হালুয়াঘাটের ধারা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ তৌফিকুর রহমান সাময়িক বরখাস্ত

প্রকাশিত: ৮:৪৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০২৩

জোটন চন্দ্র ঘোষ, হালুয়াঘাট : ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ধারা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ তৌফিকুর রহমানের বিরুদ্বে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকে ২ কোটি ৪২ লক্ষ ৩২ হাজার ৭শত ১৯ টাকা অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতিষ্ঠানের স্ম্পদ তছরুপ,কলেজের স্বার্থপরিপন্থী কার্যকলাপের অভিযোগে গত ২৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি এমদাদুল হক (সাবেক এমপি) সাময়িক বরখাস্ত করেন।

বুধবার (২৬ এপ্রিল) গভর্নিং বডির সভায় সর্বসন্মতিক্রমে এই সিদান্ত গৃহীত হয়। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি এমদাদুল হক (সাবেক এমপি) সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করণের পত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর কলেজ পরির্দশক বরাবর তিনটি কারণ দর্শানোর নোটিশ, তদন্ত প্রতিবেদন ও সাময়িক বরখাস্ত করণের রেজুলেশনের সত্যায়িত কপিসহ প্রেরণ করেন এবং অনুলিপি সহকারী রেজিষ্টার এবং ভাইস চ্যান্সেলর এর একান্ত সচিব, সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক , জেলা প্রশাসক , কলেজ অধ্যক্ষ তৌফিকুর রহমানসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করেন। একই সভার সিদান্ত অনুযায়ী বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রঞ্জন বসাককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দ্বায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০১৬ সনের ১২ এপ্রিল অত্র কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন তৌফিকুর রহমান। বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় তিন হাজার ছাত্র/ছাত্রী রয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং এর সহযোগিতায় গত ২০১৭ সালে অত্র কলেজে চারটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। কলেজটিতে বর্তমানে প্রায় ৭৯ জন শিক্ষক/কর্মচারি রয়েছেন। বিশাল নিয়োগ বাণিজ্য করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জনশ্রুতি রয়েছে। যেখানে বিষয় ভিত্তিক ডিগ্রি পর্যায়ে সর্বোচ্চ তিন জন করে নিয়োগ দেওয়া যায়। সেখানে ইংরেজি, ইসলাম শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে চার জন করে নিয়োগ দেন।

সম্প্রতি ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারি সুলতানের সহযোগিতায় অধ্যক্ষ তৌফিকুর রহমান কলেজের আলমিরা ভেঙ্গে প্রায় ৪৩টি মুড়িবইসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রাদি নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। অধ্যক্ষ যোগদানের পর থেকে স্থানীয় ও সরকারি ভাবে কোন অডিট করা হয়নি। গভর্নিং বডির সিদান্তকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে মনগড়া ভাবে কলেজটিতে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। নাম প্রকাশে অনিছুক একাদিক অধ্যাপকগণ জানান,এমপিও ভুক্তির নামে অর্থ আদায়,নিয়োগ বাণিজ্য,কলেজের অভ্যান্তরীন আয় থেকে অর্থ হাতিয়ে নের্ন। স্যারের বিরোদ্বে মূখ খোললে বেতন ভাতাদী বন্ধ করার হুমকি প্রর্দশন করেন। যে কোন সময় কলেজটিতে অপৃতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

গভর্নিং বডির সিদান্ত অনুযায়ী কলেজের অডিট করার জন্য কলেজের প্রফেসার খন্দকার মোসাদিকুর রহমানকে আহবায়ক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট অডিট কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত অডিট কমিটি সম্প্রতি ৪ বছরের একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।

অডিট কমিটির আহবায়ক প্রফেসার খন্দকার মোসাদিকুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, কলেজ থেকে ভুয়া বিল ভাউচার ও ডবল ভাউচার করে ২ কোটি ৪২ লক্ষ ৩২ হাজার ৭শত ১৯ টাকা অর্থ আত্মসাৎ করেন অধ্যক্ষ তৌফিকুর রহমান। এছাড়াও ৭ জন শিক্ষক কর্মচারির নিকট থেকে প্রায় ৪১ লক্ষ টাকার বিশাল নিয়োগ বাণিজ্য করেন। কলেজের পুরাতন ৯ টি মেহগনি গাছ বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। আঙ্গুল ফোলে কলাগাছ বনে গেছেন তিনি।

আরো জানা যায়, ময়মনসিংহ শহরের প্রাণ কেন্দ্র জেলা স্কুল মোড়ের ইব্রাহীম টাওয়ার ও গুলকিবাড়ি শ্যামলী টাওয়ারে রয়েছে তার ২টি আলিসান ফ্লাট, নালিতাবাড়ী উপজেলার বাগিচাপুর গ্রামের নিজ বাড়িতেও ব্যায় করেছেন প্রায় অর্ধ কোটি টাকা এছাড়াও রয়েছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ২টি অত্যাধুনিক হায়েচ গাড়ী যার একটি গাড়ীর নাম্বার ঢাকা মেট্রো ন-২০-২৮১৮ অপর গাড়ীটির নাম্বার সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরবর্তি রিপোর্টে প্রদান করা হবে।

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ তৌফিকুর রহমান বলেন, তার বিরোদ্বে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। তিনি গভর্নিং বডির সভাপতির পরিবর্তন চেয়েছিলেন বিধায় তার বিরোদ্বে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি এমদাদুল হক মকুল (সাবেক এমপি) এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকে ২ কোটি ৪২ লক্ষ ৩২ হাজার ৭শত ১৯ টাকা অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ তছরুপ,কলেজের স্বার্থপরিপন্থী কার্যকলাপের অভিযোগে গত ২৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভায় সর্বসন্মতিক্রমে অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তৌফিকুর রহমানের বিরুদ্বে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। শিঘ্রই ডিজির প্রতিনিধির উপস্থিতিতে চুড়ান্ত ভাবে বরখাস্ত করা হবে।