আমের রাজধানীতে লিচুর রাজত্ব

প্রকাশিত: ৭:২০ অপরাহ্ণ, জুন ১২, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : লিচুময় হয়ে উঠেছে আমের রাজধানীখ্যাত রাজশাহী। বাসস্ট্যান্ডে লিচু, সিঅ্যান্ডজি চালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে লিচু, ফুটপাতে লিচু, অফিস-আদালতের বারান্দায়ও লিচু। বাজারে তো বটেই।

পদ্মার তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা ৯৬.৭২ বর্গকিলোমিটারের এই শহরে এখন লিচু আর লিচু। পথে-প্রান্তরে চোখ মেলতেই ভেসে উঠছে বাহারি রঙ ও জাতের লিচু। হাত বাড়ালেই মিলছে লিচুর থোকা।

জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকেই এবার রাজশাহীর বাজারে রাজত্ব করছে মৌসুমি এই ফল। অল্প সময় গাছে ও বাজারে থাকে বলে বিজ্ঞানীরা লিচুকে বলেন অতিথি ফল। তবে এরই মধ্যে বাজারে আম উঠলেও বিদায় নেয়ার নাম নেই অতিথি ফলের। দামও নাগালের মধ্যে। তাই লিচুর স্বাদ চাখতে পারছেন সাধারণ ক্রেতারাও।

রাজশাহীর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্রীষ্মকালীন ফল লিচু প্রচুর পরিমাণ আমদানির কারণে এবার দাম ও লাভের অঙ্ক দুটোই কমে গেছে তাদের। তবে এতে ক্রেতাদের মুখে হাসি ফুটেছে।

মহানগরীর সাহেববাজার এলাকার ফল ব্যবসায়ী শাহীন শেখ বলেন, প্রতিবার আম ওঠার প্রথম সপ্তাহেই লিচু হাওয়া হয়ে যায়। যৎসামান্য লিচু পাওয়া গেলেও দাম দ্বিগুণ চড়ে যায়। কিন্তু এবার বাজারের চিত্র উল্টো। পথে-ঘাটে ভ্যানের ওপর বোম্বে জাতের লিচু পাওয়া যাচ্ছে। দাম হাতের নাগালেই।

উৎপাদন বেশি হওয়ায় এবার প্রতি হাজার লিচু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকায়। আর বাজারে ওঠার পর একশ লিচু খুচরা বিক্রি হচ্ছে আকার ভেদে ২২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায়। কিন্তু, আমদানি বেশি হওয়ায় লিচুর দাম কিছুটা কম হলেও সীমিত লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

শিরোইল বাসস্ট্যান্ডে লিচু কেনার সময় শালবাগান এলাকার মঈনুদ্দিন আহমেদ জানান, দীর্ঘ ৩/৪ বছর পর রাজশাহীর বাজারে লিচুর দাম এতো কম! প্রথম দিকে একশ লিচু ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও বর্তমানে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যেই সেই লিচু পাওয়া যাচ্ছে। স্বাদ ও গুণেও সেরা। তাই যেখানে পুরো মৌসুমে তিনি দুই থেকে তিন বার লিচু কিনতেন, সেখানে এবার সপ্তাহেই ৩/৪ দিন কিনছেন। লিচুর স্বাদে এবার তৃপ্তি মিটছে।

এদিকে, বাম্পার ফলন হওয়ায় বাজারে এখন প্রচুর লিচুর সমারোহ। কিন্তু দাম কমলেও এসব লিচু আগের মতো আর দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে পারছেন না স্বজনরা। কারণ, কুরিয়ার সার্ভিসগুলো আগের মতো লিচুর ঝুড়ি আর বুকিং নিতে চাচ্ছেন না। বিশেষ তদবির করেই পাঠাতে হচ্ছে লিচু।

মহানগরীর শালবাগানের সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের সহকারী শাখা ব্যবস্থাপক ইকবাল হোসেন জানান, এখন আমের ঝুঁড়িতে বেশি লোড হচ্ছে তাদের গাড়িতে। এ অবস্থায় লিচুর ঝুঁড়ি নিচে পড়ে যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই। ফলে নরম ফলগুলো আমের ঝুঁড়ির চাপায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই তারা এর ঝুঁঁকি নিতে চাচ্ছেন না। কেউ নিজ দায়িত্বে লিচু পাঠাতে চাইলেই কেবল তা বুকিং নেয়া হচ্ছে।

মহানগরী ঘুরে দেখা গেছে, সাহেববাজার ও এর প্রতিটি রাস্তা, ফুটপাত, নিউমার্কেট, লক্ষ্মীপুর, শালবাগান, হড়গ্রাম বাজার, কোর্ট স্টেশন বাজার, উপ-শহর, বিনোদপুর, নওদাপাড়া, তেরখাদিয়াসহ পাড়া-মহল্লার গলিপথেও রিকশাভ্যানে ডালি বা ঢাকিতে পসরা সাজিয়ে বিক্রি হচ্ছে লিচু।

এর মধ্যে উন্নতমানের জাত হিসেবে পরিচিত বোম্বাই, মাদ্রাজি, কাদমি, মোজাফফরপুরি, বেদানা, কালীবাড়ি, মঙ্গলবাড়ি, চায়না-৩, বারি-১, বারি-২ ও বারি-৩ জাতের লিচুই বেশি। এগুলো যেমন রসালো, খেতেও তেমন সুস্বাদু। এছাড়া এসব লিচুর উৎপাদনও বেশি, আকারও বেশ বড়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি জানান, এ বছর রাজশাহীতে লিচু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৯৫ হেক্টর জমিতে। যার গড় ফলন প্রতি হেক্টরে আট মেট্রিক টন। কিন্তু এবারের আবহাওয়া কিছুটা লিচু উপযোগী হওয়ায় ফলন বেশি হয়েছে।