ধানের উপজেলায় হঠাৎ চালের বাজার অস্থির

প্রকাশিত: ৪:০২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা ধান উৎপাদনের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই পরিচিত। এই উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে হঠাৎ করে চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে।

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি ৬ থেকে ৭ টাকা পযর্ন্ত বেড়েছে। এতে খুচরা বাজারে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। চালের মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন উপজেলার নিম্নআয়ের মানুষ।

লাগামহীন দাম বাড়লেও এখন পর্যন্ত বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোন কর্মকর্তার কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

মিল মালিকদের দাবি, এক শ্রেণীর অসাধু খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কারণেই চালের বাজার অস্থিতিশীল।

অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধান সংকট নেই, মিলারদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে চাল মজুদ রয়েছে।

সরেজমিনে উপজেলার পাঁচশিরা বাজার, কালাই পৌরবাজার, মাত্রাইহাট, পুনটহাট, মোসলিমঞ্জহাট, মোলামগাড়ীহাটে চালের খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে জানা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম লাগামহীন ভাবে বেড়ে গেছে। অথচ মাস দেড়েক আগেই উপজেলার কৃষকরা ফসলি জমি থেকে বোরো ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। আর ওই ধান ওঠার দেড় মাসের মধ্যে উপজেলায় দেখা দিয়েছে ধানের সংকট। এ অজুহাত দেখিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর (বুধবার) খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৪৭ টাকা দরে, বর্তমানে যা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়, কাটারি চাল ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫১ টাকায়, ২৮-জাতের ধানের চাল ৪১ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৭ টাকায়, ২৯-জাতের ধানের চাল ৩৯ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকায়।

এভাবে চালের দাম বাড়তে থাকায় নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষরা পড়েছেন চরম বিপাকে। আর খুচরা ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ করতে হচ্ছে অতিরিক্ত পুঁজি।

উপজেলার মাত্রাইহাটে চাল কিনতে আসা জাহাঙ্গীর আলম ও রবিউল ইসলাম জানান, সপ্তাহ খানেক আগেও ২৯-জাতের ধানের চাল কিনেছেন প্রতি কেজি ৩৯ টাকায়। কিন্তু সেই চালই এখন ৪৬ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। আর ২৮-জাতের ধানের চাল কিনেছেন প্রতি কেজি ৪১ টাকা, সেই চাল বর্তমান ৪৭ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। চালের দাম বাড়ায় তারা এখন মহাবিপাকে পড়েছেন। কাজেই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরদারির প্রয়োজন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে কালাই পৌরসভার ভ্যানচালক খালেক ও রমজান আলী বলেন, আমরা দিন আনি, দিন খাই। গত সপ্তাহ থেকে চালের দাম বৃদ্ধি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু করোনা কারণে আমাদের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছেনা। এভাবে চালের দাম বাড়তে থাকলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমাদের অনাহারে দিন কাটাতে হবে।

উপজেলার মোহাইল গ্রামের কৃষক মোর্শেদ ও খালেক জানান, গত ১০ দিনে আগে ধানের দাম বৃদ্ধি না পেলেও মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট তৈরি করে ধান মজুদ করে রেখে এখন বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে চালের দাম বৃদ্ধি করছে। এটা দুঃখজনক ঘটনা।

উপজেলার পাঁচশিরা বাজারের খুচরা ও পাইকারি চাল বিক্রেতা মেসার্স তালের চাউল ঘরের সত্বাধিকারী আবু তালেব সরদার ও মেসার্স ভাই বোন চাল ঘরের সত্বাধিকারী আ. হান্নান মন্ডল বলেন, আমরা বেশি মূল্যে চাল ক্রয় করছি বলেই বেশি মূল্যে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। ধান সংকটে ফেলে মাঝারি ও বড় মিলাররা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। বর্তমান তাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে চাল মজুদ রয়েছে। আমরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে যে দরে চাল ক্রয় করছি তা সামান্য লাভে বিক্রি করছি। এখানে আমাদের করার কিছুই নেই।

কালাই উপজেলার চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মো.আব্দুল বারী বলেন, ‘এই এলাকায় কোন ধরনের চালের দাম বৃদ্ধি পায়নি। আমরা মিলে ধান থেকেই চাল উৎপাদন করি। ধান ও চালের সংকট নেই। এলাকার এক শ্রেণী অসাধু খুচরা ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে চালের বাজার অস্থিতিশীল করেছে।’

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অ. দা.) মো. আব্দুল হান্নান বলেন, ‘উপজেলায় মাঝারি ও বড় মিলারদের কাছে অনেক ধান মজুদ রয়েছে। তাছাড়া এই অসময়ে চালের দাম কিছুটা বাড়ে। এছাড়া বেশ কিছু দিন থেকে বৈরি আবহাওয়ার কারণে মিলার, ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীদের চাল তৈরির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। তাই চালের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন পারভেজ বলেন, ‘জেলা প্রশাসক (ডিসি) স্যারের আদেশক্রমে প্রায় প্রতিদিনই নিয়মিত উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার মনিটরিং করা করা হচ্ছে। এরপরও কেউ যদি অবৈধ ভাবে ধান, চাল মজুদ রাখেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।