পিতার লাশ বাড়িতে রেখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ছেলের

প্রকাশিত: ৭:০৯ অপরাহ্ণ, মে ১, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : শনিবার সন্ধ্যায় কর্মস্থল বান্দবানে স্ট্রোক জনিত কারণে মারা যান ইব্রাহিম সরদার (৪৮)। রবিবার ভোরে তার মরদেহ পৌঁছে পটুয়াখালীর দশমিনার নেহালগঞ্জ গ্রামের বাড়িতে। শোকার্ত পরিবার ও স্বজনরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন জানাজা ও দাফন কাফনের।

এদিকে মৃত পিতা ইব্রাহিম সরদারের মরদেহ বাড়িতে রেখে ছেলে মো. রাকিব বুক ফাটা আর্তনাদ নিয়ে রবিবার সকালে শুরু হওয়া ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন।

রাকিবের পরীক্ষা কেন্দ্র পড়েছে উপজেলা সদরের দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সকাল ১০টার আগে অশ্রু সজল চোখে ওই কেন্দ্রে যায় সে। সহপাঠী ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সহযোগিতায় প্রথম দিনের বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে রাকিব।

জানা যায়, রাকিব উপজেলার নেহালগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে চলতি সালের এসএসসি পরিক্ষার্থী।

রাকিবের পিতা সদ্য প্রয়াত ইব্রাহীম সরদার (৪৮) বান্দরবান জেলায় ক্ষুদ্রব্যবসা করতেন।

এলাকাবাসী ও রাকিবের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় বান্দরবানের বাসায় আকস্মিক স্ট্রোকজনিত কারণে মারা যান ইব্রাহিম সরদার। তার হঠাৎ এমন চলে যাওয়া কোনোভাবেই মানতে পারছেন না স্বজনরা।

জানা যায় রবিবার সকালে বান্দরবান থেকে তার মরদেহ দশমিনার নেহালগঞ্জ গ্রামের নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। এমন অবস্থায় রাকিব তার এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরীক্ষা দিতে যায়। সেখানে রবিবার পরীক্ষা চলাকালে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে।কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাকিব বলেন বাবা আর নেই! বাবা আর কখনই আমাকে আদর করে ডাকবে না! এটা আমি মানতে পারছি না! বাবার স্বপ্ন ছিল আমি অনেক বড় হব। তাই আমি পরীক্ষা দিতে এসেছি , কিন্তু বাবার এভাবে চলে যাওয়া আমাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে। আমি সহ্য করতে পারছিনা।

শিক্ষকরা জানান, সে মানবিক বিভাগের মেধাবী ছাত্র। পড়াশোনায় ভীষণ মনযোগী।

কেন্দ্র সচিব মো. সালাউদ্দিন সৈকত বলেন, বাবার লাশ বাড়িতে রেখে মনে কষ্ট চেপে সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। আমি তার প্রতি সমবেদনা জানাই। আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা দিন। সে অনেক বড় হবে এমন প্রত্যাশা তার।

রাকিবের মামা ইমাম হোসেন জানান, রাকিবকে দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানোর জন্য আমি সকালে নিয়ে আসি। বাড়িতে রাকিবের বাবার লাশ অপেক্ষা করছে রাকিবের জন্য। আসর নামাজের পরে নেহালগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজার পর দাফন হবে বলেও জানান তিনি।