রাজিবপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ৩০ বসতবাড়ি বিলীন, আশঙ্কায় ৫০ পরিবার

প্রকাশিত: ৫:৫৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : গত এক সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীব্র স্রোতে অন্তত ৩০টি বশতবাড়িসহ ১০ একর আবাদী কৃষি জমি নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদসহ অর্ধশত বসতবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কেউ কেউ অন্যের বাড়ির আঙিনায়, রাস্তার ধারে, আবার কেউ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তারা পায়নি সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা। চরম হতাশা দেখা দিয়েছে নদের তীরে বসবাসরত মানুষদের মাঝে।

শুক্রবার সরেজমিনে কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ঢাকাইয়া পাড়া গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, ইউনুছ আলী, জরিনা বেওয়া, ববিতা বেগম, কেশমত আলী, আলী হোসেন, ময়নাল হক, আনোয়ার হোসেন, খয়রুদ্দিন, আলেব খাঁ, আবুশামা মাষ্টার, ইসহাক আলী, জব্বার আলী, জামাল উদ্দিন, শুক্কুর আলী, রফিকুল ইসলাম, কামাল হোসেন, জনাব আলী, সাইফুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, খুশি আলম, গোলাম হোসেন, জামাল হোসেন, ছালাম, কালামসহ অন্তত ৩০টি পরিবারের বাড়ি নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের তীব্রতায় আরও অর্ধশত পরিবার হতাশায় দিন গুণছে। এ ব্যাপারে ভিটেমাটি হারানো ভুক্তভোগীরা সরকারিভাবে সহযোগিতার আহবান জানিয়েছেন। ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সুদৃষ্টি দিয়ে তাদের রক্ষার দারিও জানিয়েছেন তারা।

ভাঙনের শিকার স্থানীয় জামাল হোসেন, কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, জরিনা বেওয়া জানান, বাড়ির ভিটা ছাড়া তাদের আর কোনো জায়গা-জমি নাই। তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই। সরকার যেন তাদের থাকার জায়গা করে দেয়, তাদের মত আর কেউ যেন ভাঙনের কবলে নিঃস্ব না হয় এমনই দাবি তাদের।

ববিতা বেগম (৪৫) নামের এক গৃহীনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “বাপরে আংগোর সব কাইরা নিছে নদী। এতিম দুইডা বাচ্চা নিয়া কোন্ধ জাগায় থাকমু, থাকার জাগা নাই, খাবার নাই। এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র নাই। আংগোর ডাংধরা ইউনিয়নের কেউ আইসে না, আংগোর কেউ দেহে না। এমপি, মুনতুরি, মেম্বার-চেয়ারম্যান কেউই আইসে না, দেহেও না। আংগোর বাঁচান।”

চরনেওয়াজী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমার বিদ্যালয়টি নদী ভাঙনের হুমকির মুখে। নদী থেকে বিদ্যালয়ের দূরুত্ব মাত্র ১৫ মিটার। দ্রুত কর্যকর ব্যবস্থা না নিলে দু-এক দিনের মধ্যে বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে যাবে। নদী শাসনের কাজ চলছে, কিন্তু অব্যবস্থাপনার কারণে রাজিবপুর ও মোহনগঞ্জ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হলেও আমাদের ঢাকাইয়া পাড়ায় তা ফেলা হয় নাই। যার ফলে এ জায়গাতে তীব্র ভাঙ সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই সরকারের প্রতি দ্রুত ও কার্যকর ব্যাবস্থার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।”

এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, “নদী ভাঙনে আমার ইউনিনের দুই তৃয়াংশ বিলীন হয়েছে আগেই। এ বছর নদী শাসনের কাজ চলমান রয়েছে। ঢাকাইয়া পাড়া আরএফএল কোম্পানির স্থান থেকে রাজিবপুর করাতি পাড়া পর্যন্ত কাজ হয় নাই। সঠিক নজরদারি না থাকায় ধীর গতিতে কাজ চলছে। তাই ওই এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই ঢাকাইয়া পাড়া জামালপুর এরিয়ার মধ্যে, আমার রাজিবপুর এরিয়ায় না। তারপরও নদী গর্ভে বিলীন হওয়া পরিবারগুলোকে সহযোগিতার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। দ্রুত তাদের সহযোগিতা করা হবে।”