সরাইলে ইটভাটায় ফসলি জমির টপ সয়েল বিক্রির ধুম

প্রকাশিত: ৫:৩১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২১

সময় সংবাদ ডেস্কঃব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ফসলি জমির টপ সয়েলের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। এতে করে একদিকে জমির উর্বর শক্তি নষ্ট হচ্ছে, অপর দিকে পরিবেশের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিদিন ১০/১২টি ট্রাক্টর দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়ায় গ্রামের রাস্তা ধুলাতে সায়লাব হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে জমির মাটি কেটে ফেলার ফলে পাশের জমিগুলো উঁচু হয়ে যাচ্ছে। এতে করে ওইসব জমিতে সেচের পানি থাকেনা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল উপজেলার রাজাবাড়িয়াকান্দি এলাকায় গড়ে উঠেছে ৩/৪টি ইটভাটা। এ সব ইটভাটার মালিকরা কৃষকদের কাছ থেকে ফসলি জমির মাটি কিনে আনছেন।

ইটভাটায় ট্রাক্টর দিয়ে মাটি পরিবহনের জন্য সরকারি জলাশয় (লইস্কা বিল) ভরাট ও কৃষকের জমির উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা করা হচ্ছে।

উপজেলার রাজামারিয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মোঃ হারুনুর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, ইটভাটায় ট্রাক্টর দিয়ে মাটি পরিবহনের জন্য তার জমির উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা করেছেন প্রভাবশালীরা।

তিনি বলেন, আমার জমির উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা করেছে। আমি গরীব মানুষ। লোকবল নেই। প্রতিবাদ করলে হুমকি দেয়।

তিনি আরও বলেন, ১০/১২টি ট্রাক্টর সারাদিন চলাচলের কারণে এলাকা ধুলা-বালিতে সয়লাব হয়ে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, সারাদিন মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচলের কারণে জমিতে স্তুপাকারে পড়েছে ধুলা। ধান গাছের চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে মাটি কাটার ফলে জমির উর্বর শক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাটি কাটার ফলে মাঠের মাঝখানে কয়েকটি জমি নিচু হয়ে যাওয়ায় তাদের জমির সেচের পানি গিয়ে জমে ওইসব নিচু জমিতে। ফলে কৃষকরা বাধ্য হচ্ছে তাদের জমির মাটিও ইটভাটায় বিক্রি করতে।

স্থানীয় কৃষক মোঃ আজগর আলী বলেন, ফসলি জমির মাটি কাটা নিষেধ। সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থী কাজ। এটা জেনেও তিনি তার সাড়ে ১২ কানি জমির ( ১ কানিতে ৩০ শতক) মাটি ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তার প্রতি কানি জমি থেকে ৫ ফুট করে মাটি বিক্রি করেছেন।

ডিজিটাল বিকস্ নামে একটি ইটভাটার মালিক তার ইটভাটা থেকে প্রায় কোয়ার্টার কিলোমিটার দূরে ১২ কানি ফসলি জমির মাটি কিনেছেন। সেখানে প্রতি জমি থেকে ৫ ফুট গভীর করে মাটি কাটা হচ্ছে।

একটি ইটভাটার মালিক বাবুল মিয়া বলেন, কৃষকরাই আমাদের কাছে তাদের জমির মাটি বিক্রি করছেন। উঁচু জমিতে ফসল ভালো হয়না, পানি থাকেনা তাই তারা আমাদের কাছে তাদের জমির মাটি বিক্রি করছেন। মাটি কাটলে জমিতে ফসল ভালো হয়।

তিনি বলেন, আমরা সরকারি খাল নয়, ব্যক্তি মালিকানাধীন খালে বাঁধ দিয়েছি।

এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আরিফুল হক মৃদুল বলেন, ফসলি জমির মাটি কাটা সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থী কাজ। তবে স্বেচ্ছায় কেউ মাটি বিক্রি করলে কিছুই করার থাকেনা। ট্রাক্টরের ধুলায় ফসল নষ্ট হওয়ার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিব।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই কাগজপত্র না থাকায় দুটি ইটভাটাকে ৪ লাখ ৮ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।