আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন পঞ্চগড়ের টমেটো চাষিরা

প্রকাশিত: ১২:২৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : পঞ্চগড়ে লাউ, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, শশার পাশাপাশি বাম্পার ফলন হয়েছে টমেটোর। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে টমেটো বিক্রি নিয়ে সমস্যা পড়া চাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
টমেটো কেনার জন্য ঢাকা ও শরীয়তপুর থেকে ৩৮ জন বেপারিকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় আনা হয়েছে পঞ্চগড়ে। তারা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থেকে তাদের প্রতিনিধি দ্বারা টমেটো কেনা শুরু করে দিয়েছেন।

শনিবার রাতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে টমেটোবাহী ট্রাক রওনা হয় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার উদ্দেশ্যে। এ সময় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হানিফ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

তারা সদর উপজেলার টমেটোর বিভিন্ন আড়ৎ ঘুরে দেখেন। এ সময় তারা চাষিদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির বিষয়ে কোন সমস্যা হলে তা সমাধানের আশ্বাস দেন।

পঞ্চগড়ে এবার গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হয়েছে ৯৩০ হেক্টর জমিতে। ফলনও হয়েছে ভাল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে টমেটো বিক্রি করা নিয়ে বিপাকে পড়েন চাষিরা। অনেকের টমেটো ক্ষেতেই নষ্ট হতে শুরু করে। বাজারে দুই টাকা কেজি দরে বিক্রি করে তাদের পথখরচও উঠতো না। বাইরে থেকে বড় বেপারিরা টমেটো কিনতে আসতে না পারায় এই সংকট তৈরি হয়।

টমেটো চাষীদের কথা বিবেচনা করে উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

ঢাকা ও শরীয়তপুর থেকে পঞ্চগড়ে আসা ৩৮ জন বেপারিকে একটি আবাসিক হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। কোয়ারেন্টাইন শেষ হলেই তারা মাঠে গিয়ে সরাসরি চাষিদের থেকে টমেটো কিনতে শুরু করবেন।

এর মধ্যেই তারা স্থানীয় প্রতিনিধি দিয়ে টমেটো কেনা শুরু করে দিয়েছেন। বেড়ে গেছে টমেটোর দামও। এর আগে ৮০ থেকে ১’শ টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩’শ টাকা মণ। পুরোদমে বেপারিরা টমেটো কেনা শুরু করলে টমেটোর দাম আরও বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়ন ও হাড়িভাসা ইউনিয়নের টমেটো চাষি আলামিন, আব্দুল খালেক রাজিউর রহমান জানান, ক্রেতা না থাকায় দুই টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। প্রশাসনের এমন উদ্যোগের ফলে টমেটোর দাম বাড়তে শুরু করেছে। আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।

পঞ্চগড়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকা শরীয়তপুরের বেপারি দাদন হাওলাদার ও খবির দেওয়ান জানান, টমেটো কেনার পর এখানে ১০-১৫ দিন শেডের নিচে রাখতে হয়। তারপর ট্রাকে করে ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, চট্টগ্রাম, লাকসাম, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীতে পাঠানো হয়। ‘এখানে বেপারিদেরও বিনিয়োগ আছে। প্রত্যেকের বড় বড় শেড ভাড়া নেওয়া আছে। চাষিদের নিকট থেকে সময়মতো টমেটো কিনতে না পারলে চাষিদের যেমন লোকসান হবে, তেমনি বেপারিদেরও হবে। তবে প্রশাসনের উদ্যোগে টমেটো কেনা ও পাঠানো শুরু করতে পেরেছি। যদি টমেটো কেনাবেচা করতে পারি তাহলে আমাদেরও কিছু লাভ হবে, কৃষক-শ্রমিকদেরও লাভ হবে।

চাষিরাও প্রশাসনের এই উদ্যোগে ভাল দামের স্বপ্ন বুনছেন। টমেটোসহ অন্যান্য সবজি পঞ্চগড়ে বাইরে যাবার খবরে এসব শাকসবজির দাম বাড়তে শুরু করেছে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ‘টমেটোসহ অন্যান্য শাকসবজি যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য প্রয়োজনে বেপারিদের কোয়ারেন্টাইনে রেখে নিরাপদে কেনাকাটার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘লকডাউনের কারণে কৃষিপণ্য যাতে নষ্ট না হয়, কৃষক যেন ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারেন সে বিষয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে টমেটোসহ অন্যান্য শাকসবজির দাম বাড়তে শুরু করেছে।’