ফেরদৌসী’র মৃত্যু নিয়ে রহস্য: পরিবারের অভিযোগ হত্যা! জনমনে প্রশ্ন, হত্যা না আত্মহত্যা? দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম প্রকাশিত: ১১:০৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২০ ফয়সাল আজম অপু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ফেরদৌসী হত্যা নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। জণমনে প্রশ্ন হত্যা না আত্মহত্যা?বাদী পক্ষ বলছে হত্যা করা হয়েছে। অপরদিকে, বিবাদীরা ও তাদের সমর্থকরা বলছে এটি আত্মহত্যা। পুলিশী ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। হত্যার ২৯ দিন পার হয়ে গেলেও এখনো কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি। বাদীর ভাষ্যমতে পুলিশ আসামীপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাকে হয়রানী করছে। তবে পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বাদীর ভাষ্য হলো থানায় মামলা না নেয়ায়, অবশেষে গত ১৬ আগস্ট বিজ্ঞ আদালতে মামলা করা হয়েছে। তবে এখনো কোন তদন্ত হয়নি। হত্যার শিকার ফেরদৌসী হলো শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী ও পার্শ্ববতী রানীনগর ঘুনটোলা গ্রামের শামসুদ্দিনের মেয়ে। গত ১৬ আগষ্ট বাদী সফিকুল ইসলামের স্বাক্ষরিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে মামলা সূত্রে জানা গেছে প্রায় ৭ বছর আগে শহিদুল ইসলামের সাথে ২লাখ টাকা দেনমোহরে ( উপহার স্বরুপ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা সহ) বিয়ে হয়। বিয়ের পর হতে বিভিন্ন সময় চাপ প্রয়োগ করে যৌতুক নিতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ আগষ্ট শুক্রবার শহিদুল তার স্ত্রী ফেরদৌসীকে তার পিতা শামসুদ্দিনের নিকট হতে ২০ হাজার টাকা যৌতুক আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। ২০ হাজার টাকা এনে না দেয়ার দায়ে ৭ আগস্ট ২০২০ খ্রি. তারিখ শুক্রবার গভীর রাতে শহিদুল ও তার ভাই ভাবীগন অমানুষিক নির্যাতনের পর শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। এ সময় তার লাশ একটি ঘরের মধ্যে গোপন রেখে ফেরদৌসীর পিতা- মাতাকে সংবাদ দেয় যে তার মেয়ে বাক্স থেকে ১লাখ ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে নিঁখোজ হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও খোঁজ পাওয়া যায়নি। ৮ আগস্ট সকালে ফেরদৌসীর মা জাহানারা বেগম জামাইয়ের বাড়ি গেলে তার সাথে মারমুখী আচরণ করে। সেদিন রাতে পৌনে ১২টার দিকে শহিদুলের আত্মীয় স্বজনরা তার শশুর শামুদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে টাকাসহ মেয়ে খুঁজে বের করার জন্য আবারো চাপ সৃষ্টি করে বাড়ি ফিরে আসে। ৯ আগষ্ট সকাল ৮ টার দিকে শহিদুলের বাড়ির পার্শে মনাকষা চকের নদীতে ফেরদৌসীর লাশ ভেসে থাকার সংবাদ পেয়ে ছুটে যায়। সকাল ১১টার দিকে পুলিশ আসলে লাশ শনাক্ত করা হয়। এ সময় শহিদুল ইসলামের আত্মীয় স্বজনরা তড়িঘড়ি করে ফেরদৌসীর পিতা- মাতার নিকট কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। পরের দিন লাশ ময়না তদন্ত শেষে শফিকুল ইসলাম শিবগঞ্জ থানায় একটি এজাহার জমা দিলেও মামলা গ্রহণ না করে ওসি আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। এমনকি পুলিশ কোন আসামীকে গ্রেফতারও করেনি। এদিকে ঘটনাটিকে নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হওয়ায় এলাকায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কারও কারও মতে আসামী পক্ষ প্রভাবশালী হওয়াই বাদী পক্ষকে হুমকীর মুখে রেখেছে। আরো একটি চক্র পাল্টা বাদী পক্ষকে সাজানো ঘটনা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে মামলার বাদী নিহত ফেরদৌসীর ভাই শফিকুল আলম জানান, লাশ উদ্ধারের দিন আমার পিতা মাতা যখন অজ্ঞান অবস্থায় ছিল তখন আসামী পক্ষের লোকজন সাদা কাগজে স্বাক্ষর/টিপসই নিয়ে এটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালাচ্ছে। তিনি আরো বলেন পুলিশ আসামীও ধরছে না। বরং আসামী পক্ষের লোকজন অঘটন ঘটানোর উদ্দেশ্যে প্রতিরাতে আমাদের বাড়ির আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছে। আমাদেরকে রাত জেগে পাহাড়া দিতে হচ্ছে।