চলাচলের অযোগ্য আশুলিয়ার শাখা সড়কগুলো

প্রকাশিত: ৬:৪০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক ; দেশের সর্বোচ্চ জনবহুল শিল্পাঞ্চল এলাকা সাভার ও আশুলিয়া। এখানে অনেক শিল্প কারখানা গড়ে ওঠায় অসংখ্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কর্মের আশায় এখানে পাড়ি জমিয়েছেন অনেকেই।

এর মধ্যে সিংহভাগ শ্রমিক বাস করেন আশুলিয়ার ভাদাইল, জামগড়াসহ বিভিন্ন এলাকায়। বর্ষার সময় এলেই প্রতিদিন হাটু পানি ভেঙ্গে কর্মস্থলে যোগ দিতে হয়। আর পোহাতে হয় অসহনীয় দুর্ভোগ।

সাভার উপজেলার আশুলিয়ার জামগড়া চৌরাস্তা থেকে জামগড়া-বাগবাড়ি-কাশিমপুর শাখা সড়কটির বেহাল অবস্থা প্রায় ৫ বছর ধরে। আর নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ডিইপিজেড থেকে ডিইপিজেড-ভাদাইল শাখা সড়ক, ভাদাইল চৌরাস্তা-আনবিক স্কুল এন্ড কলেজ শাখা সড়ক, গোহাইলবাড়ি মেশিনপাড়-দিঘিরপাড় শাখা সড়কগুলোর একই অবস্থা। সড়কগুলো এ অঞ্চলের অন্যতম শাখা সড়ক।

সড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে হাজার হাজার শ্রমিক, শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ। সড়কগুলোতে মাসের ৩০ দিন বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে প্রায়ই হাটু পানির নিচে ও কাদায় যুক্ত থাকে।
সরেজমিনে ওই সড়কগুলো পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, জামগড়া চৌরাস্তা থেকে জামগড়া-বাগবাড়ি-কাশিমপুর শাখা সড়কটির প্রায় দেড় কিলোমিটার খানাখন্দে ও পানি জমে আছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন ওই অঞ্চলের বসবাসকারী হাজার হাজার শ্রমিকসহ এলাকাবাসী। খানাখন্দে ভরা সড়ক পানির নিচে তলিয়ে থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। চরম ঝুঁকি নিয়েই চলাফেরা করছেন শ্রমিকরা।

দুপুরের খাবার খেতে বাসায় যাচ্ছিলেন আসমা। তিনি জানান, এ এলাকায় দীর্ঘ ৫বছর ধরে ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় একটি কারখানায় চাকুরি করি। সব সময় এই সড়কে পানি থাকে। দুপুরের খাবার সময়ে বাসায় ফিরে খেয়ে কাজে যোগ দিতে অনেক কষ্ট হয়। প্রায়ই এ সড়কে চলাচলরত রিকশা ভ্যানে দুর্ঘটনা ঘটে। তাই ভয়ে রিকশা ভ্যানেও যাই না। শ্রমিকদের স্বার্থে সড়কটি মেরামতের জোর দাবি জানাই।

এই সড়কে রিকশা চালান বিপ্লব। তিনি জানান, এই সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে রিকশা প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়। দুই একদিন পর পর মেরামত করতে হয়। খানাখন্দকের কারণে রিকশার রিং বাঁকা হয়ে যায়, বিয়ারিং নষ্ট হয়। এই সড়কে রিকশা চালালে এখন লোকসানে পড়তে হচ্ছে।

ডিইপিজেড-ভাদাইল শাখা সড়ক ও ভাদাইল চৌরাস্তা-আনবিক স্কুল এন্ড কলেজ শাখা সড়কে গিয়েও একই চিত্র চোখে পড়ে। একটু বৃষ্টিতেই সড়কে হাটু পানি জমে থাকে। এ অঞ্চলে হাজারো শ্রমিকের বসবাস। ডিইপিজেড এর অধিকাংশ শ্রমিক ভাদাইল এলাকায় বসবাস করেন। সকাল থেকে ভাদাইল উত্তর পাড়া (সাধু মার্কেট) এলাকার পোশাক শ্রমিকরা অতি কষ্টে ইপিজেডে চাকুরি করতে যান।

রাস্তায় পানি জমে থাকায় কোন যানবাহন চলাচল করতে চায়না। যদিও কোন রিকশা বা অটোরিকশা যেতে রাজি হয় তবে ভাড়া দিতে হয় দ্বিগুণ। এরপরও কর্মস্থলে গিয়ে ভেজা কাপড় পাল্টে কাজে যোগদান করতে হয় তাদের। সঠিক সময় কাজে যোগদান করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। শ্রমিকদেরও হাজিরা বোনাস প্রতি মাসেই কাটা যায় একমাত্র এ রাস্তাটির কারণে।

এ সড়কে দিয়ে চলাচলকারী ডিইপিজেডের শ্রমিক মাহাফুজ জানান, আমি ভাদাইল এলাকায় দীর্ঘ ৭ বছর ধরে বসবাস করি। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের লোকজনের ডিইপিজেডে যাওয়ার একমাত্র এ সড়কটি এতটাই খারাপ অবস্থা যে চলাচল করা মুশকিল। এ অঞ্চলে হাজারো শ্রমিকের বসবাস। অতি কষ্টে দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। তবে এ অবস্থার জন্য অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থাকেই দায়ী করছেন এ অঞ্চলের
মানুষ।

গোহাইলবাড়ি মেশিনপাড়-দিঘিরপাড় শাখা সড়কটিও দীর্ঘ ৪ বছর ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষ অতি কষ্টে বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে চলাচল করে। বর্ষা মৌসুম ছাড়া শুষ্ক মৌসুমেও এ রাস্তাটির অবস্থা থাকে বেহাল।

তবে এ অঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন রাস্তাটির এ অবস্থার জন্য দায়ী করেন দিঘিরপাড় এলাকার ধর্মপুর সিরামিক্সকে। ওই প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত ড্রাম ট্রাক প্রবেশের কারণে রাস্তার এ অবস্থা হয়েছে।

ধামসোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতিন বলেন, ‘বর্তমান সরকার এই এলাকায় বহু রাস্তা নির্মাণ করেছেন। তবে রাস্তার পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বেশি দিন টেকে না। এছাড়া শ্রীপুরের রাস্তা বন্ধ থাকায় পোশাক কারখানার লোড গাড়ি ও ঝুটের গাড়ি এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করার ফলে সড়কটি অযোগ্য হয়ে গেছে।’ শীঘ্রই রাস্তাটি মেরামতের দাবী জানাই।

এ ব্যাপারে স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভাদাইল চৌরাস্তা থেকে আনবিক স্কুল এন্ড কলেজ পর্যন্ত রাস্তাটি এক কিলো দীর্ঘ ও ২০ ফিট প্রস্থ। শ্রীপুরের রাস্তা সংস্কারের সময় এ রাস্তাটিতে পোশাক কারখানার হ্যাভি ওয়েটের যানবাহন চলাচলের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। তবে খুব শীঘ্রই
এলজিডিইর মাধ্যমে রাস্তাটি সংস্কার করা হবে।’

এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা প্রকৌশলী সালেহ আহমেদ বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির একটু উন্নতি হলে উপজেলা পরিষদের সঙ্গে কথা বলে রাস্তার কাজ শুরু করা হবে। সড়কের বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখবো। পাশাপাশি ড্রেনেজ ব্যবস্থার দিকে স্থানীয়দের নজর রাখার অনুরোধ জানাই।’