খাগড়াছড়িতে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলে অতিষ্ট হাজারো গ্রাহক!

প্রকাশিত: ৪:০৯ অপরাহ্ণ, জুন ২৭, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : মানিকছড়ি-লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার সাড়ে ছয় সহস্রাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক প্রতিনিয়ত ভুতুড়ে বিলের বোঝায় অতিষ্ট হয়ে পড়েছে! শত-সহস্র প্রতিবাদেও স্থায়ী সমাধা পাচ্ছে না গ্রাহকরা।

বরং ব্যবহারের চেয়েও হাজার রিডিং বিল পরিশোধ বাধ্যতামূলক ও মিটার পরিবর্তন করতে বাধ্যকরাসহ নানা হয়রানীর অভিযোগ এখানকার অনেক পুরানো ও নিত্যঘটনা।

বিদ্যুৎ অফিস ও গ্রাহক সূত্রে জানা গেছে, মানিকছড়ি আবাসিক বিদ্যুৎ অফিসের অধীনে মানিকছড়ি-লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৬ সহ¯্রাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে শুধু মানিকছড়িতে গ্রাহক রয়েছে ৬ হাজার,আর লক্ষ্মীছড়িতে প্রায় ৭ শত। বিদ্যুৎ অফিসের বিরুদ্ধে নানা পর্যায়ে গ্রাহকে হয়রানীর অভিযোগ নতুন নয়। এটি অনেক পুরানো ঘটনা! নতুন লাইন সংযোজন থেকে হয়রানীর যাত্রা শুরু!

যদিও প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ঘোষণাকে পুঁজি করে একশ্রেণির বিদ্যুৎ কর্মকর্তা ও নতুন লাইন সংযোজন ঠিকাদারা নতুন,নতুন জনপদে বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ করতে এসে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে দেদারসে খুঁটি/পিলার বাণিজ্য করে অনায়াসে! এর পর মিটার সংযোজন দিয়ে শুরু হয় গ্রাহক হয়রানীর অভিযাত্রা! নিয়মিত মিটার রিডিং না দেখে বিল করতে করতে এক পর্যায়ে গ্রাহকের ওপর হাজারো রিডিং ব্যবহারের বেশি বিল পরিশোধ করতে বাধ্য করা হয়। প্রতিবাদের মাত্রা বেড়ে গেল ওই গ্রাহককে মিটার পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হয়। এভাবে বছরের পর বছর বিদ্যুৎ গ্রাহক হয়রানীর চিত্র এখানকার পুরানো ঘটনা!

সর্বশেষ বৈশ্বিক মহামারীতে মানুষজন আয়-রোজগার বঞ্চিত হয়ে যখন গৃহবন্দি, ঠিক তখনি আবার বিদ্যুৎ গ্রাহকের ওপর ভুতুড়ে বিলের বোঝা! দুই উপজেলার অন্তত দুই সহ¯্রাধিক গ্রাহক অতিরিক্ত বিলের(ভুতুড়ে) চাপে নাভিশ্বাস! একশ,দুইশ ইউনিট নয়, এক/দুই হাজার ইউনিট বেশি বিল গ্রাহকদের ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে গ্রাহকদের ক্ষোভ বাড়তে থাকায় সম্প্রতি বিদ্যুৎ অফিসের উদ্যোগে জনপদে মাইকিং করে বিলের আপত্তি জানাতে বলা হয়েছে।

ফলে গত ১৫ দিনে শত শত অভিযোগ নিয়ে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ অফিসে গেলে তাদেরকে বলা হচ্ছে ‘আপাতত পরিশোধ করুণ,পরে মাসে মাসে সমন্বয় করা হবে’! এতে গ্রাহকরা আরো সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে।‘করোনা’ মহামারীর দুঃসময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের চরম ধসে নাভিশ্বাস জন-জীবনে আয়-রোজগার বন্ধ। খয়ে না খেয়ে মানুষজন দুর্বিসহ দিনাতিপাত করছে। এই অবস্থায় ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে বাধ্য করা ‘মরার ওপর খাড়ার গা’।

