রাজশাহীতে বন্যা-জলাবদ্ধতায় মাছ ও ফসলের ৪৫ কোটি টাকা ক্ষতি দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম প্রকাশিত: ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৯, ২০২০ নিজস্ব প্রতিবেদক ; উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সৃষ্ট বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে এবার রাজশাহীতে বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে বিভিন্ন এলাকায় পুকুরে চাষকৃত মাছ। কৃষি ও মৎস্য বিভাগের হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। সরকার এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের প্রণোদনা দিতে শুরু করেছে। চাষি ও কৃষিবিদদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ও বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। এই বন্যায় বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আউশ ধান, পান, বিভিন্ন সবজি, পেঁপে, মরিচ, ভুট্টা ও আমনের বীজতলা। ভেসে গেছে বিভিন্ন এলাকার পুকুরে ও বিলে চাষকৃত মাছ। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খাল বিলের পানি নিষ্কাশনের মুখ বন্ধ করে অপরিকল্পিতভাবে হাজার হাজার পুকুর খনন করা হয়েছে। এর ফলে এবার বৃষ্টির পানি বের হবার রাস্তা না পাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক জলাবদ্ধতার। এতে শুধু খেতের ফসলই নষ্ট হয়নি। অনেক এলাকার বাড়ি ঘরে এখনও পানি জমে আছে। পানি নিষ্কাশনের খাল, বিলের মুখে পুকুর খনন করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করায় বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। নওহাটার ভুট্টাচাষি নিজামুল ইসলাম জানান, অতি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে তার আড়াই বিঘা জমির ভুট্টা নষ্ট হয়েছে। এতে তার প্রায় ২০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। জলাবদ্ধতায় তার এলাকার অনেক কৃষকের ভুট্টা, পেঁপেসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষতি হয়েছে। বাগমারা উপজেলার আবু বাককার সুজন জানান, এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত, কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় দশ কোটি টাকার। এর মধ্যে কৃষিখাতে ২ কোটি টাকা এবং মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি টাকা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মওসুমে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে ১৭ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে আউশ এবং ৮৪০ হেক্টর জমিতে রোপা ও আমন ধান চাষ হয়েছিলো। এ ছাড়া ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি খেত, পেঁপে বাগান ও পানবরজ ছিল। এর মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত বন্যায় সোনাডাঙা, নরদাশ, দ্বীপপুর, কাচারীকোয়ালীপাড়া, বাসুপাড়া, বড়বিহানালী ও ঝিকরা ইউনিয়নের ৫ হাজার ১০৫ হেক্টর জমির ধান, সবজি, পেঁপে ও পানবরজসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে যায়। এতে কৃষি খাতে প্রায় ২ কোটি টাকার ফসল ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া অর্ধশত পুকুর ও বিল ডুবে প্রায় ৮ কোটি টাকার চাষকৃত মাছ ভেসে গেছে। এ হিসাবে কৃষি ও মৎস্য খাতে মোট দশ কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। সোনাডাঙা ইউনিয়নের হাজীপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, তিনি চলতি মওসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে আউশ ও আমন ধান চাষ করেছিলেন। বন্যার পানিতে সব জমির ধান তলিয়ে যাওয়ায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নরদাশ ইউনিয়নের মনোপাড়া গ্রামের কৃষক আবু জাফর বলেন, তার সাত বিঘা জমির রোপা, আমন ও আউশ ধান বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এখন দিশেহারা। দ্বীপপুর ইউনিয়নের লাউবাড়িয়া