বিলকুমারীর বুকে ধানের সোনালী শীষ

প্রকাশিত: ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : সপ্তাহের মধ্যেই কাটা পড়বে রাজশাহীর তানোরের বিলকুমারী বিলের আগাম জাতের বোরো ধান, শীষে সোনালী আকার ধারণ করেছে। আবহাওয়া প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত অনুকুলে। কৃষি দপ্তরের সঠিক পরামর্শে ও তদারকিতে রোগেরও আক্রমন নেই। এ কারণে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন কৃষকরা।

যুগযুগ ধরে ওই বিলের জমিতে আগাম জাতের বোরো ধানের চাষাবাদ হয়ে আসছে। অনেক কৃষকের সারা বছরের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন বিলের জমিতে বোরো ধান। ধানপাকা খরতাপ শুরু হয়েছে। বিলজুড়েই সোনালী সবুজ শীষের চমৎকার দৃশ্য। অল্পদিনের মধ্যেই রক্ত ঘামের পরিশ্রমের ধান উঠানে আসবে। আসায় বুক বেধেছেন বিল পাড়ের কৃষক কৃষাণীরা।

জানা গেছে, উপজেলার চান্দুড়িয়া ব্রীজ ঘাট থেকে তানোর পৌর এলাকা হয়ে কামারগাঁ ইউপির বা উপজেলার শেষপ্রান্ত মালশিরা পর্যন্ত বিল কুমারী বিলের অংশ ধরা হয়। যুগযুগ ধরে বিলের জমিতে বোরো চাষ হয়ে থাকে। বিলের মূল অংশ পৌর সদর গুবিরপাড়া, শীতলীপাড়া, কুঠিপাড়ার নিচ অংশকে ধরা হয়। মাত্র ১৫ বিঘা জলাশয় রয়েছে। তাছাড়া, বাকি এরিয়া ধানী জমিতে রুপান্তর করা হয়। মাঝ দিয়ে সরু খাল রয়েছে কয়েকভাগে। এ খালের পানিই বিলের নিচু জমিতে সেচের ভরসা।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কামারগাঁ ইউপির মালশিরা, মাড়িয়া, জমসেদপুর মাদারিপুর, মির্জাপুর,ভবানীপুর, বাতাসপুর, পারিশো দূর্গাপুর, শ্রীখন্ডা, দমদমা, মজুমদারপাড়া, কামারগাঁ, মহাদেবপুর, হাতিশাইল ও তানোর পৌর এলাকার তালন্দ, সুমাসপুর, হরিদেবপুর, গোকুল, চাপড়া, ধানতৈড়, গুবিরপাড়া, সিন্দুকাই, হিন্দুপাড়া, কুঠিপাড়া, তানোরপাড়া, গোল্লাপাড়া, আমশো, জিওল, চাদপুর, বুরুজ, হাবিবনগর, কালিগঞ্জ, মাসিন্দা, চান্দুড়িয়া ইউপির, শিবনা দমদমা, চান্দুড়িয়া, কলমা ইউপির কুযিশহর, চন্দনকোঠা এলাকার নিচে বিলকুমারী বিলের জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে শুরু হবে ধান কাটা মাড়ায়।

এদিকে, বিলের নিচু জমি খাস, সেই খাস জমিতে ভূমিহীন কৃষকরা অল্প খরচে চাষ করে বছরের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

গুবিরপাড়া গ্রামের কৃষক ফারুক জানান, প্রায় এক বিঘার বেশি জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। খরচ খুব একটা হয় না। ধানের চেহারা ভালোই আছে। ইদের দু-একদিন পর কাটা পড়বে। বিঘায় ২০-২৫ মণ ফলন হয়। তবে বৃষ্টি হলে ফলন পাওয়া যায় না। শুধু আমি না অনেক দরিদ্র কৃষকরা নিচের জমি রোপণ করেন। এবার আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকুলে আছে।

কৃষক সাহেব আলী জানান, ঈদের আগেই কিছু কাটা হচ্ছে। বিলের জমিতে ফলন বাম্পার হয়। পাঁচ বিঘা জমির ধান পাক ধরেছে। ধান পাকার মতো খরতাপ শুরু হয়েছে। এরকম আবহাওয়া থাকলে সুষ্ঠুভাবে ধান ঘরে উঠবে। ফলনও ভালো পাব ও দামও ভালো আছে। তবে বৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিপাত হয়, তাহলে বিপদের শেষ থাকবে না।

কৃষক বকুল জানান, বিলের শীতলীপাড়ার নিচে প্রায় চার বিঘা জমির ধানে পাক ধরেছে। ইদের আগে শ্রমিক পেলে কাটা হবে, নচেৎ ইদের পরদিন থেকেই কাটতে হবে।

কামারগাঁ ইউনিয়নের কৃষকরা জানান, তারা সবার আগে ধান রোপণ করেন। দু-চারদিনের মধ্যে কাটা শুরু হবে। কারণ সামান্য বৃষ্টি হলে ইউনিয়েনের জমিগুলো আগে ঢুবে যায়। এজন্য সবাই আগেই রোপণ করে এবং আগেই কাটা-মাড়ায় শুরু হয়।

কামারগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি ফরহাদ জানান, ধানগাছে প্রচুর শীষ এসেছে, চেহেরাও ভালো আছে। দু-চার দিনের মধ্যে কৃষকরা ধান কাটা শুরু করবেন। তবে ঈদ চলে আসায় দু-একদিন এদিক ওদিক হতে পারে। বিলের জমিতে ফলন ও রঙ ভালো হওয়ায় দামও ভালো পাওয়া যায়। আবহাওয়া এরকম থাকলে তারা বাম্পার ফলন ও লাভ করতে পারবেন। আর যদি ঝড়-বৃষ্টি হয় তাহলে বিপদের শেষ থাকবে না। কারণ সার-কীটনাশকের দাম বেশি, এজন্য যেকোন বছরের তুলনায় এ বছর খরচ কিছুটা বেশি হয়েছে।

তানোর পৌরসভার মেয়র ইমরুল হক জানান, এমন আবহাওয়া চলতে থাকলে সুষ্ঠুভাবে কৃষকরা তাদের কষ্টের সোনালী ফসল ধান ঘরে তুলতে পারবে। পৌর এলাকার কৃষকদের বছরের খাবারের ভরসা বিলের জমি। এ জমি থেকে যে পরিমাণ ধান পায় সেটা বছরের খাবার হয়। বিশেষ করে কুঠিপাড়া, শীতলীপাড়া, হিন্দুপাড়া ও গুবিরপাড়া গ্রামের অনেক ভূমিহীনরা বিলের নিচুঁ জমি রোপণ করে থাকেন। সেই রোপণকৃত জমি থেকে যে পরিমাণ ধান পায় সেটা বছরের খাবার ও খড় দিয়ে জালানি এবং গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। আবহাওয়ার ভালো থাকবে বলে তো সবাই মনে করছেন। তবে বৈশাখের ঝড়-বৃষ্টি নিয়ে তো একটা শঙ্কা সবারও আছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, উপজেলার চান্দুড়িয়া ব্রীজ ঘাট থেকে কামারগাঁ ইউপির মালশিরা গ্রাম বা চৌবাড়িয়া ব্রীজ পর্য়ন্ত ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। কৃষদের জন্য নিয়োমিত মাঠে থেকে কাজ করা হয়েছে। একাধিক মাঠ দিবস পালন করার কারণে ধানে রোগবালা নেই। আবহাওয়া অনুকুলে আছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ফলন ভালো হবে এবং দামও ভালো আছে। এবারে উপজেলায় ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে।