কর্মসংস্থানের অভাব, শীতে জুবুথুবু চরাঞ্চলের মানুষ

প্রকাশিত: ১১:৩২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চলেছে। জানা নেই আদৌ রান্না হবে কি না। তরকারি তো দূরের কথা, এ বেলার দু’মুঠো চালও ঘরে নেই। দিনের আয়ে দিন চলে। কাজ না পেলে ধারদেনার বোঝা বাড়ে। তাই বাধ্য হয়ে কেউ দুবেলা কিংবা এক বেলা খেয়ে দিন কাটায়।

পরিবার-পরিজন নিয়ে এমন সংকট, দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলোর নিত্যদিনের সঙ্গী। কষ্টের দিনগুলো কিছুতেই শেষ হতে চায় না এদের।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সর্ব-দক্ষিণের ইউনিয়ন ঢালচরের মোমেনা বেগমের ঝুপড়ি ঘরে উত্তরা বাতাসের শীতল প্রবাহ। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। স্বামী নেই। থাকেন মেয়ের জামাইয়ের সঙ্গে। নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর পর শীত নিবারণের জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ থাকে না মোমেনার।

চরপাতিলার নাসিমা বেগমের নিচু ঘরে মাথার ওপরে থাকা টিনের চালা দিয়ে ক্রমাগত ঝরে শিশিরের ফোঁটা। আবার কুকরির চরের আবদুল মজিদের ঘরের সবগুলো কাঁথা একত্রিত করেও শীত নিবারণ করতে পারছেন না। এভাবেই সমুদ্র তীরবর্তী উপকূল চরাঞ্চল আর বেড়িবাঁধের হাজারো মানুষ তীব্র শীতে কাতর। কিছু মানুষের ঘুম শেষ হয় আজানের শব্দে। বাকি রাতটুকু তারা জেগে রয় স্নিগ্ধ রোদেলা সকালের অপেক্ষায়। দীর্ঘ কষ্টের রাতটার চেয়েও রোদে পিঠ এলিয়ে দেয়া সকালটাই যেন তাদের কাছে অনেক বেশি আরামদায়ক।

উপজেলার বকসীঘাটের খেয়া নৌকার মাঝি মো. জামাল। দিনভর তেঁতুলিয়ার বুকে খেয়া পারাপারে যাত্রীর অপেক্ষায় সময় কাটে তার। দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থেকে যে যাত্রীর দেখা মেলে তা পার করেই সংসার চলে। বকসীঘাটের ওপারে বাংলাবাজার।

বাংলাবাজার বেড়িবাঁধের ওপরে একটি দোকানের সামনে মানুষের আড্ডা চলছে। তাদের সেই আড্ডায় শামিল হতেই বেরিয়ে আসে আরও কিছু কষ্টের গল্প। কর্মহীন মানুষগুলো কেউ ছোট ব্যবসা করে, কেউ নৌকা চালিয়ে, কেউ মাছ ধরে, কেউ কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। শীত মৌসুমে এলাকার মানুষের কষ্টটা আরও বাড়ে। এক বেলা ভাত জোগাড়ের কষ্ট কতটা তীব্র এই এলাকার মানুষ তা হাড়ে হাড়ে টের পায়।

বেসরকারি এনজিও পরিবার উন্নয়ন সংস্থা (এফডিএ) সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, পরিবার উন্নয়ন সংস্থা (এফডিএ) কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে চরফ্যাশনের বিভিন্ন চরে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় তারা প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সহায়তা দিয়ে ৫০ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এছাড়া ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের আওতায় চরাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের দারিদ্র দূরীকরণে লক্ষ্যে ৬০ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাবো।

চরফ্যাশন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা জানান, চরাঞ্চলের মানুষের দারিদ্র দূরীকরণে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ভিজিডি প্রকল্প, ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প, গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং ঋণ দান কর্মসূচি রয়েছে। এছাড়া একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প গ্রামীণ প্রান্তিক মানুষের মধ্যে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে তুলছে। প্রতিটি এলাকায় এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এ কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।