গ্রামের কৃষক জেহের আলী ও আব্দুল মালেকও একইভাবে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে ভরে যায় উপজেলার সব নদী-নালা ও খাল-বিল। সেই সাথে মান্দায় টেংরা নামক স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ফুঁসে উঠে বাগমারার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ফকিরণী ও বারনই নদীর পানি। পানির প্রবল চাপে একের পর এক ফকিরণী ও বারনই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙতে শুরু করে। এক রাতের মধ্যে তলিয়ে যায় সোনাডাঙা, দ্বীপপুর, বড়বিহানালী ও ঝিকরাসহ ৭টি ইউনিয়নের অর্ধ শতাধিক গ্রাম। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় দ্বীপপুর, সোনাডাঙা, কাচারী কোয়ালীপাড়া ও ঝিকরা ইউনিয়নে ২৫টি পুকুর ডুবে গেছে। এসব পুকুর নেট দিয়ে ঘিরে মাছ আটকানোর চেষ্টা করা হলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। বন্যার পানিতে পুকুরগুলোর চাষকৃত সব মাছ ভেসে গেছে। এছাড়া কয়েকটি বিল ডুবে যাওয়ায় ওইসব বিলের চাষকৃত মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় আট কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। দ্বীপপুর ইউনিয়নের নানসোর গ্রামের মৎস্যচাষি গিয়াস উদ্দিন জানান, বন্যায় তাদের চাষকৃত দুটি বিলের সব মাছ ভেসে গেছে। এতে তাদের প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাগমারা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন বলেন, হঠাৎ বন্যা হওয়ায় মৎস্যচাষি ও পুকুর মালিকরা সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেননি। এ কারণে চাষকৃত মাছ ভেসে যাওয়ায় এখানে মৎস্যখাতে প্রায় আট কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি বন্যা ও জলাবদ্ধতায় এখানে কৃষির যে ক্ষতি হয়েছে তা টাকার অংকে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে আউশ ধান ২ হাজার ৭৫৮ হেক্টর, পান ৪৫ হেক্টর, সবজি ৩৬, মরিচ ৪ ও আমনের বীজতলা ১ হেক্টর। মৎস্য বিভাগ জানায় তাদের ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি টাকার ওপরে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক সাহা জানান, এবারের বন্যায় এখানে মাছের যে ক্ষতি হয়েছে তা মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় প্রণোদনা দেবার সিদ্ধান্ত নিলে তা ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের দেয়া হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রাজশাহীর উপ-পরিচালক শামছুল হক বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঘুরে দাঁড়াতে সরকার প্রণোদনা দেয়া শুরু করেছে। এর আওতায় বাগমারায় আমন মৌসুমে রোপণের জন্য ১শ ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। জেলার ৪ হাজার কৃষক পাচ্ছেন মাসকালাইয়ের বীজ ও সার এবং ৩ হাজার ২’শ কৃষক পাচ্ছেন বিভিন্ন সবজি বীজ। এতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ফসলে আরও সহায়তা দেয়া হবে। Share this:FacebookX Related posts: রাজশাহীতে জমে উঠছে বানেশ্বর আমের হাট চাটমোহরে ধানের বাজারে নেই প্রত্যাশিত দাম, হতাশ কৃষক জয়পুরহাটে ব্রোকলি চাষে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছে কৃষক দেলোয়ার আত্রাইয়ে প্রকৃতি কন্যা সেজেছে গায়ে হলুদ বরণ সাজে ধান ক্রয়ে অনিয়ম সহ্য করা হবে না : খাদ্যমন্ত্রী রাজশাহীতে ‘রয়েল চিটিং গ্রুপের’ ৪ প্রতারক গ্রেফতার নওগাঁয় করলা চাষে ভাগ্যের বদল হয়েছে কৃষক জলিলের রাজশাহীতে ইভিএম ছিনতাইয়ের ঘটনায় ২১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা ইরি-বোরো ধান রোপণে ব্যস্ত কৃষক রাজশাহীতে মিথ্যা মামলা করে ধরা খেলেন বাদী মধ্য প্রাচ্যের সবজি স্কোয়াশ চাষ হচ্ছে এখন আত্রাইয়ের মাটিতে রাজশাহীতে ১৪জন সেরা করদাতাকে সংবর্ধনা প্রদান SHARES Matched Content কৃষি বিষয়: ৪৫ কোটি টাকা ক্ষতিবন্যা-জলাবদ্ধতায়মাছ ও ফসলেররাজশাহীতে