বেগুনের বাম্পার ফলন, দ্বিগুণ খরচে লোকসানের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৬, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার : চলতি মৌসুমে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বেগুনের বাম্পার ফলন ও টানা ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে ভাল দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও গত দুদিন বেগুনের দাম অর্ধেক কমায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। কিছুদিন আগে হঠাৎ করে জ্বালালি তেল, রাসায়নিক সারসহ কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় এবার বেগুন চাষিদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

দেশের উত্তরের জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার চাষিরা সাধারণত রবিশস্যের ওপর নির্ভরশীল। উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, কোনো জমি আর পতিত নেই। বিস্তৃর্ণ কৃষকের মাঠে মাঠে দু-চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ। যেন চারিদিকে বেগুনের সবুজ রঙে ভরে উঠেছে ফসলের মাঠ আর মাঠ। নয়ন জুড়ানো দৃশ্য মেতে উঠেছে ফসলের মাঠে। এখন মাঠজুড়ে সবুজ রঙে সাজিয়ে তুলেছে প্রকৃতির অপরুপ রুপ।

এ ছাড়াও প্রায় ১ মাস থেকে চাষিরা ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় বেগুনের মণ বিক্রি করলেও গত দু-তিনদিন ধরে দাম কমে তা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা বিক্রি করছেন স্থানীয়সহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারদের কাছে। জেলার অন্য উপজেলার তুলনায় ফুলবাড়ী উপজেলায় বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বেগুনসহ সব ধরনের সবজির চাষ ব্যাপক চাষাবাদ হয়। তবে এ বছর খরার মাত্রা বেশি থাকায় বেগুন চাষের পাশাপাশি অন্যান্য ফসলও ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বেগুনের দাম কম থাকায় চাষিরা একটু দুচিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।

কুরুষাফেরুষা এলাকার বর্গা চাষি ঈশা মিয়া জানান, তিনি এবার দুই বিঘা জমি ১ বছরের জন্য ৩৮ হাজার টাকায় বর্গা নিয়ে আগাম বেগুন চাষ করেছেন। তিনি গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে মানুষের জমি বর্গা নিয়ে বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষা করে আসছেন। প্রতি বছর বেগুন চাষ করে লাভও হয়েছে। এ বছর হঠাৎ করে জ্বালানি তেল,সার কীটনাশক ঔষধসহ শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় খরচ দিগুণ হয়েছে। এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে বেগুনের মণ ১৬০০ থেকে ১৭০০ বিক্রি করলেও গত তিনদিন থেকে বেগুনের দাম কমে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের দাম না বাড়লে বড় লোকসানের আশংকা করছেন এই চাষি।

একই এলাকার বেগন চাষি মনছার আলী ও পুলিল চন্দ্র রায় জানান, এবছর আবহাওয়া ভাল থাকায় বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথম দিকে প্রায় টানা ১ মাস বেগুনের দাম ভাল ছিল। এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রতি বিঘায় বেগুন রোপণ করতে খরচ হয় কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বেগুন ক্ষেতে রোগ মুক্ত ও আবহাওয়া অনুকূলসহ বেগুনের ভাল দাম থাকলে ১ বিঘায় ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা বিক্রি করা সম্ভব। যাবতীয় খরচ মিটিয়ে বিঘা প্রতি ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় হয়। এ বছর কৃষিতে খরচের পরিমাণ বেশি হচ্ছে। সব জিনিসপত্রের দাম দ্বিগুণ। সেই সামান্য রোগও দেখা যাচ্ছে। তবে বেগুনের মণ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা থাকলে আমরা বেগুন চাষি লাভবান হতে পারবো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন জানান, চাষিদের বেগুন চাষে উদ্বুদ্ধ করা ও বিভিন্ন সহযোগিতা দেওয়ায় এ অঞ্চলের চাষিরা বেগুন চাষে ঝুঁকছেন। এ অঞ্চলের মাটি বেগুন চাষের উপযোগী হওয়ায় চলতি খরিপ-১ মৌসুমে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করেছে। অধিকাংশ কৃষক বেগুন বিক্রি করতে শুরু করেছেন। এ বছর খরার মাত্রা বেশি থাকায় বেগুনের পাশাপাশি অন্যান্য ফসলও ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। প্রায় এক মাস থেকে বেগুনের দাম ভাল ছিল। গত দুই তিদিনে একটু দাম কমলেও চাষিদের লোকসান হবে না। বরং বেগুন চাষিরা অধিক লাভবান হবেন। এ দিকে শীত মৌসুমের জন্য চাষিরা আগাম বেগুনের চারা রোপণসহ ১০ হেক্টর জমিতে আগাম বেগুনের চাষাবাদ করেছে ।