মানিকছড়ি বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. নাজমুল হাসান অভিযোগ করে বলেন, আমার বাড়ীর মিটারে ২৬.৫.২০তারিখ পর্যন্ত বিল করেছে ৫০৩৯ ইউনিট। অথচ বর্তমানে মিটারে রিডিং আছে ৩১৩৭ ইউনিট! দোকানের বিলেও ২৫০ ইউনিট বেশি রিডিং দেখানো হয়েছে। একাধিকবার অফিসে গিয়ে অভিযোগ করেও পরিত্রাণ পাইনি! বরং বলা হচ্ছে অভিযোগ আগ্রাবাদ পাঠানো হয়েছে। আসলে খতিয়ে দেখবে।

আপাতত বিল পরিশোধ করেন, পরে মাসে মাসে সমন্বয় করা হবে! এমন সান্ত¦না শুধু নাজমুলকে নয় সবাইকে দেয়া হচ্ছে! এটা যেন গড়ে হরি বল! গত ১৫ দিনে মানিকছড়ির হাজার হাজার গ্রাহক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তাদের আকুতি-মিনতি,অভিযোগ-অনুযোগ ভাইরাল হচ্ছে। এতে বেড়িয়ে আসছে বিদ্যুৎ অফিসের নানা জানা-অজানা অভিযোগের পাহাড়! যা বিবেকবান ও সচেতন মহল বিব্রত!

পূর্ব তিনটহরীর মো.শাহ আলম খা অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুতের বিল বিড়ম্বনায় মানিকছড়িবাসী বছরের পর বছর ভুতুড়ে বিল পরিশোধ করে আসছে! বিদ্যুৎ নিয়ে মানুষ(গ্রাহক) এখানে শান্তিতে নেই! আমার মিটারে বর্তমার রিডিং ৪৮৩৩ ইউনিট। আর গত ২৭.৫.২০ তারিখে বিলে রিডিং দেখিয়েছে ৫৪৬৫ ইউনিট! এভাবে এখানকার হাজার হাজার গ্রাহক হয়রানীর শিকার হচ্ছে!

মানিকছড়ি বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি রুপেন পাল এ প্রসঙ্গে বলেন, বৈশ্বিক মহামারী ‘করোনা’ প্রাদুর্ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধের উপক্রম। ২৪ ঘন্টায় দোকান-পাট খোলা থাকে বড়জোড় ৫/৬ ঘন্টা। কিন্তু বিল করা হয়েছে আগের চেয়ে ৩গুন বেশি! বাজারের শতশত ব্যবসায়ী সকলের বিলে একই অবস্থা (ভুতুরে বিল)! এটি অমানবিক ও অমার্জণীয় অপরাধ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকছড়ি বিদ্যুৎ অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত আবাসিক প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দীন সম্প্রতিকালের ভুতুড়ে বিলের অভিযোগ সর্ম্পকে বলেন.‘করোনা’র কারণে গত ৩ মাস মাঠে (সরজমিন) গিয়ে মিটার রিডিং আনা সম্ভব হয়নি। ফলে কম-বেশি ত্রুটি হয়েছে। যার কারণে বিদ্যুৎ অফিসের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে।

তাদেরকে সাধ্যানুযায়ী বিল পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। বেশি গড়মিল থাকলে পরবর্তী মাসে বিলের সাথে রিডিং সমন্বয় করে সমতায় আনা হবে। এছাড়া বিদ্যুৎ লাইন সংযোজনে আনিত অভিযোগের সাথে বিদ্যুৎ অফিস জড়িত থাকার সুযোগ নেই। কারণ নতুন লাইন সম্প্রসারণ ঠিকাদারদের কাজ। মিটার সংযোজন থেকে বিদ্যুৎ অফিস এবং গ্রাহকের মধ্যে সর্ম্পক। অহেতুক অন্যের অনিয়ম,দুর্নীতির দায়ে বিদ্যুৎ অফিসকে জড়িয়ে অভিযোগ করা ঠিক না।