ফেরদৌসীর ভাবী ফাতিমা বেগম জানান একমাত্র যৌতুকের ২০ হাজার টাকার জন্য শহিদুল ও তার আত্মীয়রা আমার ননদ ফেরদৌসীকে পিটিয়ে হত্যা করে প্রথমে লাশ আমাদের বাড়িতে ফেলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে, নদীতে পাটের জাগের মধ্যে চাপা দেয়। যা পরের দিন সকালে ভেসে উঠলে জানতে পারি। আমরা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ফেরদৌসীর ফুফু সায়েদা বেগম গুধী জানান জামাই শহিদুল ইসলাম ও তার আত্মীয়স্বজনরা আমার ভাতিজিকে যৌতুকের টাকার জন্য পিটিয়ে ও শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে। আমরা এর বিচার চাই। তিনি আরো জানান আসামীপক্ষ ও তার অন্যান্য আত্মীয়স্বজনরা অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় আমাদেরকে ভীষন চাপের মুখে রাখছে। এমনকি পরোক্ষভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।পুলিশের উপস্থিতিতে ফেরদৌসীর লাশ নদী থেকে উঠানোর সহায়তাকারী উজির আলি ও বাবু বলেন, লাশ উঠিয়ে আমরা দেখেছি লাশের গায়ে আঘাতের ক্ষত চিন্হ ছিলো। তাতে প্রতীয়মান হয় ফেরদৌসীকে মেরে ফেলে পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল। পরে লাশ এলাকার উৎসুক জনতাকে দেখতে না দিয়ে প্যাকেটে ভরে নেয় পুলিশ। ফেরদৌসীর ভাই বাদী, শফিকুল আরও বলেন, আমরা পরিবার নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছি। নিহত ফেরদৌসীর মা জাহানার বেগম ও পিতা শামসুদ্দিন বলেন পুলিশ, আসামীপক্ষের লোকজন ও স্থানীয় কয়েকজন নেতা লাশ পানি থেকে তুলা ও ময়না তদন্তের জন্য সাদা কাগজে আমাদের টিপ সহি নিয়েছে। তখন আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলাম না। এখন শুনছি যে তারা বিভিন্ন ধরনের কথা বলছে। তবে আমরা আমাদের মেয়ে হত্যার বিচার চাই। নিরাপত্তা চাই। ফেরদৌসীর চাচাতো ভাই বোন, আত্মীয় স্বজন সহ এলাকার ৫০/৬০জন একই ধরনের মন্তব্য করে বলেন এটি হত্যা ঘটনা। এ ব্যাপারে ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই রিপনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ঘটনাস্থলে মেম্বার সহ অনেকেই ছিলো তাদের সামনেই স্বাক্ষর নেয়া হয়েছিলো। আদালতের নির্দেশে মামলা নেয়া হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলেই আদালত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে। এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামসুল আলম শাহ মুঠোফোনে বলেন, নিহত ফেরদৌসীর পিতার দেয়া সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনা স্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানোর পর ময়না তদন্ত হয়েছে। থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। প্রথমে মেয়ের পিতা লাশ ময়না তদন্তে না পাঠানোর জন্য একটি আবেদন করেছিলেন । কিন্তু আইনগত জটিলতার কারনে তার সে আবেদন রক্ষা করা যায়নি। অন্যদিকে নিহতের ভাই বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেছেন। আমরা সে মামলা রুজু করেছি। ময়না তদন্তের রির্পোট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। Share this:FacebookX Related posts: আত্রাইয়ে প্রকৃতি কন্যা সেজেছে গায়ে হলুদ বরণ সাজে হয় মাদক ছাড়তে হবে, নাহলে ঈশ্বরদীর মাটি ছাড়তে হবে-ফিরোজ কবীর নওগাঁ জেলা এ্যাডভোকেট বার এ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনে সভাপতি পিটু, সম্পাদক রব বিদেশি রিভলবার ও গুলিসহ যুবক গ্রেফতার বড়াইগ্রামে অসহায়দের মাঝে নগদ অর্থ ও সেনিটাইজার বিতরণ নওগাঁ পৌরসভা এলাকার কর্মহীন ৫ হাজার লোকের মধ্যে টাকা বিতরণ নওগাঁয় আরও ৮৮ জন করোনায় আক্রান্ত রাজশাহীতেও গণপিটুনি খেয়েছিলেন এএসপি সুমিত জয়পুরহাটে গাঁজাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী আটক আত্রাইয়ে পৃথক অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী ও ১০ জুয়াড়ি আটক বর্তমান স্বামীকে হত্যার অভিযোগে সাবেক স্বামী আটক অবশেষে শহীদ মিনার পেলো ঐতিহাসিক আটগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় SHARES Matched Content দেশের খবর বিষয়: জনমনে প্রশ্নপরিবারের অভিযোগ হত্যা!ফেরদৌসী'র মৃত্যু নিয়ে রহস্যহত্যা না আত্মহত্যা?