ঝুপড়ি ঘরে বৃদ্ধ দম্পত্তির মানবেতর জীবন

প্রকাশিত: ১:৩৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১

সময় সংবাদ ডেস্ক : পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের বিখ্যাত আসমানি কবিতা যেন ফুটে উঠেছে এক বৃদ্ধ দম্পত্তির জীবনে। ভাঙ্গা বেড়ায় ঝুপড়ি ঘরে চলছে মানবেতর বসবাস। অভাব অনটন আর এক বুক জ্বালায় ঝেঁকে বসেছে পরিবারটিকে।

রাতে ছেড়া কাঁথা আর শাড়ী মুড়ায়েই ঘুমাতে হয় তাদের। অসহায় এ বৃদ্ধ দম্পতি হচ্ছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের গড়াগছ গ্রামের কফিলউদ্দীন (৭০) ও স্ত্রী সুফিয়া বেগম। কনকনে শীত আর ঠান্ডা বাতাস থেকে মুক্তি পেতে শাড়ির আঁচল আর ছেড়া কাঁথাই যেন তাদের শান্তির পরশ। সামনে বর্ষায় তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু নিয়ে চিন্তায় ভুগছে ওই দম্পতি। এ যেন অন্য এক মানবেতর জীবন যাপন কফিল উদ্দিনের।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা বেড়ার টিনের ছাপড়ার ছোট্ট একটি ঘর। ঘরের চালে কোথাও কোথাও ছিদ্র। শীতের কুয়াশার শিশির আর বর্ষার বৃষ্টি পড়ার উপক্রম লক্ষ্য করা যায়। পাশে অ-স্বাস্থ্যকর টয়লেট। ঘরের বারান্দা বসে থাকতে দেখা যায় এ অসহায় দম্পতিকে। পড়নে হালকা পাতলা কাপড়ে ঠান্ডায় সারা শরীর থরথর করে কাঁপছিলেন তারা। এ ঘরের সামান্য দূরে একমাত্র ছেলে শরিফুলের ঘর। পেশায় সে দিনমজুর। সংসারের অভাব অনটনের কারনে একমাত্র সন্তানকে পড়ালেখা করতে পারেননি কফিল উদ্দিন। ছেলে বিয়ে করে দুই সন্তানের বাবা হয়েছে সেও। দিনমুজুর হিসেবে অন্যের বাড়িতে কাজ করে অতি কষ্টে শরিফুলকে চালিয়ে নিতে হচ্ছে পরিবার।

ছেলে শরিফুল জানান, এনজিও থেকে ঋন নিয়ে ৭/৮ বছর আগে একটি ঘরটি তৈরি করেছি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে মা-বাবা, স্ত্রী সন্তানসহ ৬ সদস্যের পরিবার চালাতে হয়। যেখানে খাবার টাকাই জুটেনা সেখানে ঘর মেরামত করার মত কোন টাকা পয়সা পাবো কোথায়। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। বাবা শীত সহ্য করতে না পেরে রাতে ছেড়া কাঁথা শাড়ির আঁচলে ঘুমায়। রাতে শীতের যন্ত্রনায় মা-বাবার ঘুম হয় না। সরকার আমার বাবাকে একটি ঘর দিলে আমি চির কৃতজ্ঞ থাকব।

কফিল উদ্দিন জানান, শুনেছি মমতাময়ী শেখ হাসিনা সরকার ভুমিহীনদের ঘর করে দিচ্ছে। কিন্তু সেই ঘর জুটেনি আমার ভাগ্যে। আমার কোন সহায় সম্পত্তি নেই, মাত্র ৩ শতক জমির উপর পলিথিনে মোড়ানো কুঁড়ে ঘরে আছি। আর সন্তানের প্রতিদিনে রোজগারের টাকায় আমার ওষুধসহ সংসারের অন্যান্য খরচ চলে।

কফিল উদ্দিন কেঁদে কেঁদে বলেন, আমরা অনেক সময় না খেয়েও দিন কাটাই। কিন্তু কোন ব্যক্তিকে আমাদের কষ্টের কথা বুঝতে দেই না, আর বলেই বা কি লাভ। কোন ইউপি সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান আমাদের সহযোগিতা করে নাই। মুজুরি দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয় না বলেই হয়তো তারাও নজর দিচ্ছেন না।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তারেক হোসেন জানান, কফিল উদ্দিন সাহেবের বাড়িতে গিয়েছিলাম দেখেছি উনি একজন অসহায় মানুষ উনাকে সরকারি ভাবে ঘর নির্মান করে দেয়ার ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে বরাদ্দ আসলেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়া হবে বলে আশা করছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, আমরা তো এমন পরিবারই খুজে থাকি। যেখানেই এমন অসহায় লোক আছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে সরকারি ঘর নির্মান করে দিয়ে থাকি। কফিল উদ্দিনকে ঘর নির্মান করে দেয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।