রাজশাহীতে পাট জাগ দেয়া নিয়ে বিপাকে চাষিরা

প্রকাশিত: ৪:৪৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩০, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : ভরা বর্ষাকালে প্রতিবছরই রাজশাহীতে কম বেশি বৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে প্রকৃতি। শ্রাবণ মাসের অর্ধেক শেষ হলেও তপ্ত রোদে পুড়ছে পুরো জেলা। চৈত্র কিংবা জ্যৈষ্ঠের ছদ্মবেশে পুড়িয়ে চলছে চারদিক। টানা তাপপ্রবাহে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যেন একেবারেই অচল হয়ে পড়েছে।

প্রকৃতির এমন খরায় মনে হচ্ছে- শ্রাবণের শুরু নয়; যেন মধ্য জ্যৈষ্ঠের অগ্নিমূর্তি। পুরো আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসের অর্ধেক শেষ হলেও রাজশাহীতে খুব বেশি বৃষ্টির দেখা মেলেনি। ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলে বর্ষাকালেও খালবিলে নেই পানি। একারণে রাজশাহীতে পাট কেটে তা জাগ দেয়া নিয়ে এই অঞ্চলের কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে বৃষ্টির দেখা না মিললে শত শত হেক্টর জমিতে পাটের বাম্পার ফলন হওয়া সত্ত্বেও জাগ দিতে না পারায় চাষিদের চরম লোকসান গুনতে হবে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে, আষাঢ় মাসের শেষ দিনসহ ওই মাসে মাত্র ৮ দিন বৃষ্টি হয়েছে। এতে গত বছরের থেকে এবার আষাঢ় মাসেই বৃষ্টি কমেছে ৩১৫ মিলিমিটার। আর গত আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়েছিলো ২৫ দিন। বৃষ্টিহীন ছিল মাত্র পাঁচদিন। বৃষ্টিপাত হয় ৩৫৪ মিলিমিটার। চলতি বছরে আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৮ দিন যা ৩৯ দশমিক ২ মিলিমিটার। তবে সেটাও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু সময়ের জন্য। এ ৮ দিনের মধ্যে গত ১৮ জুন সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ দশমিক ৯ মিলিমিটার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ জুন, ৯ দশমিক ১ মিলিমিটার। এরপর আর ৩ দশমিক ৬ মিলিমিটারের উপরে ওঠেনি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। শ্রাবণ মাসেরও একই অবস্থা

রাজশাহী আবহওয়া অফিসের জৈষ্ঠ্য পর্যবেক্ষক গাউসুজ্জামান জানান, রাজশাহীতে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার বৃষ্টিপাত অনেক কমেছে। এটা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হচ্ছে। কেননা রাজশাহীতে যে পরিমাণ গাছ লাগানো হচ্ছে তার চেয়ে কাটছি বেশি। আবার নদীর নাব্যতাও কমেছে। সবমিলে জলবায়ুর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়াই আবহওয়ার খামখেয়ালিপনা বাড়ছে।

জেলার পাটচাষিরা বলছেন, পুরো আষাঢ় মাস ও শ্রাবণ মাসের অর্ধেক পার হলেও বৃষ্টি না হওয়ায় জেলার দুর্গাপুর, পুঠিয়া, তানোর, বাগমারাসহ বিভিন্ন উপজেলার খালবিলে নদী থেকে পানি প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে এসব অঞ্চলের খালবিল প্রায় শুকনো। যার ফলে পাট জাগ দিতে পারছেন না চাষিরা।

পবা উপজেলার দুয়ারি এলাকার পাটচাষি আকবর আলী বলেন, অন্যান্য বছর এ সময় বারনই নদীতে পর্যাপ্ত পানি থাকে। কিন্তু এবার বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় এই নদীতে নেই পানি। তাই পাট কেটে জমিতেই স্তুপ করে রাখা হয়েছে। আবার অনেকেই সামান্য পানিতে কচুরি পানা সরিয়ে তার মধ্যেই পাট জাগ দেয়ার ব্যবস্থা করছেন।

শুধু পবা উপজেলার বিভিন্ন এলাকাতেই এমন সমস্যা তা নয়; বরং রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে পানির জন্য হা-হা-কার অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে চাষিরা পাট জাগ দেয়া নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে- ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজশাহীতে পাট বিক্রি হয়েছিলো- সাড়ে ৫ হাজার টাকা মণ। আর পাট ওঠার শুরুর দিকে ১৬ শ থেকে ১৮ শ বা ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। এমন দামের কারণেই প্রতিবছর পাটচাষে বেশি পরিমাণে ঝুঁকছেন চাষিরা। গত বছর ১৮ হাজার ১৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। আর ২০২০ সালে ১৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে, ২০১৯ সালে ১৩ হাজার ৮৪৬ হেক্টর জমিতে পাটের চাষাবাদ হয়েছিলো। অর্থাৎ প্রতিবছরই পাট চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ১৮ হাজার ৮ শ ৮২ হেক্টর হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, চাষিরা পাটের উপযুক্ত দাম পাওয়ায় রাজশাহী অঞ্চলে দিন দিন পাটচাষ বাড়ছে। জুলাই মাসের প্রথম দিক থেকে জেলার সর্বত্র পাট কাটা শুরু হয়েছে। যা পর্যায়ক্রমে আগষ্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পাট কাটা চলবে। তবে এবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় জেলার সর্বত্র ডোবা-নালা, খাল-বিল ও জলাশয়ে পানি না থাকায় পাট জাগ দেয়া নিয়ে বপাকে পড়েছেন কৃষকরা। অনেক কৃষক জমি থেকে পাট কেটে ভ্যান ভাড়া করে ৪/৫ কিলোমিটার দূরে নদীতে ও দূরবর্তী বিভিন্ন জলাশয়ে নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন।