ময়মনসিংহ-১: নৌকার ঘাঁটি থেকে জয় নিয়ে ফিরতে চায় ট্রাক

প্রকাশিত: ১:০৩ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২৪
ময়মনসিংহ-১ ; নৌকার ঘাঁটি থেকে জয় নিয়ে ফিরতে চায় ট্রাক

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনক্ষণ। শেষ সময়ে নির্বাচনী পাড়া মহল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় সমানতালে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন স্ব স্ব প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। আর দিন যতই গড়াচ্ছে বাড়ছে পক্ষ-বিপক্ষের বাকযুদ্ধ, আলোচনা-সমালোচনা। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া পরিবেশ শান্ত রেখেই এগোচ্ছে ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনের নির্বাচনী পরিবেশ। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১আসনে চূড়ান্ত প্রার্থীর সংখ্যা ৭ জন। তবে মূল লড়াইয়ে থাকছেন ময়মনসিংহ-১ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী টানা ২ বারের এমপি জুয়েল আরেং ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুল হক সায়েম (ট্রাক)। প্রচার-প্রচারণায় দুই প্রার্থীই দিচ্ছেন হাড্ডাহাডি লড়াইয়ের আভাস।

নির্বাচন কমিশন ওয়েবসাইটের প্রাপ্ত তথ্য সূত্রে মূল দুই প্রতিদ্বন্ধি ছাড়াও ভোটের মাঠে দলীয় প্রতীকে লড়ছেন আরো ৫জন। তারা হলেন, জাতীয় পার্টি হতে লাঙ্গল প্রতীকের কাজল মহন্ত, ইসলামী ঐক্যজোট হতে মিনার প্রতীকে প্রার্থী মাও. মাহবুবুর রহমান, তৃণমূল বিএনপি হতে সোনালী আঁশ প্রতীকের মার্শেল মালেশ চিরান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ হতে হাতপাঞ্জা প্রতীকের মো. মোখলেছুর রহমান ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট হতে ছড়ি প্রতীকের একমাত্র নারী প্রার্থী রোকেয়া বেগম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।

নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ আসনে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ৭জন হলেও নির্বাচনী মূল প্রচারনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীসহ একই দলের একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। কিছুটা দ্বিধা বিভক্তিতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও দলীয় মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে বিভক্ত হয়ে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন কেউ গোপনে কেউ বা আবার প্রকাশ্যে। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর ওই আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনীত নৌকার প্রতীকের প্রার্থী ফুরফুরে মেজাজে চালাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। বিগত সময়ের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে ও অসমাপ্ত কাজ আর নতুন প্রতিশ্রুতিতে পূনরায় বিজয়ী করতে ভোটার দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জুয়েল আরেং এমপির বাবা প্রয়াত সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এড. প্রমোদ মানকিন এমপি থাকাবস্থায় ও ২০১৬ সালে বাবার মৃত্যুর পর ওই আসন থেকে উপ-নির্বাচনে অংশ গ্রহণে বিজয়ী হওয়ার পর একাধারে প্রতিনিধিত্ব করায় থাকছে উনার নিজস্ব একটি ভোট ব্যাংক। নৌকার বিরুদ্ধে ভোটের মাঠে ব্যক্তি ইমেজ তেমন কোন কাজে আসবে না।

এসব দিক বিবেচনায় তৃণমূলে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুল হক সায়েম (ট্রাক) যেন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতীতে দলীয় নেতাকর্মীসহ এলাকার মানুষের পাশে থাকা, মসজিদ মাদরাসা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদানসহ নানা সমীকরণে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে এগিয়ে রাখছে ভোটাররা। দল থেকে মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্রে সুযোগ থাকায় ভোটের হিসেব-নিকাশে স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তার প্রমাণের সুযোগ হয়েছে বলে মনে করছেন দল থেকে ছিটকে থাকা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও দল যেহেতু নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছে, আমরা কেন আমাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারব না। ভোটের মাধ্যমে পরিবর্তনে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে করে দলীয় মুল্যায়ন চায় দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। তৃণমূল ভোটারের চাওয়া আমাদের ঐক্যবদ্ধতা জয় নিয়ে মাঠ থেকে ফিরতে চায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা।

সাধারণ ভোটারদের অভিমত, বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি ভোটে অংশগ্রহণ না করায় নির্বাচনী এলাকার সবকটি কেন্দ্রে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন নির্বাচনী এলাকার ভোটারগণ।এছাড়াও নির্বাচনী এলাকায় রয়েছে বিএনপিপন্থি একটি বিশাল ভোট ব্যাংক তাদের কে›ন্দ্রমুখী করা এবং তারা যেদিকে ঝুঁকবেন, জয়ের পাল্টা সেদিকেই ভারি হতে পারে এমন আলোচনাও রয়েছে নির্বাচনী এলাকার জনসাধারণের মাঝে।

দুই উপজেলায় ১৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসন। এর মধ্যে ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে হালুয়াঘাট উপজেলায় মোট ভোটার ২ লক্ষ ৭৭ হাজার ৩শত ৯জন। অপরদিকে ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ধোবাউড়া উপজেলায় মোট ভোটার ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৫শত ৮৮ জন। তবে দুই উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ১৪৩ টি ভোটকেন্দ্র্রে ৯ শত ৬৮টি বুথের মাধ্যমে এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই উপজেলায় ৪ লক্ষ ৫২ হাজার ৮শত ৯৭ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ।