ঘুষ না দেয়ায় ঠিকাদারের বিল থেকে ১০ লাখ টাকা কর্তন

প্রকাশিত: ১১:৩৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৯, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিটিআরআই) কার্যাদেশ অনুযায়ী ২৭ লক্ষাধিক টাকার আবাসিক বাসাবাড়ির মেরামত ও সংস্কার কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই করেও বিল পাচ্ছে না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ৪ কর্মকর্তাকে ১ লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার পরও আরও ৫ লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় ওই ঠিকাদারের কাজের বিল থেকে ১০ লক্ষাধিক টাকা কেটে ফেলেন কার্যাদেশ বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট চার কর্মকর্তা-কর্মচারী।

অনৈতিকভাবে বিল কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ঠিকাদার গত বুধবার বিকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুদক চেয়ারম্যান, চা বোর্ড চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযুক্তরা হলেন- শ্রীমঙ্গল চা গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিটিআরআই) সহকারী প্রকৌশলী নয়ন আহমদ, মুখ্য বিজ্ঞানী ড. ইসমাইল হোসেন, তথ্য ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানী সাইফুল ইসলাম ও সহকারী ফ্যাক্টরি করণিক শফিক আহমদ।

ঠিকাদারের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউটের আবাসিক বাসাবাড়ি মেরামত ও সংস্কার কাজের দরপত্রের সর্বনিম্ন দরপত্রদাতা হিসেবে ২৬ জানুয়ারি প্রায় ২৭ লাখ টাকার কাজের চুক্তি স্বাক্ষর করেন বড়লেখার ঠিকাদার জিয়াউর রহমান জুয়েল।

গত ২৮ জানুয়ারি তিনি কার্যাদেশ পান। কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করে নির্ধারিত সময়ের আগেই তিনি কাজ সম্পন্ন করেন। কাজ চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে বিটিআরআই’র কাজ সংশ্লিষ্ট চার কর্মকর্তা-কর্মচারী তাকে নানাভাবে হয়রানি করেন। কাজের বিল প্রদানের জন্য তারা ৬ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। একপর্যায়ে সহকারী প্রকৌশলী নয়ন আহমদ, মুখ্য বিজ্ঞানী ড. ইসমাইল হোসেন, তথ্য ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানী সাইফুল ইসলাম ও সহকারী ফ্যাক্টরি করণিক শফিক আহমদ জোরপূর্বক ১ লাখ টাকা আদায় করেন।

আরও ৫ লাখ টাকা না দিলে পুরো বিল দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। ২০ জুন বিল প্রদানের কথা বলে অফিসে নিয়ে ভয়-ভীতি ও মানসিক হয়রানি করে ম্যাজারমেন্ট বুকে স্বাক্ষর আদায়ের চেষ্টা করেন সহকারী প্রকৌশলী নয়ন। প্রাপ্য বিল ২৬ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮১ টাকার পরিবর্তে ১৬ লাখ ৫৭ হাজার ৩৫৫ টাকার বিল দেয়া হয়। বিলের আকাশ-পাতাল এ তারতম্য এবং মনগড়া ম্যাজারমেন্ট দেখে তিনি বিল গ্রহণে অসম্মতি জানান। তখন নয়নসহ ৪ জন এ টাকা না নিলে পরে একটি টাকাও দেয়া হবে না বলে ভয় দেখান। অবশেষে ব্যাংকঋণের কথা চিন্তা করে বাধ্য হয়ে তিনি বিল গ্রহণ করেন।

ঠিকাদার জিয়াউর রহমান জুয়েল শনিবার মুঠোফোনে বলেন, শতভাগ মানসম্পন্ন কাজ করার পরও তারা আমার কাজের টাকা আটকে রেখে আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক তারা ১ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছে। এরপর আমার ১০ লাখ টাকা রেখে আমাকে ১৬ লাখ ৫৭ হাজার টাকা দেয়। বাকি ১০ লাখ টাকা পেতে আমাকে তাদেরকে আরো ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। না হলে তারা টাকা দেবে না বলে জানিয়েছে। তাদের চাহিদা আরও ৫ লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় অনৈতিকভাবে কাজের ইচ্ছাকৃত ভুল পরিমাপ ধরে বিল তৈরি করে ওরা সংস্কার কাজের বিলের ১০ লক্ষাধিক টাকা কর্তন করেছে। আমি এসব ঘুষের কথা বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগের মাধ্যমে জানানোর ফলে তারা চারজন আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এই বিষয়ে আমি শুক্রবার শ্রীমঙ্গল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।

অভিযুক্ত বিটিআরআই এর সহকারি প্রকৌশলী নয়ন আহমেদকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়ার পর শুক্রবার বিকেলে উনার এসিস্টেন্ড ফোন রিসিভ করে উনার এসিস্টেন্ড স্যার ব্যস্ত আছেন বলে ফোন রেখে দেন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্তদের একজন বিটিআরআই এর উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড. সাইফুল ইসলাম শুক্রবার বলেন, আমি এই বিষয়ে কোন কথা বলতে পারবো না। আমার এই বিষয়ে কোন বক্তব্য নেই যা বলার বিটিআরআই এর পরিচালককে জিজ্ঞেস করেন। ‘ ঘুষ নেওয়া নিয়ে আপনার উপরে আনিত অভিযোগ মিথ্যা নাকি সত্য’ জিজ্ঞেস করলে তিনি কথা এড়িয়ে যান এবং ফোন রেখে দেন।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এর পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী শুক্রবার মুঠোফোনে বলেন, টাকা পয়সা নেয়ার বিষয়টি আমার সাথে রিলেটেড নেই। তাদের ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে আমার জানা নেই। আমার উপর বক্তব্য চাপিয়ে দিলে হবে না। আমি অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি। আমি আমার হাই অথরিটি চা বোর্ডকে জানাচ্ছি। চা বোর্ড তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে।