ডুবেছে সয়াবিন, কাঁদছে কৃষক

প্রকাশিত: ৭:৪৫ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলাসহ জেলাজুুড়ে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি জমে ক্ষেতেই পচন ধরছে সয়াবিনে গাছে। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
এ বছর সয়াবিনের ভালো ফলন হয়েছে। প্রথমবার কাটা সয়াবিনে ভালো দাম পেয়েছিলেন চাষিরা। আরও ১৫ দিন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চাষিরা কষ্টের ফসল পুরোপুরি ঘরে তুলতে পারতেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অসময়ের বৃষ্টি ও তীব্র জোয়ার। শুক্রবার পর্যন্ত কৃষকরা ৬০ শতাংশ ফসল ঘরে তুলেছে। বাকি ৪০ শতাংশ এখনো পানিতে।

দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৬৫ ভাগ সয়াবিন লক্ষ্মীপুর জেলায় উৎপাদন হয়। এ ফসলকে ঘিরে চরাঞ্চল ও গ্রামীণ অর্থনীতি বেশ চাঙ্গা থাকে। এবার মেঘনা উপকূলের চরাঞ্চল ও বিভিন্ন স্থানের নিম্নাঞ্চলের ক্ষেতগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক দিনের থেমে থেমে বৃষ্টির পানিতে ওইসব এলাকার অধিকাংশ ক্ষেতে আধাপাকা সয়াবিনে পচন ধরেছে। এছাড়া গাছ নুইয়ে পড়া, বিবর্ণ ও কাদামাটি লেগেও ফসলের কিছু ক্ষতি হয়েছে। এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। তবে কী পরিমাণ জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে তা শনিবার রাত পর্যন্ত জানাতে পারেনি কৃষি বিভাগ। তারা বলছেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তালিকা করা হচ্ছে। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হবে।

সরেজমিনে সাজু মোল্লার ঘাট এলাকায় সয়াবিন চাষি ও পাইকারদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, ঈদের দিন থেকে গত শুক্রবার পর্যন্ত থেকে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এতে বিভিন্ন এলাকার ক্ষেতে পানি জমেছে। এর সঙ্গে কিছু জোয়ারের পানিও আছে। এতে অনেক চাষি তড়িঘড়ি করে অপরিপক্ব ফসল তুলছেন। তা পাশের রাস্তা ও উঁচু স্থানে জড়ো করে রাখছেন।

শনিবার সিরাজ চৌধুরী নামে এক কৃষক জানান, তিনি ২ কানি জমিতে সয়াবিন রোপণ করে ২লাখ টাকা খরচ করেছেন। জোয়ারে ৬০ ভাগ সয়াবিন ডুবে নিঃস্ব। চরাঞ্চল ও বিভিন্ন স্থানের নিম্নাঞ্চলে র সয়াবিন ক্ষেতে পচন ধরেছে। এ বছর কৃষক যখন ক্ষেতে বীজ বপণ করেন তখন অসময়ে অতিবৃষ্টি হয়। ফলে অনেক ক্ষেতে চারা গজায়নি। কৃষকরা নতুন স্বপ্নে আবার বীজ লাগিয়েছিলেন।

জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলা সদর, রায়পুর, কমলনগর ও রামগতিতে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১.৯ মেট্রিক টন সয়াবিনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ হিসাবে ৭২ হাজার ২০০ মেট্রিক টন উৎপাদন হওয়ার কথা। এতে প্রায় সাড়ে ১৯ লাখ মণ সয়াবিন হবে। প্রতি মণ সয়াবিন ২ হাজার টাকা হিসাবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার লেনদেন হবে।

চরঘাসিয়ার কৃষক নুরু মিয়া বলেন, ১২০ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীন সয়াবিন চাষ করেছি। ক্ষেতের পানি না নামার কারণে ফসল পচে যাচ্ছে। কাঁচা সয়াবিন পানি পেলে বিবর্ণ হয়ে যায়। বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায় না। রায়পুরের মেঘনা উপকূলীয় হায়দরগঞ্জ বাজারের সয়াবিন ব্যবসায়ী সাইজ উদ্দিন মোল্লা বলেন, বিগত কয়েক বছরের থেকে এবার ভালো ফলন হয়েছে। এখন শুকনো সয়াবিনের মণ ২ হাজার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আধাপাকা সয়াবিন ১ হাজার ৮০০ থেকে বিক্রি হচ্ছে।

রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) আবু সালেহ মো. মিন্টু ফরায়েজী বলেন, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কিছু ক্ষেতের সয়াবিনে পচন হচ্ছে। এ ছাড়া গাছ নুইয়ে পড়া, কাদামাটি লেগেও ফসলের কিছু ক্ষতি হয়েছে। এ বছর ফলন ও দাম ভালো।

রায়পুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাহমিনা খাতুন বলেন, কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ক্ষেতে পানি জমে সয়াবিন নষ্ট হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কৃষকরা ফসল পুরোপুরি ঘরে তুলতে পারবে।

লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, এবার সয়াবিনের ফলন ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বৃষ্টি হওয়ায় কিছু এলাকায় ক্ষেতে থাকা সয়াবিন নষ্ট হচ্ছে। দ্রুত ফসল কেটে তোলার জন্য আমরা কৃষককে পরামর্শ দিচ্ছি। এ গাছের পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে কাটার উপযোগী হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। সরকারি প্রণোদনা এলে তাদেরকে এর আওতায় আনা হবে বা চেষ্টা করব।