সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের দুই সদস্য গ্রেফতার

প্রকাশিত: ৬:৪০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর উত্তরখান এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হাতে চাঞ্চল্যকর মো. সোহাগ (২০) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রধান দুই আসামি মো. মাহবুবুল ইসলাম ওরফে রাসেল ওরফে কাটার রাসেল (২০) ও হৃদয়কে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। এসময় গ্রেফতারকৃত আসামিদের কাছ থেকে ২টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন ও ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে কাওরান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে কিশোর গ্যাং সম্পর্কে বিস্তারিত জানান র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে দক্ষিণখান মোল্লারটেক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

এসময় সোহাগ হত্যার কথা তুলে ধরে র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল জানান, গত ২৭ আগস্ট রাজধানীর উত্তরখান রাজাবাড়ি খ্রিষ্টানপাড়া রোডের ডাক্তার বাড়ি মোড়ে কিশোর গ্যাং ‘দিবসের’ হৃদয়, রাসেলসহ বেশ কয়েকজন সদস্য আড্ডা দেয়ার সময় একটি রিকশার চাকা থেকে কাঁদা ছিটকে হৃদয়ের গায়ে লাগলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে রিকশা চালককে মারধর করতে থাকে। এমন সময় সোহাগ এগিয়ে এসে বাঁধা দিলে হৃদয় ও রাসেল ক্ষিপ্ত হয়ে অন্য সদস্য নাদিম, সানি, মেহেদী, সাদ, সাব্বিরসহ বেশ কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে আসে এবং সবাই মিলে পেটায়।

তিনি আরো জানান, এরপর নাদিম ধারালো ছোড়া নিয়ে রাসেল ওরফে কাটার রাসেল সোহাগের পেটে আঘাত করে ও পালিয়ে যায়। সোহাগ (২০) মাটিতে লুটিয়ে পড়লে রিকশা চালকসহ অন্যরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়।

নিহতের পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, সোহাগ (২০) উত্তরা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। পাশাপাশি টঙ্গী বাজার এলাকায় তার ভগ্নিপতির দোকান দেখাশুনা করে। সে পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট। সর্বদা হাসিখুশি ও মিশুক স্বভাবের। ঘটনার দিন আনুমানিক সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গরুর খাদ্য কিনতে সে বাসা থেকে বের হয়। পরে জানতে পারেন সে খুন হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা স্বীকার করেছে তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। ঘটনার পর রাসেল ও হৃদয় গ্রেফতার এড়ানোর জন্য বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিল। কোন স্থানেই সে এক-দুই দিনের বেশি অবস্থান করতো না। একপর্যায়ে সে দেশত্যাগ করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে।

আসামি মো. মাহবুবুল ইসলাম ওরফে রাসেল ওরফে কাটার জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ফায়দাবাদ আলিয়া মাদ্রাসায় দাখিল পর্যন্ত পড়াশুনা করে। বর্তমানে সে উত্তরা আইডিয়াল কলেজে এইচএসসি ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত। সে হৃদয়ের নেতৃত্বাধীন কিশোর গ্যাং গ্রুপ ‘দিবসের’ সদস্য। এই গ্রুপ ‘হৃদয় গ্যাং’ নামেও পরিচিত। হৃদয়ের গ্যাংয়ের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর থেকে এই গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য। সে প্রায় সময় ছুরি, ক্ষুর কাছে রাখত। পায়ের রগ কাটার হুমকি দেয় বলেই ‘কাটার রাসেল’ নামে ডাকতে শুরু করে এবং সে ঐ নামেই এলাকায় পরিচিত হয়।

অপর আসামি মো. হৃদয় জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর পড়াশুনা বাদ দিয়ে উত্তরায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ শুরু করে। তার সঙ্গে রাসেল, নাদিম, সানি, মেহেদী, সাদ, সাব্বিরসহ এলাকার উঠতি বয়সের কিশোরদের সু-সম্পর্ক থাকায় সবাইকে নিয়ে কিশোর গ্যাং ‘দিবস’ প্রতিষ্ঠা করে এবং তার নেতৃত্ব দেয়। এই গ্রুপের সদস্য প্রায় ১০ থেকে ১২ জন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

জানা গেছে, সম্প্রতি সংগঠন কিংবা খেলাধুলার নামে তুরাগের দিয়াবাড়ি এলাকায় সদ্য গড়ে উঠেছে কিশোরদের কিছু সংগঠন ও ক্লাব। নামে-বেনামে এসব ক্লাবের সদস্যদের বয়স ১৭ থেকে ২০ বছর। স্থানীয়দের অভিযোগ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল ও বিআরটিএতে আধিপত্য বিস্তার টিকিয়ে রাখতে এসব কিশোর ক্লাব ও ইউনিটি গঠন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে দলের পদ-পদবীর লোভ দেখিয়ে এই কিশোরদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মী। আর রাজউকের খালি জমি প্লট দখল করে তৈরি হচ্ছে এসব ক্লাবঘর। এই কিশোরদের মধ্যে অষ্টম শ্রেণি থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীও রয়েছে। যাদের অনেকেই ইতিমধ্যে ঝরে পড়েছে পড়াশোনা থেকে। যে সময় তাদের হাতে থাকার কথা বই খাতা আর কলম। সেখানে এই কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে নানারকম অপকর্মে। এক শ্রেণির রাজনৈতিক ব্যক্তি এই কিশোরদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে তাদের মাঝে তৈরি করছেন ক্ষমতার লোভ। এর ফলে নিজের অজান্তেই নতুন নতুন তৈরি হচ্ছে কিশোর গ্যাং। এতে কিশোরদের অভিভাবকগণ উদ্বিগ্ন এবং তাদের নানারকম অপকর্মে অতিষ্ঠ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও দোকানীরা।

তুরাগের স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে কিশোর গ্যাং নির্মূলে র‌্যাবের ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। এ সকল ভাসমান কিশোর ক্লাব, কিশোর ইউনিটি, কিশোরসংঘ বন্ধে র‌্যাবের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।