টিতে মহানগরীর ময়লাপোতা, রূপসা স্ট্যান্ড রোড, ডিসি অফিস, ডাকবাংলো মোড়,নিরালা,গল্ল¬ামারী এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হ্যান্ড মাইকে মাইকিং করতে দেখা যায়।মুদি দোকানগুলোতেও নিদির্ষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে পন্য কেনাবেচার জন্য গোল চিহ্ন দিয়ে দিচ্ছে পুলিশ।

গনপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড একেবারেই ফাঁকা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবথেকে বড় এ বাস স্ট্যান্ড থেকে গত তিন দিনে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। পণ্য বোঝাই করে দু’ একটি ট্রাক শহরের মধ্যে এসেছে এবং শহরের বাইরে গেছে। করোনার ভয়ে সাধারণ মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না বললেই চলে।

এর উপর রাস্তায় পুলিশ আর মিলিটারির উপস্থিতি মানুষকে আরো ঘরমুখী করে তুলেছে। যার ফলে মানুষ একেবারেই ঘরবন্দি হয়ে রয়েছে। গতকাল শুক্রবার মসজিদেও মুসুল্লি¬দের উপস্থিতি ছিল কম। জুমার নামাজ শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মার শান্তি এবং করোনার গজব থেকে রক্ষা পেতে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। করোনার এমন আতঙ্কে পেট চালানো দায় হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের।

রিকশা চালক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘‘একদিনের রিকশা ভাড়া ১২০টাকা। রিকশা নষ্ট হলে ঠিক করার খরচ। এছাড়া দিনে একবার খাওয়া-দাওয়া করতে হয়। সব কিছু মিলিয়ে নিজের জন্য কম হলেও দিনে ২০০টাকা খরচ হয়। যদি ৫০০টাকাও আয় করতে না পারি তাহলে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যায়। কারণ রিকশা চালানোর টাকা দিয়ে পরিবারের খাবার, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা, বাচ্চার পড়ালেখার খরচ চালাতে হয়।

কিন্তু সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভাড়া হইছে মাত্র ১৬০টাকা। এই টাকা দিয়ে সংসার কিভাবে চালাবো সেই চিন্তাতেই ঘুম নাই। করোনাভাইরাস নিয়ে চিন্তা করার সময় কই?’’ এদিকে দিন আনে দিন খায় এমন মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লি¬ষ্টরা।