নামের ভুলে কারাভোগের পর হাসিনার মুক্তি, ফিরে পেতে চান জীবনের ১৭ মাস

প্রকাশিত: ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ, মে ৫, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : নামের মিলের কারণে কারাগাভোগের পর হাসিনা বেগম কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। দীর্ঘ ১ বছর ৪ মাস ২০ দিন পর তিনি মুক্তি পেলেন। হাসিনা বেগম ফিরে পেতে চান জীবনের ১৭ মাস।
মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।

এর আগে দুপুরে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক শরীফুল আলম ভূঁঞার ভার্চুয়াল আদালত হাছিনা বেগমকে মুক্তির আদেশ দেন। এ দিন সকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ছবিযুক্ত বালামে প্রকৃত হাসিনা আক্তার ও হাসিনা বেগম একই আসামি নন বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।

ইয়াবা বহনের মাদক মামলায় দণ্ডিত হাসিনা আক্তারের বদলে টেকনাফ থানা পুলিশ ৪০ বছর বয়সী হাসিনা বেগমকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার করেছিল। দুই নারীর স্বামীর নামই হামিদ হোসেন।

পরে টেকনাফ থানার পুলিশের প্রতিবেদন এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের রেজিস্ট্রার যাচাই করে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয় সাজা ভোগকারী নারী ‘প্রকৃত আসামি নন’।

এসব প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হলে মঙ্গলবার বিচারক ভুক্তভোগী নির্দোষ ওই নারীকে মুক্তির আদেশ দেন।

হাসিনা বেগমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, নামের আংশিক মিলে দীর্ঘ প্রায় এক বছর পাঁচ মাস ‘হাসিনা আক্তার’র সাজাভোগ করেছেন ‘হাসিনা বেগম’। কারাগারে হাসিনা বেগম বর্তমানে বেশ অসুস্থ। তিনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বিষয়টি আমি নজরে আনার পর আদালত টেকনাফ থানা ও কারা কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তাকে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন।

মুক্তির আদেশ দেয়ার পর বিকেলে কারাগার থেকে হাসিনা মুক্তি পান। যাদের ভুলে তিনি এই অন্যায় সাজাভোগ করেছেন, আমি তাদের শাস্তির জন্যও আদালতে আবেদন করবেন বলে জানান হাসিনার আইনজীবী।

কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর হাসিনা বেগম বলেন, টেকনাফ থানায় যখন আমাকে নিয়ে আসা হয়, তখনই আমি বারবার করে বলেছি আমি অপরাধী নই। কিন্তু উনারা (পুলিশ) আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। আমার কোনো কথায় উনারা বিশ্বাস করেনি। বিনা অপরাধে ১৭ মাস জেল খেটেছি। আমার সংসার ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার ছোট ছোট বাচ্চারা পথে বসেছে। আমাকে জেল থেকে মুক্ত করতে আমার বাড়িটাও বিক্রি করতে হয়েছে। আমি আমার সেই ১৭ মাস ফিরে পেতে চাই।

জানা যায়, মূল আসামির নাম হাসিনা আক্তার (২৬)। তার বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ থানার টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়ায়। ওই এলাকার ইসমাইল হাজি বাড়ির হামিদ হোসেনের স্ত্রী তিনি।

অন্যদিকে নামের ‘আংশিক মিলে’ ফেঁসে যাওয়া হাসিনা বেগমের (৪০) বাড়িও একই এলাকার হোসেন বর বাড়ি। তিনি হামিদ হোসেনের স্ত্রী। তবে অপরাধীর নামের সঙ্গে মিল থাকলেও বাবা-মায়ের নামের সঙ্গে অমিল রয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী থানাধীন মইজ্জারটেক পুলিশ চেকপোস্ট এলাকা থেকে ২ হাজার পিস ইয়াবাসহ হাসিনা আক্তার ও তার স্বামী হামিদ হোসেনকে আটক করে। পরে এই ঘটনায় কর্ণফুলী থানার তৎকালীন এসআই সালাউদ্দিন জাহেদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা ২৮(২)১৭, জি.আর মামলা নম্বর ৫৭/১৭ ও দায়রা মামলা ৩৬৩৭/১২ দায়ের কর হয়।

ওই মামলায় ৯ মাস জেল খাটার পর একই বছরের ২৭ নভেম্বর উচ্চ আদালতের আদেশে কারাগার থেকে ছাড়া পান। ২০১৯ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর ৫ম আদালতের বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী ওই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

সাজা হওয়ার পর ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর হাছিনা বেগমকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় টেকনাফ থানা পুলিশ। এরপর থেকে তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে রয়েছেন। সম্প্রতি বিষয়টি আদালতের নজরে নিয়ে আসার পর, এ বিষয়ে টেকনাফ থানা পুলিশকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়।

অনুসন্ধান করে তদন্ত প্রতিবেদনে টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. খোরশেদ আলম দাবি করেন, বর্তমানে সাজা পরোয়ানা মূলে কারাগারে থাকা হাসিনা বেগম পূর্বে গ্রেফতার হওয়া হাসিনা আক্তার এক নয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমান কারাগারে থাকা হাছিনা বেগমের স্বামী পালাতক থাকায় পূর্ণাঙ্গভাবে তদন্ত করা যায়নি। ওই এলাকায় হাসিনা আক্তার নামে কারও অস্তিত্ব নেই।