সিলেটের সঙ্গে ১৫ ঘণ্টা পর সারাদেশের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

প্রকাশিত: ৩:০৯ পূর্বাহ্ণ, মে ২১, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : দূর্ঘটনায় বন্ধ থাকার প্রায় ‘১৫ ঘণ্টা’ পর রেল পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে। ট্রেন দুর্ঘটনার জেরে সিলেটের সাথে ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। চরম ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা। এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া বনে একটি আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ট্রেনের দু’টি কামরা লাইনচ্যুত হয়ে যায়। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি সিলেটের উদ্দেশ্য যাচ্ছিল। বনের ভিতর রেল লাইনে পরে থাকা গাছের সাথে সংঘর্ষে ট্রেনটি দূর্ঘটনার কবলে পরে। ইঞ্জিনের পছনে ছিল খাবারের কামরা ও আরেকটি কামরায় যাত্রীরা। পূর্বের স্টেশনে যাত্রীরা নেমে যাওয়ায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।শনিবার ভোর থেকেই এই দুর্ঘটনার জেরে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। চরম ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা। বগিগুলোকে লাইন থেকে সরিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছিল। উদ্ধার তৎপরতায় কাজ করেছেন রেলের কর্মীরা। অবশেষে শনিবার বিকাল নাগাদ সবক’টি বগি লাইন থেকে সরানো সম্ভব হয়েছে। ট্রেন চলাচলও পুরোপুরি স্বাভাবিক।

এর আগে শনিবার (২০ মে) ভোর ৪ টা ৫০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে লাইনচ্যুত হয়। এর ফলে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনায় কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন ও কমলগঞ্জে কিছু যাত্রী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক আবুল কাশেম বলেন, ‘লাউয়াছড়া উদ্যানের ভেতরের আঁকাবাঁকা রেললাইন দিয়ে ট্রেন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে ট্রেনের ২০ গজ সামনে একটি বড় গাছ ভেঙে পড়ে। আমি দ্রুত ইমার্জেন্সি ব্রেক চাপি। পরে ট্রেন গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে থামে। এতে ট্রেনের ইঞ্জিন ও দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়।’

শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার উদয় কুশল সিংহ বলেন, ‘শনিবার ভোর ৪ টা ৩৫ মিনিটের দিকে শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে সিলেটগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যায়।’

কুলাউড়া ও আখাউড়া থেকে উদ্ধারকারী দুটি রিলিফ ইঞ্জিন এসে দূর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটির উদ্ধার তৎপরতা চালায়। এদিকে সিলেটগামী পারাবতের বগিগুলো শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনে রেখে ইঞ্জিন ঘটনাস্থল থেকে বাকি বগিগুলো উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন নিয়ে আসে।

লাউয়াছড়া বনে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের এই দুর্ঘটনার জন্য শ্রীমঙ্গল স্টেশন কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন উক্ত ট্রেনের কয়েকজন যাত্রীরা। যাত্রীরা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ‘দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হাল্কা বৃষ্টি শুরু হয় দিবাগত রাত সাড়ে ৩ টা থেকে, কিন্তু শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে গাড়ি ছাড়ে ৪ টা ৩৫ মিনিটের দিকে। যেহেতু লাউয়াছড়া একটি জাতীয় উদ্যান, সেহেতু স্টেশন কর্তৃপক্ষ আগে এই বনের ভেতরের লাইনগুলোর খবরাখবর নিয়ে ট্রেন ছাড়া উচিত ছিল। যেহেতু এটি দূর্ঘটনা কবল এলাকা।’

এদিকে লাউয়াছড়ায় ট্রেন দূর্ঘটনার জন্য সিলেট থেকে ঢাকাগামী কালনী ও জয়ন্তীকা এক্সপ্রেসের যাত্রা বাতিল করা হয়। এবং শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে সিলেটগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন সিলেট যেতে না পেরে শ্রীমঙ্গলে অবস্থান করে। এসময় সিলেট ও কুলাউড়া অভিমূখী যাত্রীরা বিকল্প উপায়ে তাঁদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছান।

কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. রুমান আহমদ জানান, ‘যাত্রা বাতিল হওয়া ৪ ট্রেনের টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে যেতে যাত্রীদের ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। রেলওয়ের ঢাকাগামী ও সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস এবং জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের ৪টি যাত্রা বাতিল করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে ট্রেন ২টি ঢাকায় যাওয়া ও আসা মিলিয়ে ২ বার করে মোট ৪ বারের যাত্রা বাতিল হলো। শ্রীমঙ্গল থেকে পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার পথে চলাচল করবে।’

শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার এসআই মীর সাব্বির বলেন, ‘ট্রেনে আমাদের পুলিশ স্কট রয়েছে। এসআই ফখরুল উনি তার টিমসহ ফায়ার সার্ভিস ছিল, সবাই মিলে যাত্রীদেরকে নিরাপদ স্থানে যেতে সহযোগিতা করেছি। কোন হতাহত দেখিনি। যাত্রীদের হাল্কা জখম থাকতে পারে, তবে গুরুত্বপূর্ণ জখমের কোন যাত্রী আমরা দেখিনি। দুই বগিতে আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ জন যাত্রী ছিল। বাকী বগিগুলো দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল।’

বাংলাদেশ রেলওয়েও কুলাউড়া স্টেশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান বলেন, ‘সাড়ে ৪ টা থেকে ৫ টার ভিতর খবর পেয়েছি, আমরা কুলাউড়া থেকে নিজে ঘটনাস্থলে আসছি। আমরা সাড়ে ছয়টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে। আমরা আশাকরছি তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টার ভিতর ট্রেন চলা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আজ ভোরে প্রচন্ড ঝড় হইছে, ঝড়ে গাছ পড়ে ইঞ্জিনের সাথে ধাক্কা খেয়ে এই দূর্ঘটনা ঘটছে।’

এদিকে দূর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শহীদুল হক মুন্সি। তিনি বলেন, ‘তাঁর পুরো টিম সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি দ্রুতই উদ্ধার কাজ শেষ করতে পারবো।’