বৃষ্টির পানিতে ভাসছে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর

প্রকাশিত: ১১:৫৩ অপরাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২১
বৃষ্টির পানিতে ভাসছে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর

নিজস্ব প্রতিবেদক : জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ও দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে ভেস্তে যেতে বসেছে আশ্রয়হীনদের জন্য দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহার ‘আশ্রয়ন প্রকল্প’। মাত্র দু-তিনদিনের বৃষ্টিতেই উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের করবাড়ি গ্রামের আশ্রয়ন প্রকল্পের ২১টি ঘর পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের বৃহৎ এ প্রকল্পের উপকারভোগীরা স্বপ্নের ঘর পেয়ে এখন ভাসছেন দুঃস্বপ্নের বন্যায়। প্রকল্পের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনের খামখেয়ালীপনা ও একটি প্রভাবশালী দালালচক্রের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সারাদেশে সমালোচনা শুরু হলে শনিবার (২৬ জুন) প্লাবিত প্রকল্প পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (উপসচিব) মো. কবির উদ্দিন। অসহায় আশ্রয়হীনদের তরিঘরি করে পার্শ্ববর্তী একটি মাদরাসায় কোনোরকম থাকতে দেওয়া হয়েছে। উপকারভোগী বিধবা সুফিয়া বেওয়া দুঃখ করে জানান, বড় সক (শখ) কইরা আইছিলাম এহানে (এখানে), এহন পানিতে ডুইবা হাবুডুবু খাইতাছি। সরকার আমগোর ভালোর জন্যে ঘর দিল, আর এহানকার মানুষ আমগোরে পানি খাওয়ায়তাছে।’

রাশেদ মেকারের স্ত্রী আফরোজা জানান, ‘বৃষ্টিতেই ঘরে-বাইরে পানি। বান আইনে কী অবো, আল্লায় জানে। চুইলা ডুইব্যা গ্যাছে পাঁকসাক (রান্না) করমু কীবায় আর খামু কী’! শুধু সুফিয়া বা আফরোজা নয়, এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন ২১টি অসহায় পরিবারের ৭০-৭৫ জন সদস্য। কবে তাঁদের এ দুর্দশা কাটবে জানে না তাঁরা।

দৈনিক সময় সংবাদ

বৃষ্টির পানিতে ভাসছে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে সরিষাবাড়ী উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের করবাড়ি গ্রামের ছাইতানি বিলের মধ্যে আশ্রয়ন প্রকল্প সম্প্রতি বাস্তবায়িত হয়। গত ২৪ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এটি (সারাদেশের সাথে) উদ্বোধন করেন। এ প্রকল্পে ঘর আছে ২১টি। এসব ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গত দুই-তিনদিনের বৃষ্টিতে পুরো প্রকল্প এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। নীচু স্থানে প্রকল্পের স্থান নির্বাচন করায় এ দূরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানিতে নলকূপ, টয়লেট, রান্নাঘর এমনকি রান্নার চুলাসহ আসবাবপত্রও ডুবে গেছে। বারান্দা-ঘরে আধ হাটু ও আঙিনায় হাটু পর্যন্ত পানি উঠায় উপকারভোগীরা বাধ্য হয়ে অন্যত্র চলে যান।
স্থানীয়রা বলছেন, বিলের মাঝে নীচুস্থানে ঘর উঠানো অপরিকল্পিত ও সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। কাজের ক্ষেত্রেও নিম্নমানের ইট, বালু, সিমেন্ট ব্যবহার করায় উপকারভোগীরা ঘরে উঠতে না উঠতেই ফাঁটল ধরেছে কয়েকটি ঘরে। ফলে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন প্রকল্পের বাসিন্দারা।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি শিহাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ উপজেলার অধিকাংশ খাসজমি নীচু। প্রকল্প কমিটি উপযুক্ত খাস জমি পাওয়ায় জায়গাটি নির্বাচন করেছে। কিন্তু টানা ভারি বর্ষণ হওয়ায় এখানে পানি জমে গেছে। পানিবন্দি লোকদের পাশের একটি মাদরাসায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং তাদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান।

দৈনিক সময় সংবাদ

বৃষ্টির পানিতে ভাসছে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর


উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার ও প্রকল্পের সদস্য সচিব হুমায়ুন কবীর জানান, আশ্রয়ন প্রকল্পে প্লাবিত হওয়ার সংবাদে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক কবির উদ্দিন স্যার এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ওই এলাকা থেকে কিছু দূরে উঁচুস্থানে নতুন করে ঘর নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে নির্মিত ঘরগুলো কী হবে এবং নতুন অর্থায়ন কীভাবে সে ব্যাপারে সদুত্তর দিতে পারেননি।