পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সেচ প্রকল্প

প্রকাশিত: ২:২০ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : কৃষিনির্ভর জনপদ খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ৪ হাজার ২২৪ হেক্টর। এর মধ্যে আমন ২ হাজার ৯৮০ হেক্টর, বোরো ৯৮০ ও আউশ উৎপাদন হয় ৭০ হেক্টরে।

অতিবৃষ্টিতে বীজতলা প্রস্তুতে বিঘ্ন ঘটায় আউশ উৎপাদন কম হলেও সেচ সুবিধা না থাকায় বোরো উৎপাদনে ২ হাজার হেক্টর জমি প্রতি বছর অনাবাদি থেকে যায়! এতে কৃষি উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয় প্রান্তিক কৃষক। ফলে জনপদে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সেচ সুবিধায় ড্রেন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় ৫ হাজার মিটার (৫ কি.মি.)সেচ ড্রেন নির্মাণ চলছে। এতে আগামী মৌসুমে অন্তত ২০০০ হেক্টর জমিতে অনায়াসে বোরো চাষ করতে পারবে প্রান্তিক কৃষক।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ৪ হাজার ২২৪ হেক্টর। এর মধ্যে আমন মৌসুমে ২ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হলেও পানির অভাবে বোরো মৌসুমে ২ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যায়! সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সেচ প্রকল্পে উপজেলার তিনটহরী, গোদাতলী, নামার তিনটহরী, ছদুরখীল, বড়বিল, ডাইনছড়ি, বাটনাতলী, ধর্মঘর, গচ্ছাবিলসহ সেচ সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় ৫০০০ মিটার সেচ ড্রেন নির্মাণ শুরু করেছে। ফলে চলতি মৌসুমে এই প্রকল্পে তিনটহরী ও ছদুরখীল বিলের ১০০ একর জমি সেচ সুবিধা পেয়েছে। এতে এবার জনপদে বোরো উৎপাদন বাড়বে। এছাড়াও উপজেলার কুমারী, ভোলাছোলা, গচ্ছাবিল, বড়বিলে আরও অনাবাদি জমি রয়েছে। ছদুরখীল ও তিনটহরী বিলে দেখা গেছে, বিগত বোরো মৌসুমে পানির অভাবে এসব জমির একতৃতীয়াংশও আবাদ করা যেত না। আর এবার বিলজুড়ে বোরোর সবুজ নয়নাভিরাম দৃশ্য!

ছদুরখীলের প্রান্তিক কৃষক মো. আবু সুফিয়ান জানান, এই বিলে আগে তিন ভাগের একাংশ জমিতে জেনারেটরে পানি তুলে বোরো চাষ হতো। প্রতি ৪০ শতক জমিতে ২ হাজার ৫০০ টাকা পানির খরচ লাগত। এতে পানিরও অপচয় হতো বেশি। আর এখন ড্রেনেজ সুবিধায় একই খরচে পানি পাচ্ছি অনেক বেশি। ড্রেন হওয়ায় পানির অপচয় হয় না।

কৃষক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এই বিলে ১৩৫ কানি জমির মালিক ৭০/৮০ জন প্রান্তিক কৃষক। সেচ প্রকল্পের আওতায় ড্রেন হওয়ায় টাকা ব্যয় হলেও পানির অপচয়রোধ করে অনায়াসে সেচ সুবিধায় আমরা উপকৃত হচ্ছি। কারণ ড্রেনের মাধ্যমে সরাসরি জমির এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে অনায়াসে পানি নেওয়ার সুযোগে সেচ সুবিধায় প্রান্তিক কৃষকের মনে এখন স্বস্তি। তিনটহরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পার্শ্বের ৪০ একরের বিল জুড়ে সেচ সুবিধায় একে ডেইরী ফার্ম ভূট্টা ও সবুজ ঘাস আবাদ করেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মহসিন চৌধুরী বলেন, মানিকছড়ি উপজেলায় উন্নয়ন বোর্ড কৃষি জমিতে সেচ ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পে উপজেলার বিভিন্ন কৃষি জমিতে ৫০০০ মিটার সেচ ড্রেনের কাজ চলমান রয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মহি উদ্দিন আহম্মদ বলেন, উপজেলায় মোট চাষযোগ্য জমি ৪২২৪ হেক্টর। এর মধ্যে ২৯৮০ হেক্টরে আমন, ৭০ হেক্টরে আউশ ও ৯৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। সেচ সুবিধা না থাকায় ২০০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয় না। আর বর্ষার অতিবৃষ্টিতে বীজতলা প্রস্তুতে বিঘ্ন ঘটায় মাত্র ৭০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড উপজেলায় ৫০০০ মিটার জমিতে সেচ ড্রেন করছে। এর বাইরেও সেচের অভাবে জমি অনাবাদি থাকছে। সব অনাবাদি সেচ প্রকল্পের আওতায় আনা হলে বোরো চাষ বাড়বে এবং ধান উৎপাদনে আমরা অনেক এগিয়ে যাব।