বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাষ্ট্রের অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হবে: প্রধান বিচারপতি

প্রকাশিত: ৮:৪৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : প্রধান বিচরপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ফরিদপুরে বলেছেন, ইদানিংকালে সবার মধ্যে কেমন যেন একটা অসহনশীলতা দেখা যাচ্ছে। এ অসহিষ্ণুুতা বিচার বিভাগকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে, রাষ্ট্র্রের অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তা হলে আমরা আইনের শাসনের জন্য যে সংগ্রাম করে যাচ্ছি তা প্রতিষ্ঠা করতে পারবো না।

আজ রবিবার বেলা ১১টার দিতে ফরিদপুর আইনজীবী সমিতি ভবনে আইনজীবীদের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে কথাগুলি বলেন প্রধান বিচারপতি।এ সভায় সভাপতিত্ব করে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ওহিদুজ্জামান। পরিচালনা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ

সম্পাদক জাহিদ ব্যাপারি।প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের ভাবতে হবে আপনারা আদালতের অংশ। আপনাদের সাহায্য ছাড়া আদালত ঠিকমত সচল রাখা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, আমরা আইনজীবী ও বিচারকরা মিলে এক সাথে চেষ্টা করতে চাই মামলার জট যাতে ছেড়ে যায়। আমি মনে করি জুডিশিয়ালীতে বিচারক যদি হয় ডান হাত তাহলে আইনজীবী বাম হাত। এক হাত যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে কাজ ঠিক মত হবে না।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। এদেশের মানুষ এক সময় জবের ছাতু, কচু ঘেছু খেত। দেশের স্বাধীনতা আমদের অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা আর আগের জায়গায় নেই। অনেক সড়ক নির্মিত হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক বেশী আশাবাদী মানুষ, আমিও আশাবাদী । আস্তে আস্তে ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।

প্রধান বিচারপতি বলেন, দেশের তিনটি স্তম্ভ বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগি ও আইন বিভাগ। এর কোন একটা যদি দুর্বল হয় তাহলে সে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, গণতন্ত্র দুর্বল হয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয় না। তাই আসুন আমরা সকলে সম্মেলিত চেষ্টায় বিচার বিভাগকে এগিয়ে নিয়ে যাই।

এর আগে প্রধান বিচারপতি ফরিদপুরে জজ কোর্ট প্রাঙ্গনে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নামে একটি বিচার নিতে আসা ব্যাক্তিদের জন্য একটি বিশ্রামাগার স্থাপনের জন্য ভিত্তি ফলক উন্মোচন করেন।

ওই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধান বিচার পতি বলেন, দেশে ৪০ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলাগুলিতে কমপক্ষে চার কোটি লোক জড়িত। আমরা ব্িযল জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। যারা বিচার চাইতে আসেনস তারা এই দেশের মালিক। তাদের কথা চিন্তা করেন এ বিশ্রামাগার নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে পানি পান ও টয়লেটের সুবিধা থাকবে। বিচার চাইতে এসে যেন কাউকে এলোমোলো ঘোরাফেরা করে দুর্ভোগে পড়তে না হয় এজন্য এ ব্যাবস্থা।

তিনি বলেন, এ জন্য আইন মন্ত্রণালয় ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ‘প্রতিজেলায় এ বিশ্রামাগার নির্মানের জন্য ৫০ লাখ টাকা পাবে’- উল্লেখ করে তিনি জেলা ও দায়ররা জজকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কাজ যাতে ঠিক মত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ঠিকাদার যেন চুরি না করে। কম লাভ করে তারা যেন এ কাজ করে দেয়।

প্রধান বিচারপতি ফরিদপুরের মামলার নিস্পত্তির হার বেশি হওয়ায় বিচারক ও আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ফরিদপুরে ২৫ হাজার ৫৫৭ মামলা গত এক বছরে হয়েছে। এক বছরে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩০ হাজারের উপরে মামলা। নিষ্পত্তির হার ১১৪%। এ ঘটনা আমাদের আশা জাগায়। এখর জেনে আমি খুশি।

এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে জেলা ও জায়রা জজ আকবর আলী শেখসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বিচারকগণ এবং ফরিদপুর আইনজীবী সমিতির সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে প্রধান বিচার পতি ঢাকা থেকে সড়ক পথে ফরিদপুর আসেন। তাকে সার্কিট হাউজে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। তিনি আদালত এলাকায় এসে প্রথমে ‘ন্যায়কুঞ্জু’ এর

ফলক উন্মোচন করেন। পরে তিনি ফরিদপুরে কর্তরত বিচারকদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এর পর তিনি আদালত চত্ত্বরে একটি গাছ রোপন করেন।

পরে বিচারক দুপুর রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে ফরিদপুর ত্যাগ করেন।