খুলনা কয়রার বেড়ি বাঁধ ভাঙন আতঙ্কে ঘর ছাড়ছে মানুষ

প্রকাশিত: ১১:৩৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ২, ২০২০

আতিয়ার রহমান,খুলনা : খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদের গাজীপাড়া বেড়ী বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতমধ্যে নদে বিলিন হয়েছে তীরবর্তী কয়েকটি পরিবারের বসতঘর। আতঙ্কে ভাঙন কবলিত বাঁধের নিকট থেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। গত এক সপ্তাহে গাজীপাড়া গ্রামের অর্ধশত পরিবার গ্রাম ছেড়েছে।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৩-১৪/২ নম্বর পোল্ডারের গাজীপাড়া বেড়ি বাঁধের ২০০ মিটার জায়গা জুড়ে ধ্বস নিয়েছে। বেড়ী বাঁধটির কোথাও কোথাও মাত্র এক থেকে দেড় হাত মাটি অবশিষ্ট রয়েছে। অধিকাংশ জায়গায় বাঁধের গোড়ায় মাটি না থাকায় সংকীর্ণ ও খাড়া হয়ে গেছে ভেড়ি বাঁধের রাস্তা। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, যে কোনো সময় জীর্ণশীর্ণ কঙ্কালসার বেড়ি বাঁধটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে প্ল¬াবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকা।

এ বিষয়ে কথা হয় ভাঙন কবলিত নদটির পাড়ের বাসিন্দাদের সাথে। গাজীপাড়া গ্রামের কামাল হোসেন তার বাড়ির উঠানে লাগানো মেহগনি গাছ কাটছিলেন। তিনি বলেন, ৬০-৭০বছরের পুরোনো বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে চলে যাচ্ছি।জায়গা-জমি যা ছিল সবই নদীতে গেছে। পানির দরে গাছপালা কেটে বিক্রি করছেন তাঁরা। বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র নিতে টাকা দরকার। এসব বিক্রি করা ছাড়া উপায় নেই। তার অভিযোগ, এমন বিপদে কেউ তাঁদের খোঁজও নেয়নি।’ তার একটু সামনে স্থানীয় বৃদ্ধ আঃ রাজ্জাক গাজী ও তার স্ত্রী মিলে ভাঙন কবলিত বাঁধের নিকট থেকে ঘরের চালা ও আসবাব সরিয়ে নিয়ে রাখছিলেন অন্যত্র। ঘরের সামনেটায় ছিল রান্নাঘর। খোলা জায়গায় মাটির চুলা । পাশে কিছু হাড়ি-পাতিল আর বালতি,মাছ ধরার জালটিও পড়ে আছে সেখানে। পার্শবর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকট কোথাও নতুন করে ঘর বাঁধবেন বলে জানালেন তারা।

ওই এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাজীপাড়া বেড়ী বাঁধটি গত কয়েক মাস আগেও সংষ্কার করা হয়েছিল। এর আগে আরও তিনবার একই স্থান থেকে বেড়ি বাঁধ ধ্বসে গিয়েছিল। প্রথমবার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর আর কখনোই শক্ত করে বাঁধ তৈরি হয়নি। ফলে বার বার ভাঙছে। বর্তমানে ধস নেয়া বিধ্বস্থ প্রায় ২০০ মিটার বেড়ী বাঁধ নিয়ে তাই এলাকার মানুষও আতঙ্কিত। স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ি বাঁধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো উদ্যোগ নেয় না।

বেড়ি বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হলেই তাদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধার অভিযোগ, ‘প্রতি বছর নদী ভাঙন শুরু হলেই ভাঙন রোধের নামে সরকারি অর্থ লুটপাটের তোড়জোড় শুরু হয়। যা শুধুই অপচয় মাত্র। তাই আমাদের দাবি, নদী ভাঙন রোধে টেকসই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’ উত্তর বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, শুষ্ক মৌসুমেই গাজীপাড়ায় ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নেয়া হলে এলাকার দরিদ্র মানুষ বসতবাড়ীসহ ফসলী জমি হারিয়ে আরো নিঃস্ব হয়ে পড়বে। তিনি দ্রুত বেড়ি বাঁধ সংস্কারের জন্য পাউবো’র উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন কর্মকর্তা মশিউল আবেদিন জানান, গাজীপাড়া বেড়ী বাঁধের স্পর্শকাতর স্থানটির সার্বিক পরিস্থিতি উল্লেখ পূর্বক প্রতিবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকাটিও সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন কবলিত ঝুঁকিপূর্ণ বেড়ি বাঁধ সংস্কার করা হবে।