বাগেরহাটে বাড়ছে কিশোর অপরাধ

প্রকাশিত: ৪:৪২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০২০

অনলাইন ডেস্কঃ বাগেরহাটে গ্যাং কালচার না থাকলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে কিশোর অপরাধ। স্কুল পড়ুয়া ও সমবয়সীরা জড়িয়ে পড়ছেন বিভিন্ন অপরাধে। ইভটিজিং, মাদক সেবন, মারামারি, চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণের মত অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে শিশু-কিশোরদের দ্বারা। শিশু-কিশোরদের অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। কিশোরদের অপরাধ প্রবনতা রুখতে সামাজিক ও পুলিশি তৎপরতা চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায়।

সব তৎপরতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শিশু-কিশোররা অপরাধ করেই যাচ্ছে। যা সামাজিক অবক্ষয়ের প্রমাণ বহন করে। বাগেরহাট জেলা প্রবেশন অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এ ১‘শ ১০ জন শিশু-কিশোরদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে মামলা হয়েছে। একই সালে বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এ ১‘শ ৪৭ জন শিশু-কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। ২০২০ সালে বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এ ৪৭ জন শিশু-কিশোর মামলার আওতায় এসেছে। এর মধ্যে তিন কিশোরের বিরুদ্ধে হত্যা, ১৩ কিশোরের বিরুদ্ধে মাদক এবং বিভিন্ন ফৌজদারি (পেনাল কোড) আইনে ৮১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ২০২০ সালে বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এ ৪৪ জন শিশু-কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।

এসব মামলার বাইরেও শিশু-কিশোরদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। সাম্প্রতিক সময়ে বাগেরহাট শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় শিশু-কিশোরদের দ্বারা প্রতিবেশীর ঘরে চুরি, ভাড়াটিয়া বাড়িতে চুরি, টাকার জন্য বন্ধুকে মারধর, নিজ ঘর থেকে টাকা চুরি, টাকার জন্য অভিভাবককে মারধরের মত ঘটনা ঘটেছে। প্রকাশ্যে ধুমপানতো এখনও কিশোরদের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া মাদক সেবন, মাদক সেবন করে বাড়িতে গিয়ে মা-বাবাকে মারধর, মোবাইলে গেম খেলে উত্তেজিত হয়ে অভিভাবককে মারধরের বিষয়ও শোনা যাচ্ছে। এসব বিষয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে থানায় বা আদালতে মামলা না করে অভিভাবক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়। তবে শিশু-কিশোর দ্বারা সংগঠিত অপরাধ ও কিশোরদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

বাগেরহাট সরকারি বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক ফোরামের আহবায়ক আহাদ উদ্দিন হায়দার বলেন, বাগেরহাটে গ্যাং কালচারের উপস্থিতি না থাকলেও স্কুল পড়ুয়া ও সমবয়সী শিশু কিশোরদের সংগঠিত বিভিন্ন অপরাধের কথা শোনা যায়। ছোটখাট মারামারি, ইভটিজিং, মাদক সেবন, চুরিসহ নানা অপরাধের সাথে শিশুরা জড়িত রয়েছে। এ নিয়ে আমাদের উৎকন্ঠা রয়েছে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবনতা কমাতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের চলাচল, আচার-আচারণ, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদী বিষয়ে সমন্বয় থাকতে হবে। পাশাপাশি কিশোর অপরাধ কমাতে প্রশাসনের নজরদারির বৃদ্ধির দাবি জানান তিনি।

শিশু-কিশোরদের অপরাধ প্রবনতা কমানোর জন্য আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি পারিবারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে উল্লেখ করে বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের স্পেশাল পিপি এ্যাড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কোন মানুষই অপরাধী হয়ে জন্ম নেয় না। বিভিন্ন পরিস্থিতে শিশু-কিশোররা অপরাধের সাথে জড়িয়ে পরে। আমরা অপরাধী শিশু-কিশোরদের আসামী বলি না।তাদেরকে সুষ্ঠ জীবনে ফেরার জন্য পরামর্শ দেই। পিতা-মাতাসহ পরিবারের অভিভাবকদের শিশুদের সাথে বন্ধু সুলভ আচারণ করতে হবে। কোন শিশু-কিশোর যদি ছোট খাট অপরাধ করে তাকে বোঝাতে হবে। শিশু-কিশোররা যদি পরিবারের সিনিয়র সদস্যদের কাছ থেকে বন্ধু সুলভ ব্যবহার পায় তাহলে কিশোর অপরাধ কমবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শিশুদের অপরাধ প্রবনতা কমাতে করনীয় বিষয়ে বাগেরহাটের প্রবেশন অফিসার সোহেল পারভেজ বলেন, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারের ফলে শিশু-কিশোররা অপরাধের দিকে ঝুকে পড়ছে। পিতা-মাতার দাম্পত্যকলহ, পিতামাতার অবহেলা, হতাশা এবং সামাজিক-পারিবারিক বন্ধনের অভাবও শিশুদের মধ্যে অপরাধ প্রবনতা জন্ম দেয়। অনেক সময় পারিবারিক দারিদ্রতাকে পূজি করে স্বার্থান্বেসী মহল শিশুদেরকে আইন বিরোধী কাজে ব্যবহার করে। শিশুদের অপরাধ প্রবনতা কমাতে সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার বিস্তারের সাথে এবং অপসংসস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। শিশুদের সুস্থ্য বিকাশের জন্য খেলাধুলার সুযোগ করে দেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় বলেন, বাগেরহাটে কিশোর গ্যাংয়ের কোন উপস্থিতি নেই। বাগেরহাটে কিশোরদের দ্বারা বড় কোন অপরাধও সংগঠিত হয়নি। দু-একটি চুরি, মাদক সেবনসহ কিছু অপরাধের অভিযোগ রয়েছে শিশু-কিশোরদের বিরুদ্ধে। জেলার শিশু-কিশোরদেরকে অপরাধ মুক্ত রাখতে সামাজিক ও পুলিশি তৎপরতা চলমান রয়েছে। কমিউনিটি ও বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে আমরা শিশু-কিশোরদেরকে আইন বিরোধী কাজ থেকে বিরত রাখতে সচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালু রেখেছি।