গৌরীপুরে চুরির অপরাধে শিশুকে নির্যাতনে, মা-ছেলে গ্রেফতার

প্রকাশিত: ৭:১৮ অপরাহ্ণ, জুন ১১, ২০২১

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র রিফাত মিয়া (৯)কে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় উঠে। ঘটনায় নির্যাতনকারী মা ও ছেলেকে বৃহস্পতিবার (১০জুন) আটক করেছে পুলিশ।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ খান আব্দুল হালিম সিদ্দিকী জানান, শিশু নির্যাতনের অভিযোগে ২জনকে আটক করা হয়েছে। গৌরীপুরে থানার শিশুবান্ধব অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, রিফাতের পিতা মো. সুরুজ মিয়া বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।

রিফাত রামগোপালপুর ইউনিয়নের মধুবন আদর্শ গ্রামের (গুচ্ছগ্রাম) মো. সুরুজ মিয়ার পুত্র। মো. সুরুজ মিয়া জানান, গত শুক্রবার (৪জুন) আমার ছেলেকে মোবাইল চুরির অপবাদে গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মো. দুলাল মিয়ার স্ত্রী মো. ফাতেমা আক্তার (৫০) ও মৃত আব্দুল বারেকের পুত্র মো. হিমেল মিয়া (২৫) ধরে নিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতন করে। মৃত আব্দুল বারেক ছিলেন ফাতেমা আক্তারের প্রথম স্বামী। ফাতেমা আক্তারের ভাতিজা আজিজুল হক আমার ছেলেকে আমপাড়ার জন্য নিয়ে যায়। আমার ছেলে গাছে উঠার পর মা-ছেলে দু’জন মিলে গাছের উপরে রেখেই পিটায়। নির্যাতনের ঘটনায় সে জ¦র, কাশিতে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে।

নির্যাতনের শিকার মো. রিফাত মিয়া জানায়, ৮/৯দিন পূর্বে ফাতেমা আক্তারের ভাতিজা আজিজুল হক তার আমগাছে আমপাড়ার জন্য নিয়ে যায়। আমি আম পাড়ার জন্য গাছে উঠতেই গাছের মধ্যেই আমাকে মারপিট শুরু করে। আমাকে ধরে নিয়ে প্রথমে হাত-পা বেঁধে এরপর গাছের সঙ্গে বেঁধে মারপিট করে। আমি ওদের হাতে-পায়ে ধরেছি এরপরও মারপিট বন্ধ করে নাই। আমাকে পিটানোর সময় ওরা বারবার বলেছে, আমি মোবাইল চুরি করেছি। আল্লাহ’র কসম খেয়ে বলেছি, আমি চুরি করি নাই, তারপরও ওরা আমাকে গাছে বেঁধে মারধর করেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় ভিডিওতে দেখা যায়, ওই নারী নিজেই ভিডিওকারীকে বলছেন ‘ভিডিও কর ভিডিও কর, খোকন এটা ফেসবুকে দে, চেয়ারম্যান দেখুক, চোর ধরছি।’ শিশুটি কান্নায় ভেঙে পড়ছে। শিশুটি বলছে সে চুরি করে নাই। ওই নারীর ছেলে হিমেল বলছে, মোবাইল চুরি করেছে, মোবাইল চুরি করেছে।

এরপরে ঘর থেকে গরুর দড়ি এনে ছেলেটাকে আরো মজবুত করে বাঁধে। ওই নারী কখনও কখনও তার ছাগল চুরির কথাও বলেছেন।

মোবাইল চুরির ঘটনায় শিশুটিকে ধরে এনে সামান্য মারধর করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন নির্যাতনকারী মো. হিমেল মিয়া। তিনি বলেন, তাহলে আমার ছেলে মো. বরকত উল্লাহ (৬)কে সুরুজ মিয়া নির্যাতন করেছে, আঙ্গুল ভেঙ্গে দিয়েছে, আমি এই ঘটনারও বিচার চাই।

মধুবন আদর্শ গ্রামের সভাপতি জামাল আহমেদ বলেন, আমি নির্যাতনের বিষয়টি মঙ্গলবার জানতে পেরেছি। সালিশ হওয়ার কথা ছিলো, পরে আর সালিশ হয়নি।