বন্যহাতির তাণ্ডবে নার্সারী-বোরো ধান ক্ষেত লন্ডভন্ড

প্রকাশিত: ৬:৩৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্যহাতির দল তাণ্ডব চালিয়ে বন বিভাগের নার্সারী এবং কৃষকের বোরো ধান ক্ষেত খেয়ে ও মাড়িয়ে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার মধুটিলা ইকোপার্কের ভেতরের নার্সারীতে ও পাশের পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের পাহাড়ি ঢালে ফসলের মাঠে তাণ্ডব চালায় হাতির দল।

সে সময় হাতি তাড়াতে গিয়ে আহত হয়েছেন ওই এলাকার উপজাতি কৃষক বিজয় সাংমা (৫৫)। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

জানা যায়, নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ি এলাকায় প্রায় দুই যুগ ধরে ৪০-৪৫টি বন্যহাতির দল তাণ্ডব চালিয়ে আসছে। এই হাতিগুলো ধান পাকার মৌসুমে প্রায় প্রতি রাতেই খাবারের সন্ধানে ফসলের মাঠে হানা দেয়। মঙ্গলবার গভীর রাতে বিনোদন কেন্দ্র মধুটিলা ইকোপার্কের ভেতরে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুফল প্রকল্পের মিশ্র বাগান সৃজন করার জন্য তৈরিকৃত নার্সারীর ক্ষতি সাধন করে। এতে চাপালিশ, ডেওয়া, অর্জুন, জারুল, পলাশ, জলপাই, বহেয়া ও আকাশমনি গাছের প্রায় ২৪ হাজার চারা খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে ফেলে।

পরে বন বিভাগের লোকজন বন্যহাতিকে তাড়া করলে পার্কের বাইরে গিয়ে পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের বোরো ধান ক্ষেতে তাণ্ডব চালায়। এতে কৃষক শামছুল হকের ২৫ শতাংশ ও উপজাতি কৃষক আলবিনুছ সাংমার ২৫ শতাংশ জমির বোরো ধান ক্ষেত খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে দেয়। সে সময় হাতি তাড়াতে গিয়ে গুরুতর আহত হন বিজয় সাংমা নামের এক কৃষক। পরে স্বজনরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

স্থানীয়রা জানান, বন্যহাতির দলটি পাশের গভীর জঙ্গলে অবস্থান করছে। যেকোনো সময় ফসলের মাঠে তাণ্ডব চালাতে পারে। গারো পাহাড়ের বেশ কিছু স্থানে দীর্ঘমেয়াদী মিশ্র বাগান সৃজন করায় বন্য হাতির অবাধ বিচরণ শুরু হয়েছে। তাছাড়া বোরো ধান, আমন ধান ও কাঁঠাল পাকার মৌসুমে পাহাড়ি এলাকার গ্রামগুলোর ঘর-বাড়িতে টানা তাণ্ডব চালায় হাতিরা। সে সময় ভুক্তভোগীরা ডাক চিৎকার করে, শব্দ করে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, পটকা ফুটিয়ে ও কেরোসিনের মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়ান। বন্যহাতির দল দীর্ঘদিন যাবৎ তাণ্ডব চালিয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করে এলেও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

এলাকার কৃষকদের দাবি, বন্যহাতির অত্যাচার বন্ধে সরকারি ভাবে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।

বন বিভাগের মধুটিলা ফরেষ্ট রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার রাতে বন্যহাতির দল ইকোপার্কে ঢুকে নার্সারীতে তাণ্ডব চালিয়ে পা দিয়ে মাড়িয়ে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২৪ হাজার চারার ক্ষতি করেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এই চারাগুলো ঠিক না হলে চলমান অর্থবছরের সুফল প্রকল্পের বাগান সৃজনে সমস্যা হতে পারে।

তিনি বলেন, বন্যহাতির তাণ্ডবে নিহত, আহত ও ফসলের ক্ষতিগ্রস্তদের সরকার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। তাই বন্যহাতিকে রক্ষা করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে বন বিভাগ সজাগ রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, বন্যহাতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা থানায় জিডি করে বন বিভাগ বরাবর আবেদন করলে বন বিভাগ তালিকা করে সরকারি ভাবে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। একইসঙ্গে বন্যহাতির অত্যাচার বন্ধে সরকারি ভাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।