অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে ঝুঁকিতে পারাপার

প্রকাশিত: ১১:০৩ অপরাহ্ণ, জুন ৯, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা বাজারের রেল ক্রসিং যেন মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে না আছে কোন লাইনম্যান না আছে দুই পাশে আটকানোর কোন ব্যবস্থা। এমনকি অতি প্রাচীন এই রেল স্টেশনে কোন ষ্টেশন মাস্টার নেই।
অথচ সাপ্তাহিক হাটের দিন কিংবা বাজারের দিন এই ক্রসিংয়ের উপর ছোটখাটো যানজট লেগেই থাকে। যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাশেই গরু-ছাগলের হাট থাকায় ট্রাক, রিকশাসহ যানবাহনের দীর্ঘ সারি অথচ দৌলতদিয়া ঘাট থেকে তখন ট্রেন গোয়ালন্দের দিকে আসছে। একজন রেলওয়ে পুলিশকে দেখা গেল দৌঁড়ে এসে সেখানে দাঁড়াতে। দুই পাশে আটকানোর ব্যবস্থা না থাকায় যানবাহনগুলোকে কোন রকমে সরাতে না সরাতেই হুইসেল দিয়ে ট্রেন চলে এলো। অনেকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে, কেউ ইয়ার ফোনে গান শুনতে শুনতে অরক্ষিত রেল ক্রসিং পার হচ্ছে।

কয়েক মাস আগেও মানসিক ভারসাম্যহীন একজন রেল ক্রসিংয়ে মারা যায়। তারপরও যেন কিছুতেই থামছে না ঝুঁকি নিয়ে পারাপারের দৃশ্য। গোয়ালন্দ বাজারসহ রেলগেট এলাকায় মহাসড়কেও এই লেভেল ক্রসিং দিয়ে এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ, ছোট-বড় যানবাহন।

গোয়ালন্দ বাজার একটি ব্যস্ততম বাজার প্রায় এক লক্ষ ১২ হাজার লোকের বসবাস এখানে। এই রাস্তা দিয়ে চর এলাকার হামিদ মেম্বার হাট, মকিমের মোর, ফকির পাড়াসহ বিস্তীর্ণ এলাকার লোকজন এই এলাকা দিয়েই আসে।

রেল ক্রসিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রেললাইনের দুই পাশে নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কিছু দোকানপাট। পাশে কলা বিক্রি করছেন খবির উদ্দিন।

তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে ক্রসিং বার নষ্ট হয়ে আছে। তাছাড়া ষ্টেশন মাষ্টার নেই। এই জায়গাটা বর্তমান খুব ঝুঁকিপূর্ণ। রেলওয়ে পুলিশ মাঝে মাঝে ট্রেন এলে এখানে এসে দাঁড়ান এবং সেটাও নিয়মিত না। আসলে এখানে যখন ট্রেন আসে আমরা নিজেরাও চিৎকার চেঁচামেচি করে বলি ট্রেন আসছে। এভাবেই চলছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

এছাড়াও গোয়ালন্দ বাজার রেল স্টেশন থেকে দৌলতদিয়া রেল ষ্টেশন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রেলপথে ছয়টি অবৈধ রেলক্রসিং রয়েছে। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

জানা গেছে, গোয়ালন্দ বাজার রেলগেট এলাকা, দৌলতদিয়া ইউপি হতে যদুফকির পাড়াগামী হেলিপোর্ট রেল ক্রসিং, সুনিপুন মিল অফিস সংলগ্ন রেল ক্রসিং, দৌলতদিয়া কিয়ামুদ্দিন পাড়া হতে গফুর মোল্লা পাড়াগামী রেলক্রসিং, দৌলতদিয়া মডেল হাই ষ্কুল সংলগ্ন রেলক্রসিং, দৌলতদিয়া সাইনবোর্ড থেকে হোসেন মন্ডল পাড়াগামী ছয়টি রেলক্রসিং রয়েছে। এই অবৈধ রেলক্রসিংয়ের পাঁচটিতেই নেই কোন নিরাপত্তা গেট। অবাধে চলাচল করছে পথচারীসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় যানবাহন। নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন চলাচলের সময় থাকে না কোন গেটম্যান।

ট্রেন চলাচলের সময় অবৈধ ছয়টি রেলক্রসিংয়ের মধ্যে একটিতে গেট থাকলেও সে সময়ে পাওয়া যায়নি গেটম্যানকে। ছয়টি ঝুঁকিপূর্ণ রেল ক্রসিংয়ের মধ্যে গোয়ালন্দ বাজারের প্রধান সড়ক রেলগেটসহ চারটি রেল ক্রসিংয়ের পাশে রয়েছে তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ দুটি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি কলেজ। আর এ প্রতিষ্ঠাগুলোতে তিন হাজারের মত কোমলমতি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।

স্থানীয়রা জানান, এটি শহরের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও রেল ক্রসিং। এখান দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ফকির পাড়াসহ অন্যান্য এলাকায় যাতায়াত করে। পাশাপাশি এসব এলাকা থেকে কাজ শেষে প্রতিদিন তারা আবার নিজ বাড়িতে ফেরেন এ রেল ক্রসিং পার হয়ে। কিন্তু এ রেল ক্রসিংয়ে নেই কোন গেটম্যান বা সিগন্যাল বার। এক সময় বাঁশ দিয়ে দুই পাশ আটকে দিতাম আমরা। কিন্তু এখন সেই বাঁশ ভেঙ্গে যাওয়ায় ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ এ ক্রসিং পার হতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিতে হয় আমাদের।

রেলওয়ে সূত্র অনুযায়ী সারাদেশে রেলপথে মোট ক্রসিং আছে দুই হাজার ৮৫৬টি। এর মধ্যে এক হাজার ৩৬১টিরই অনুমোদন নেই। আবার এক হাজার ৪৯৫টি বৈধ ক্রসিংয়ের মধ্যে ৬৩২টি ক্রসিংয়েই গেটম্যান নেই।

এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইন-চার্জ মফিজুল হক (এসআই) বলেন, এখানে দীর্ঘদিন ধরে কোন গেটম্যান নেই এবং দুই পাশের যে বাঁশের গেট সেটাও নষ্ট। এটা একটা জনাকীর্ণ এলাকা যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। মাঝে মাঝে আমাদের রেলওয়ে পুলিশ সেখানে যায় তাছাড়া ওখানে অবস্থানরত দোকানদের বলে রাখা হয়েছে। আমরা বার বার দৌলতদিয়া এবং পাচুরিয়া রেলস্টেশন মাস্টারের সঙ্গে কথা বলেও কোন সুরাহা করতে পারিনি।

দৌলতদিয়া রেল স্টেশন মাষ্টার আব্দুল জলিল বলেন, গোয়ালন্দ ঘাট রেল স্টেশনে যে স্টেশন মাষ্টার দেওয়া হয়েছিল তিনি পাচুরিয়া রেল স্টেশনে কর্মরত আছেন। তাছাড়া এখানে যিনি দায়িত্ব পালন করতেন তিনি গত এক বছরের বেশি সময় ধরে রিটায়ার্ড করেছেন। আমি গত এক বছর ধরে পাকশিতে যোগাযোগ করছি কিন্তু লোকবল কম থাকায় এখনো এখানে কোন লোক দেওয়া হয়নি। এ রকম ব্যস্ত জায়গায় গেটম্যান না থাকা সত্যি ঝুঁকিপূর্ণ।