গৌরীপুরে শহীদ হারুন দিবস পালিত

প্রকাশিত: ৩:৩৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২০

কমল সরকার,গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ১৯৬৯’র ২৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহের গৌরীপুরে গণঅভ্যুত্থানের মিছিলে তৎকালীন পুলিশের ছুঁড়া গুলিতে ঘটনাস্থলেই ছটফটিয়ে মৃত্যুবরণ করেন গৌরীপুর সরকারি কলেজের ছাত্র আজিজুল হক হারুন। সেদিন হারুনের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। হারুনের মত্যুতে নির্বাক হয়ে যান মিছিলে অংশগ্রহনকারী তার সহপাঠীরা। এরপর থেকে প্রতি বছর ২৭ জানুয়ারী স্থানীয়ভাবে এদিনটিকে শহীদ হারুন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে শহীদ হারুন স্মৃতি সংসদ ও স্থানীয় লোকজন।

হারুন স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে সোমবার (২৭ জানুয়ারী) যথাযোগ্য মর্যাদায় এ দিবসটি পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে কর্মসূচীর মধ্যে ছিল প্রভাত ফেরী, কালো ব্যাজ ধারন ও শহীদ হারুনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, সকাল ১০ টায় স্থানীয় শহীদ মিনারে আলোচনা সভা ও দোয়া-মাহফিল।

শহীদ হারুন স্মৃতি সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ আহমেদের সভাপতিত্বে ও উপজেলা আওযামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোফাজ্জল হোসেন খান, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডাঃ মতিউর রহমান, সাবেক এমপি রওশন আরা নজরুল, জেলা পরিষদ সদস্য গৌরীপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি মোঃ কাজিম উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডাঃ হেলাল উদ্দিন আহাম্মদ, সহ সভাপতি অধ্যক্ষ রহুল আমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ম. নুরুল ইসলাম, আব্দুল মুন্নাফ, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ হাফিজ উদ্দিন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোঃ আব্দুর রহিম, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মোঃ নাজিম উদ্দিন, সংগঠনের সিনিয়র সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওস্তাদ এম.এ হাই, বীর মুক্তিযোদ্ধা রহিমুদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, গৌরীপুর সাংবাদিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি সাবেক ভিপি বেগ ফারুক আহাম্মদ, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাবেয়া ইসলাম ডলি, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন জনি, পৌর কাউন্সিলর মোঃ আব্দুল কাদির, উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ মিলন, গৌরীপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি মাহবুবুর রহমান শাহীন, সরকার শুদ্ধ সংগীতায়নের পরিচালক ওস্তাদ আব্দুল মালেক প্রমুখ।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৯৬৯ সনে ২৭ জানুয়ারি সারাদেশের ন্যায় প্রতিদিনের মত গৌরীপুর মহাবিদ্যালয়, আর.কে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের গোবিন্দ বাড়ীর সামনে আসা মাত্রই তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওইদিন গৌরীপুর রেলষ্টেশন এলাকায় জড়ো হয়ে হরতালের ডাক দিয়ে শহরে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি বর্তমান হারুন পার্ক এলাকায় আসা মাত্রই পুলিশ ও আনসাররা অতর্কিতে টিয়ার গ্যাস এবং গুলি ছুঁড়ে হামলা চালায়। এসময় পুলিশের ছুঁড়া গুলি মিছিলে অংশগ্রহনকারী গৌরীপুর মহাবিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের ছাত্র আজিজুল হক হারুনের গলায় এসে বিদ্ধ হয়। এতে হারুনের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফটিয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি।

শহীদ হারুন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের ছামারুল্লাহ গ্রামের মৃত মিয়া বক্স সরকারের ছেলে। মৃত্যুর পর তাকে নান্দাইল-আঠারবাড়ি সড়কের পাশে সমাহিত করা হয়। উল্লেখ্য অনুরূপ ঘটনায় ২০ জানুয়ারি রাজধানীতে শহীদ হন আসাদ ও নবকুমার ইনস্টিটিউটের ৯ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মতিউর রহমান এবং ২৪ জানুয়ারি ময়মনসিংহ শহরে শহীদ হন আলমগীর মনসুর মিন্টু।

প্রতিবছর গৌরীপুরে ২৭ জানুয়ারি শহীদ হারুণ দিবস বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে পালিত হয়ে আসলেও হারুনের পরিবারের খবর কেউ রাখেনা। যে স্থানটিতে হারুন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়েছিলেন সে এলাকায় তার নামে স্থাপন করা হয় শহীদ হারুন পার্ক। কিন্তু সেটি আজ বিলীনের পথে। হারুনের মৃত্যুর প্রায় ৪২ বছর পর গৌরীপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভি.পি বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ফজলুল হকের আবেদনের প্রেক্ষিতে সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম ডাঃ ক্যাপ্টেন (অবঃ) মুজিবুর রহমান ফকিরের উদ্যোগে শহীদ হারুন পার্ক ময়দানে স্থাপন করা শহীদ হারন স্মৃতিস্তম্ভ।